বাসস ইউনিসেফ ফিচার-২
থ্যালাসেমিয়া-চিকিৎসা
জাকাত তহবিলের মাধ্যমে দরিদ্র, অসহায় রোগীদের পাশে থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন
ঢাকা, ২২ মে, ২০২০ (বাসস) : শাহেদ-রাহেলা দম্পতির দুই সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। বড় ছেলে রাইয়ানের বয়স আট বছর আর ছোট মেয়ে রাইদা বয়স সাড়ে চার বছর। দু’জনই চাকরীজীবি। বাসায় বাচ্চাদের দেখাশোনা করেন তাদেরই এক নিকটাত্মীয়া আফসা খাতুন। বাচ্চারা তার কাছেই থাকেন সারাক্ষণ। এভাবেই চলছিল তাদের দিন।
হঠাৎ একদিন আফসা রাহেলাকে রাইয়ান সম্পর্কে কিছু বলেন। আফসা জানায় ইদানিং বিকেলে পাশের মাঠ থেকে খেলা শেষে ফেরার পর প্রায় সময়ই হাঁিপয়ে উঠে রাইয়ান। এছাড়া অল্পতেই হাঁপিয়ে যাচ্ছে সে। মাঝে মাঝে দৌঁড়ে আসলে মনে হয় চোখ দুটো বের হয়ে আসবে। কিন্তু দৌড়-ঝাঁপ না করলে ঠিক থাকে রাইয়ান।
আফসার কথা শুনে ছেলের দিকে ভালো করে তাকায় রাহেলা। তেমন অস্বাভাবিক কিছু নজরে আসেনা। তারপরও বিষয়টি নিয়ে শাহেদ এর সাথে আলোচনা করে রাহেলা। পরে দু’জন আলোচনা করে পরের সপ্তাহেই তারা রাইয়ানকে নিয়ে যান এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেল রাইয়ান থ্যালাসেমিয়াতে ভুগছে।
চুয়াল্লিশ বছর বয়সী পুর্ণেন্দু বড়–য়া আজ প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ভুগছে থ্যালাসেমিয়ায় । বাবা একসময় দিনমজুর ছিলেন। গত প্রায় ১৫ বছর ধরে বার্ধক্যজনিত রোগের কারনে কাজ করতে পারেন না। তার বড় ছেলে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে প্রায় ২০ বছর আগে। এখন রোগাক্রান্ত পুর্ণেন্দু-ই পরিবারের একমাত্র ভরসা। কক্্রবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত বিলছড়ি গ্রামে বাড়ির পাশেই ছোট এক চায়ের দোকান দিনেই চলে বাবা আর ছেলের সংসার। আর গত ত্রিশ বছর ধরেই প্রতি এক/দু মাস অন্তর নিয়মিত এক ব্যাগ অথবা তারও বেশি রক্ত নিতে হচ্ছে তাকে।
সূত্র মতে দেশে বছরে সাত হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। বাংলাদেশের শতকরা ১০ থেকে ১২ ভাগ মানুষ থ্যালাসেমিয়া ও হিমোগ্লোবিন বাহক রোগে আক্রান্ত এবং দেশে প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার শিশু এই রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত সায়েদ মোহাম্মদ আল মেহেরি গত বছর এক সেমিনারে বলেন, দেশে প্রথমবারের মত থ্যালাসেমিয়া ওষুধ উৎপাদন করবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জুলফারের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান জুলফার বাংলাদেশ লিমিটেড।
তিনি বলেন, আরব আমিরাতের উন্নয়নের পেছনে বাংলাদেশের জনগণেরও অনেক অবদান রয়েছে। জুলফার বাংলাদেশ লিমিটেড আরব আমিরাতসহ অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের মানুষের জন্যও ভালো কিছু করতে পারবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জুলফার বাংলাদেশ এর সিইও সেলিম সোলায়মান বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের পাশে থাকার অংশ হিসেবে আমরা বাংলাদেশে প্রথমবারের মত আয়রন চিলেটর হিসেবে ব্যবহৃত ওষুধ ডেফেরাসিরক্স চিলোভা উৎপাদন শুরু করেছি।
থ্যালাসেমিয়া রোগীদের নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন। সারা দেশ থেকে আসা ৩ হাজার ২০৫ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীকে নিয়মিত চিকিৎসা দেয় এই অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি। প্রত্যেক থ্যালাসেমিয়া রোগীর মাসিক চিকিৎসা ব্যয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। বেশির ভাগ রোগীর পরিবারের পক্ষে এই পরিমাণ অর্থের সংস্থান করা সম্ভব হয় না। তাই জাকাত তহবিল তৈরি করে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন দরিদ্র ও সহায়-সম্বলহীন রোগীর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। গত বছর এ ফাউন্ডেশন ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা জাকাত সংগ্রহ করে ৪২৮ জন রোগীকে সারা বছর চিকিৎসা দিয়েছে।
বাংলাদেশ থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ডা. মো. আবদুর রহিম বলেন, ‘করোনার কারণে যদিও এ বছর জনজীবন বিপর্যস্ত, তার মধ্যেও আমরা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। ব্যক্তি দাতাদের পাশাপাশি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কিছু শিল্প, ব্যবসা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানও। প্রতিষ্ঠানের মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের জাকাতের টাকা দান করেছেন আমাদের জাকাত তহবিলে। এ বছর এখন পর্যন্ত সংগ্রহ ১ কোটি টাকা। তবে আমাদের আরও সাহায্যের প্রয়োজন। গত বছর ৪২৮ জন রোগীর চিকিৎসা ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমাদের এ বছর নতুন রোগীদেরও সাহায্য করতে হবে।’
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/ফই/আহো/১০২৫/স্বব
Home 0সকল সংবাদ বাসস দেশ বাসস ইউনিসেফ ফিচার-২ : জাকাত তহবিলের মাধ্যমে দরিদ্র, অসহায় রোগীদের পাশে থ্যালাসেমিয়া...