বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : এইচআইভি-এইডসে কিশোর-কিশোরীদের মৃত্যু কমাতে প্রতিরোধ কর্মসূচি বাড়ানোর আহবান ইউনিসেফের

230

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
এইচআইভি-কিশোর-কিশোরী
এইচআইভি-এইডসে কিশোর-কিশোরীদের মৃত্যু কমাতে প্রতিরোধ কর্মসূচি বাড়ানোর আহবান ইউনিসেফের
ঢাকা, ২২ মে, ২০২০ (বাসস) : চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার শাহেদা খানম (ছদ্ম নাম) দুই সন্তানের জননী। বড়টির বয়স আট বছর, আর ছোটটির মাত্র সাড়ে সাত মাস। স্বামী থাকেন মধ্য প্রাচ্যের একটি দেশে। ২০১৮ সালের মাঝামাছি সময়ে দেশে এসেছিলেন। তিন মাস পরিবারের সাথে থেকে আবার ফিরে যান কর্মস্থলে। তিনি যাওয়ার সাড়ে আট মাস পর গত বছর শাহেদার কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান।
সন্তান গর্ভে থাকার সময় প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়তেন শাহেদা। মাঝে মাঝেই জ্বর আসত। স্থানীয় ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ সেবন করলে জ্বর চলে গেলেও কয়েকদিন পর আবার জ্বর আসত। এর মাঝে একদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ডা. রোকেয়া বেগমের সাথে যোগাযোগ করেন। শাহেদার শারিরীক অবস্থার বর্ণনা শুনে তিনি তাকে বেশ কিছু টেষ্ট করাতে বলেন। টেষ্টের রিপোর্ট আসার পর জানা গেল শাহেদার এইচআইভি পজেটিভ। টেষ্ট রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর ডা. রোকেয়া শাহেদার দুই শিশু সন্তানেরও পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। দুই সন্তানের পরীক্ষার পর জানা গেল বড় ছেলের এইচআইভি নেগেটিভ। কিন্ত ছোট মেয়ের পজেটিভ।
এইচআইভি জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এইডসের কারনে বিশ্বে ২০১৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার কিশোর-কিশোরীর মৃত্যু হতে পারে।
প্রতিবেদন মতে এই সময়ে এইচআইভি প্রতিরোধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রকল্পে বাড়তি বিনিয়োগ করা না হলে প্রতিদিন প্রায় ৭৬ জন কিশোর-কিশোরীর মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও বর্তমানে প্রতি ২ মিনিটে একজন কিশোর বা কিশোরী এইচআইভি আক্রান্ত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে এইচআইভি আক্রান্তের হাত এবং মৃত্যু থেকে শিশুদের বাঁচাতে হলে এখনই এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। নয়তো পুরো বিশ্ব সম্প্রদায়কে এর দায়িত্ব নিতে হবে।
গত ২৯ নভেম্বর নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ইউনিসেফের নতুন এক প্রতিবেদনে এইচআইভি সংক্রমন ও এইডস সম্পর্কিত মৃত্যু কমানোয় ধীর গতির তথ্যের প্রেক্ষাপটে কিশোর-কিশোরীদে চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি জোরদার করার আহবান জানিয়েছে ইউনিসেফ।
‘শিশু, এইচআইভি ও এইডস: ২০৩০ সালের বিশ্ব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান ধারা বজায় থাকলে এইচআইভিতে আক্রান্ত ০-১৯ বছর বয়সীদের সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে আনুমানিক ২ লাখ ৭০ হাজারে পৌঁছাবে। এইডস-সম্পর্কিত কারণে মারা যাওয়া শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা ভবিষ্যতে কমবে। বর্তমানের ১ লাখ ১৯ হাজার থেকে ২০৩০ সালে তা ৫৬ হাজারে নেমে আসবে। তবে এই হার কমার হার খুবই ধীরগতির,বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে জীবনের প্রথম দশকে নতুন করে এইচআইভিতে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা কমে অর্ধেকে নেমে আসবে। তবে নতুন করে এইচআইভিতে আক্রান্ত ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা কমবে মাত্র ২৯ শতাংশ। এইডস-সম্পর্কিত কারণে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ৫৭ শতাংশ কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেখানে ১৫-১৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর হার কমবে ৩৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েত্তা ফোর বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এইডসে আক্রান্ত হওয়া শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে বিশ্ব সঠিক পথে নেই। মায়েদের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে এইচআইভির সংক্রমণ ঠেকাতে প্রচলিত প্রকল্প কাজে দিচ্ছে, তবে তা বেশি দূর এগোয়নি। অন্যদিকে এই ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং বেশি বয়সী শিশুদের মধ্যে এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর প্রকল্পগুলো যে অবস্থানে থাকা উচিত ছিল সে অবস্থানে নেই।
প্রতিবেদনে চলমান কর্মসূচিতে দুটি প্রধান ঘাটতির কথা বলা হয়েছে। একটি হচ্ছে শিশুদের মধ্যে এইচআইভির সংক্রমণ ঠেকানোর কার্যক্রমে মন্থর অগ্রগতি। অন্যটি হচ্ছে এই মহামারির কাঠামোগত ও আচরণগত চালিকা শক্তি চিহ্নিত করার ব্যর্থতা। বলা হয়েছে, অনেক শিশু ও কিশোর-কিশোরীই জানে না তারা এইচআইভিতে আক্রান্ত কি না। এইচআইভি-পজিটিভ বা এইচআইভি আক্রান্ত হিসেবে যাদের পাওয়া গেছে ও চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে, তাদের মধ্যে খুব কমসংখ্যকই চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে গেছে।
ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী আনুমানিক সাতশ কিশোর-কিমোরী প্রতিদিন নতুন করে এইচআইভি আক্রান্ত হয়।
তবে আশার কথা বাংলাদেশে জনসাধারণের মধ্যে এইচআইভির প্রাদুর্ভাব কম (<.০১ শতাংশ)। ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৮৬৫টি নতুন সংক্রমণের ঘটনা তুলে ধরে, যার মধ্যে ৫ শতাংশের বেশি শিশু ও কিশোর-কিশোরী, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে।
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/ফই/আহো/১০২৫/-স্বব