বাসস ইউনিসেফ ফিচার-৩ : স্বাস্থ্যসম্মত সেনিটেশনের মূল লক্ষ্য রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ

131

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-৩
স্বাস্থ্যসম্মত-সেনিটেশন
স্বাস্থ্যসম্মত সেনিটেশনের মূল লক্ষ্য রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ
ঢাকা, ২১ মে, ২০২০ (বাসস) : প্রতিটি মানুষের সুস্থ্য থাকার জন্য পরিচ্ছন্ন ও নির্মল পরিবেশ অপরিহার্য। আর পরিচ্ছন্ন ও নির্মল পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা। স্যানিটেশন ব্যবস্থা বলতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মানুষ ও জীবজন্তুর মল-মূত্র ব্যবস্থাপনা ও নিস্কাশন, তরল ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সকল কাজে নিরাপদ পানির ব্যবহার, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, পারিপার্শ্বিক পরিবেশের পরিচর্যা ও রক্ষনাবেক্ষণ সব কিছুকেই বুঝিয়ে থাকে।
স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যের মধ্যে গভীর সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে স্যানিটেশনের মুল লক্ষ্য হওয়া উচিত রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করা। এজন্য রোগ সংক্রমণের পরিবেশগত পথগুলো বন্ধ করা প্রয়োজন। দেশের প্রত্যেক মানুষেরই স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্টিন ব্যবহার করা জরুরি। চিকিৎসকদের মতে শুধু বড়দের নয়, শিশুদের মলও ক্ষতিকর। শিশুদের যত্রতত্র কিংবা খোলা জায়গায় মল ত্যাগ করানো উচিত নয়। মল ত্যাগের পর সাবান বা ছাই দিয়ে হাত ভালোভাবে ধোয়া খুবই জরুরি।
স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন সুবিধা কেবল নিরাপদ ও পরিবেশ সম্মত জীবনের জন্য প্রয়োজন তা নয়, মানবাধিকার ও আনন্দময় জীবনের প্রয়োজনে স্যানিটেশন অপরিহার্য। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে সবার জন্য নিরাপদ পানি ও প্রতিটি পরিবারে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন-এর অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। উক্ত লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট সহযোগীদের সংগঠিত ও প্রয়োজনীয় সম্পদ সমাবেশের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানি সরবরাহকে জাতীয় অগ্রাধিকারমুলক কর্মসুচির আওতায় বিবেচনা করা হচ্ছে।
মানুষের ব্যক্তিগত হাইজিন, আবর্জনা ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য ও বৃষ্টির পানি নিস্কাশন, শহরাঞ্চলে বস্তিতে বসবাসকারী লক্ষ কোটি মানুষের স্যানিটেশন সুবিধা, পাহাড়ী এলাকা, বন্যাপ্রবন অঞ্চল, হাওড়-বাওড়, দারিদ্র, সামাজিক প্রথা, স্থানীয় সংস্কৃতি ও আচার, উপযোগী প্রযুক্তির অভাব ও প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা ও দুর্যোগের কারণে পিছিয়ে পড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ গ্রাম প্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত। তবুও, আমাদের দেশের মানুষের বসতবাড়ীতে স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই, একথা হয়তো আর বলা যাবে না। কিন্তু এদের সবার ল্যাট্রিন যে স্বাস্থ্যসম্মত একথাও ঠিক না। এমন একটা সময় ছিল যখন স্যানিটারি ল্যাট্রিন তৈরীর জন্য অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো। এখন ব্যাপারটি খুবই সহজ। স্যানিটারি পায়খানা তৈরীর জন্য ছয়/সাতটি রিং, ওয়াটার সিলসহ স্যানিটারি প্যান বসানো, কংক্রিটের স্লাব, চারটি বেড়া, একটি ছাউনি চালা, পানির পাত্র, সাবান কেসসহ কিনতে পারা যায়। মাটিতে গর্ত খুঁড়ে রিংয়ের ওপর স্লাব বসিয়ে চারপাশে বেড়া দিয়ে দ্রুত বানানো যায় একটি আধুনিক ও স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটারি ল্যাট্রিন। যদিও কয়েকটি রিং হলেই একটি স্যানিটারি ল্যাট্টিন তৈরী সম্ভব তারপরেও পাশাপাশি দু’টি কুয়ো তৈরীর উপাদান থাকলে দীর্ঘস্থায়ী স্যানিটারি ল্যাট্টিন তৈরী করা সম্ভব হয়। বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপুর্ণ।
পৃথিবীর অনেক মানুষ এখনো নিরাপদ পানি ও উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা পায় না। নব্বইয়ের দশকে খোলা জায়গায় মলত্যাগের হার ২৫ শতাংশ বা এর বেশি ছিল, এমন দেশগুলোর মধ্যে যারা সাফল্য অর্জন করেছে, তেমন প্রথম ১০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে আছে ভিয়েতনাম। দেশটিতে এখন খোলা জায়গায় মলত্যাগের হার ২ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশে মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ এখনও খোলা জায়গায় মল ত্যাগ করে থাকে। সত্তর দশক থেকে বাংলাদেশ পানিবাহিত রোগ বন্ধে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে। ফলে, দেশে স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সুপেয় পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন করেছে, ‘সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনে অগ্রগতি ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বের অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন একটি মৌলিক মানবিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। কারণ, উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা সার্বিক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নই নিশ্চিত করে না, একই সাথে তা দারিদ্র বিমোচনকেও সরাসরি প্রভাবিত করে। সবার জন্য স্যানিটেশন ব্যবস্থা এটা বাস্তবায়ন শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয়। এ আন্দোলনে সুশীল সমাজ ও জনগোষ্ঠি ভিত্তিক সংগঠন সমুহের সক্রিয় ও কার্যকর অংশগ্রহণ এ সফলতার দ্বারপ্রাপ্তে নিয়ে যেতে পারে। তাই, স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য যে কৌশলটি সবচেয়ে বেশি জরুরি তা হচ্ছে গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং আচরণের গুণগত পরিবর্তন আনা।
বাসস/ইউনিফ ফিচার/মুখা/আহো/১৭০০/আরজি/এসএইচ