সর্বাধিক ১০,২৬২ নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত ১,৭৭৩, মৃত্যু ২২ জন

553

ঢাকা, ২১ মে, ২০২০ (বাসস) : গত ২৪ ঘন্টায় সর্বাধিক ১০ হাজার ২৬২টি নমুনা পরীক্ষায় দেশে ১ হাজার ৭৭৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এটি একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এ সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দেশে বর্তমানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে। এখন এ ভাইরাসে শনাক্ত ২৮ হাজার ৫১১ জন রোগী রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২২ জন মৃত্যুবরণ করেছে। এটি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা। দেশে এ পর্যন্ত এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছে ৪০৮ জন।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৬০২ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন সুস্থ হয়েছেন ৩৯৫ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ১৫৬ জন বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৬১৭ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১০ হাজার ১৭৪টি। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ১১ হাজার ১৩৮টি। গতকালের চেয়ে আজ ৯৬৪টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৪৭টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১০ হাজার ২৬২টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১০ হাজার ২০৭টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৫৫টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ১১৪টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ এবং ৩ জন নারী। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৮ জন, সিলেট বিভাগের ৩ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ১ জন।
ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা শহরের ৮ জন, ঢাকার অন্যান্য স্থানের ১ জন, নারায়ণগঞ্জের ১ জন, চট্টগ্রাম শহরের ৪ জন, কক্সবাজারের ১ জন, চাঁদপুরের ৩ জন, ময়মনসিংহ শহরের ১ জন, সিলেট বিভাগের সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ১ জন এবং সিলেটের অন্যান্য স্থানের ২ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ১৬ জন, বাড়িতে মারা গেছেন ৫ জন এবং মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয় ১ জন।
মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ২ জন রয়েছেন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ১৫৪ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৩ হাজার ৮৯৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৭৩ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ১ হাজার ৯৬৬ জন। সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। মোট আইসোলেশন শয্যার মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৭ হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে রয়েছে ৬ হাজার ৩৪টি।
এসব হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৩৯৯টি। ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১০৬টি বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ হাজার ৩২ জনকে। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৪ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৫৯১ জন। এখন পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন ২ লাখ এক হাজার ১৫২ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৪ হাজার ৩৮২ জন।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৬টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৮৪০ জনকে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮৪২টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৬৭ লাখ ৯৮ হাজার ৫২৬টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ১১২ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ৩১ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২০৬ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় কেউ আসেননি। শুধু স্থলবন্দর দিয়ে আগত ৪৭ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৬ লাখ ৯১ হাজার ৭৭৯ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৫০ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ২১১ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯১ জন এবং এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৯৭১ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬ হাজার ৮০৪ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭ লাখ ৮৯ হাজার ২০৫ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ৬২১ জন এবং এ পর্যন্ত ৩ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৯ জন।
আপনার সুস্থতা আপনার হাতে উল্লেখ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, রমজানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।