বাসস ইউনিসেফ ফিচার-২ : সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামের দরিদ্র নারীরা

203

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-২
নারী-সামাজিক নিরাপত্তা
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামের দরিদ্র নারীরা
ঢাকা, ২১ মে, ২০২০ (বাসস): বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। সরকারের মূল লক্ষ্য দেশের সর্বত্র সুষম উন্নয়ন। এ লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তথা কর্মসুচির ফল পাচ্ছে গ্রামীন নারীরা। সরকারের সামাজিক নিরপত্তা কর্মসূচিতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামের দরিদ্র নারীরা। যেমন তাদেরই একজন রংপুর সদর উপজেলার বড়াইপাড়া গ্রামের ময়না রানী তার স্বামী আর সন্তানদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। একসময় দু:খ-কষ্ট যাদের নিত্যসঙ্গী ছিল এখন তার (ময়না) একার চেষ্টায় পরিবারে এসেছে স্বচ্ছলতা। শুরু করেছেন ছোট আকারে ব্যবসা। এছাড়াও রয়েছে গবাদি পশুর ছোট খামার, হাঁস-মুরগীর খামার, বাড়ির আঙ্গিনায় শাক-স্বব্জির চাষ এবং অন্যান্য চাষাবাদ।
গঙ্গাচড়া উপজেলার পূর্ব কচুয়া-১ আশ্রয়ন প্রকল্পের আয়েশা খাতুন বেশ কিছুদিন আগেই এই পুনর্বাসন কেন্দ্রে পুনর্বাসিত হয়েছেন। আশ্রয়ের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষন পান। এছাড়াও একটি সংস্থা থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নেন। সেই টাকা দিয়ে তিনি দুটি গরু আর একটি মুদির দোকান দেন। এখন এখান থেকে আয়ের টাকাই চলছে তার সংসার।
রংপুরের প্রায় এক লাখ গ্রামীন মহিলা ইতোমেধ্যে সরকারী এবং বেসরকারী সহযোগীতায় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
সূত্র এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব গ্রামীন নারীদের অর্থনৈতিকভাবে সফল হওয়ার পেছনে রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন কর্মসূচী বা সোশ্যাল সেফটিনেট প্রোগ্রাম। বৃহত্তর রংপুর ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘নর্থ বেঙ্গল ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’ এর ড. সৈয়দ সামসুজামান বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ফলে গ্রামীন এসব নারীরা এসডিজি অর্জনে ভূমিকা রাখছেন। এসব গ্রামীণ নারীরা বিভিন্ন ধরনের আয়ের মাধ্যমে নিজেকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলছেন। আর এক্ষেত্রে সরকারী এবং বেসরকারী অনেক উন্নয়ন সংস্থা তাদেরকে স্বাবলম্বী হয়ে গড়ে উঠতে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
নীলফামারি জেলার সদর উপজেলার সরকারপাড়া গ্রামের তহুজা বেগম এবং সুফিয়া বেগম বলেন, নয় বছর আগে তারা প্রত্যেকে সুদ মুক্ত আট হাজার টাকা করে ঋণ পেয়েছিলেন এসইটিউ প্রকল্প হতে। তারা এ অর্থ দিয়ে তাদের ব্যবসা শুরু করেন।
সুফিয়া বলেন, গ্রামের অন্য ১১৬ জন দরিদ্র নারীর মত এ প্রকল্প হতে সুদ মুক্ত ঋণ পেয়ে আমরা তা ব্যবসায় বিনিয়োগ করি। এখন আমরা প্রায় সবাই ভালো আয় করছি। আমাদের ছেলে-মেয়েরাও নিয়মত স্কুলে পড়ছে।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার ছাটাস ছ্ওারানাড়ি গ্রামের মনোয়ারা খাতুন বলেন, আমি আমার পথ শুরু করেছিলাম শুধুমাত্র একটি গরু দিয়ে। পরে সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মিল্ক ভিটা এবং ব্র্যাক ব্যাংক হতে লোন নিয়ে ব্যবসার পরিধি বাড়াই।
বর্তমানে তার ১৫টি গরু রয়েছে। এবং এসব গরু থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৪০ কেজি দুধ যেখান থেকে তার আয় হয় সাত হাজার টাকা।
আরডিআরএস বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর (কৃষি এবং পরিবেশ) মো. রশিদ বলেন, সরকারী-বেসরকারী এবং উন্নয়ন সংস্থার এসব যৌথ উদ্যোগ দেশের গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রেখে চলেছে। ছোট ছোট ব্যবসা, কুটির শিল্প, সেলাই মেশিন, ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচী, বাড়িতে কৃষি কাজ অথবা পোল্ট্রি ফার্ম এর মাধ্যমে তারা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, আরডিআরএস এর বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৩০,০০০ গ্রামীণ নারী বর্তমানে স্বচ্ছল জীবন-যাপন করছেন যারা অতীতে একেবারে হত-দরিদ্র ছিলেন।
রংপুর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আলম বলেন, প্রায় চার হাজার যুবতী নারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তাদের সুদ-মুক্ত ঋণও প্রদান করা হয়েছে যাতে তারা তাদের ব্যবসা চালু করতে পারেন।
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/ফই/আহো/১০৩০/-স্বব