চুকনগর গণহত্যা দিবস আজ

576

খুলনা, মে ২০, ২০২০ (বাসস) : চুকনগর গণহত্যা দিবস আজ । খুলনা জেলার চুকনগর গণহত্যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে চিরকাল।
খুলনা শহর থেকে ৩২ কি, মি পশ্চিমে খুলনা-সাতক্ষিরা জেলার প্রবেশমুখে ডুমুরিয়া উপজেলায় চুকনগর অবস্থিত । চুকনগর গণহত্য একটি সামরিক গণহত্য। ১৯৭১ সালের ২০ মে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছিল ।
গণহত্যায় নিহতদের অধিকাংশই খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটার অধিবাসী। বাগেরহাট ও পাশ্ববর্তী কয়েকটি জেলার কিছু অধিবাসীও এখানে গণহত্যার শিকার হন।
অন্তত এক বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে এই গণহত্যাটি সংঘটিত হয়। পুটিমারি বিল, ভদ্রা নদী, গ্রামের কিছু পুকুর, চুকনগর বাজার, বাজারের কালী মন্দির প্রভৃতি স্থানে ৩-৪ ঘণ্টা ধরে পাকিস্তানি সেনারা গুলি চালায়।
চুকনগর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও চুকনগর স্মৃতি রক্ষা পরিষদের সভাপতি এবিএম শফিকুল ইসলাম জানান, গণহত্যায় নিহতের অনুমিত সংখ্যা প্রায় দশ হাজার হবে। সে সময় নিহতদের লাশ অপসারনকারি চুকনগরের কিছু অধিবাসীর বর্ণনা মতে এ তথ্য পাওয়া যায় । তারা ৪ হাজারেরও বেশি লাশ গণনা করে ছিলেন বলে তিনি দাবি করেন। বাকি লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এই গণহত্যায় নিহত দুই শতাধিক ব্যক্তির নাম-পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
এই গনহত্যটি ইতিহাসে বিরল। চুকনগর শহরটি ভারতের নিকটবর্তী হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন এখানে জড়ো হয়। বিশেষ করে ভদ্রা, কাজিপাশা, খরিয়া, ঘ্যাংরাইল প্রভৃতি নদী ও শাখা নদী পথে এবং কাঁচা রাস্তা দাকোপ, বটিয়াঘাটা,রামপাল, তেরখোদা ফকিরহাট হয়ে লোকজন খুলনা হয়ে চুকনগরে আসে। সে সময় ভারতে যাওয়ার জন্য চুকনগর ছিল ট্রানজিট পয়েন্ট।
এখান থেকে ভারতে যাওয়ার মুল রুট ছিল মঙ্গলকোট, সরসকাটি কলারোয়া হয়ে হাটা পথে।
ফলে নৌকা এবং বিভিন্ন জিনিস পত্র পানির দামে বেচে দিয়ে তাদের হালকা হতে হত। কিন্তু মে এর তৃতীয় সপ্তাহে দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, রামপাল প্রভৃতি এলাকা একযোগে আক্রান্ত হওয়ায় গ্রামকে গ্রাম উজাড় করে লোকজন দেশ ছেড়ে ভারতে যেতে এখানে সমবেত হতে থাকে। ।
মুলতঃ সেদিন ২০শে মে আটলিয়া ইউনিয়নের চুকনগর বাজার চাঁদনী, ফুটবল মাঠ, রায়পাড়া, পুঠিমারি, মালতিয়া, তাতিপাড়া, দাসপাড়া, প্রভৃতি গ্রাম পাতখোলার বিল, এবং ভদ্রা ও ঘ্যাংরাইল নদীর পাড়ে হাজার হাজার মানুষ ভারতের উদ্দ্যেশে পাড়ি দেবার জন্য গাইড ও যানবাহনের অপেক্ষায় ছিল। পুরো এলাকাটা ছিল প্রায় এক বর্গকিলমিটার ব্যাসার্ধের। ২০ মে বেলা ১১টার সময় মিলেটারির দুটি দল একটি ট্রাক ও একটি জিপে করে এসে চুকনগর বাজার উত্তর প্রান্তে অবস্থান নেয়।
প্রথমে তারা পাতখোলার বিলে এসে গুলি চালানো শুরু করে পরে চুকনগর বাজারের দিকে অগ্রসর হয়।বিকাল তিনটা পর্যন্ত তারা গুলি চালাতে থাকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। চুকনগরে মৃত ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা গুনে নির্নয় করা না গেলেও প্রতক্ষ্যদর্শীদের মতে আনুমানীক দশ হাজার হবে।
মৃত দেহ গুলি পাকবাহিনী পরে নদীতে ফেলে দেয় এবং অবশিষ্ট মৃতদেহগুলি স্থানীয় লোকজন পরে নদীতে ফেলে দেয়। হত্যকান্ডে নিহতের স্মৃতির উদ্দ্যেশে চুকনগরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ ¯্’াপন করা হয়েছে।