আম্পান মোকাবেলায় নোয়াখালীর ভাসানচরে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে

394

নোয়াখালী, ১৯ মে ২০২০ (বাসস) : সুপার সাইক্লোন আম্পান মোকাবেলায় নোয়াখালীর ভাসানচরে সকল ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। সেখানে রয়েছে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের জলসীমায় কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ভাসতে থাকা দুই ধাপে উদ্ধার হওয়া ৩০৬ জন রোহিঙ্গা।
এছাড়াও সেখানে রয়েছে নৌবাহিনী, দিনমজুর, দোকানদার ও পুলিশ সদস্য সহ প্রায় ৩০০ লোকজন। বর্তমানে সব মিলিয়ে ভাসানচরে প্রায় ৬০০ নারী ও পুরুষ রয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, বঙ্গোপসাগরে বোটে ভাসতে দেখে রোহিঙ্গাদের ২ টি দলকে নৌ-বাহিনী উদ্ধার করে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সেখানে ১ম ধাপে ৩ মে রবিবার ১৯ জন মহিলা, ৫ জন শিশু, ৪ জন পুরুষ ও ১ জন দালালসহ ২৯ রোহিঙ্গা এবং ২য় ধাপে ৮ মে শুক্রবার দুপুরে ৯২ জন পুরুষ, ১৫৭ জন নারী ও ২৮ জন শিশুসহ ২৭৭ সদস্যের আরও একটি দলকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ভাসানচরে সব মিলিয়ে ৯৭ জন পুরুষ, ১৭৬ জন নারী ও ৩৩ জন শিশু রোহিঙ্গা রয়েছে ৩০৬ জন। তাদের নিরাপত্তায় ৫১ সদস্যের পুলিশ বাহিনী রয়েছে।
তিনি আরও জানান, ভাসানচরে পূর্ণাঙ্গ থানা স্থাপনের প্রস্তাবনাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে।
ভাসানচর প্রস্তাবিত থানার পরিদর্শক মো: আবু হুসাইন জানান, ৪ তলা বিশিষ্ট প্রস্তাবিত ভাসানচর থানায় রয়েছে ২ জন পরিদর্শক, ২ জন উপ-পরিদর্শক, ৬ জন সহকারি পরিদর্শক সহ ৫১ সদস্যের পুলিশ বাহিনী। রোহিঙ্গাদের আশ্রায়ন প্রকল্পের ৪১ নম্বর ক্লাষ্টারে আলাদা আলাদা রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে নৌবাহিনী, দিনমজুর, দোকানদার, পুলিশ সদস্য ও রোহিঙ্গাসহ প্রায় ৬০০ জন নারী ও পুরুষ রয়েছেন ভাসানচরে। এখন পর্যন্ত সুপার সাইক্লোন আম্পানের কোন আলামত লক্ষ্য করা যায় নি। তবে, সাগর কিছুটা উত্তাল রয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ঘুর্ণিঝড় ও জলোছ¦াস মোকাবেলায় ৪ তলা বিশিষ্ট ১২৩টি সাইক্লোন শেল্টার তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২০টি রোহিঙ্গাদের জন্য, ১টি কর্মকর্তাদের জন্য এবং ২টি ব্যারাকের জন্য। এসব সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে প্রায় ১ লক্ষ লোক আশ্রয় নিতে পারবে।
তিনি আরও জানান, সর্বমোট প্যাকেজ রয়েছে ৩০ টি। প্রতিটি প্যাকেজে রয়েছে ৪৮টি ঘর। সে হিসাবে তৈরী হয়েছে ১৪৪০ টি টিনশেড পাকাঘর। প্রতিটি পাকা ঘরে ২০ টি কক্ষ রয়েছে। কক্ষের দুই পাশে আছে ২ টি বাথরুম আর ২ টি কিচেন। প্রতি ৪ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারকে দেয়া হবে ১ টি কক্ষ। প্রতি কক্ষে থাকছে দোতলা বিশিষ্ট ২ টি বেড। মাটি থেকে ৪ ফিট উঁচুতে হচ্ছে বাসস্থান।
এদিকে, সুপার সাইক্লোন আম্পান মোকাবেলায় দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ৮০ হাজার লোকের ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ১৮৫ টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনা বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য স্বেচ্ছাসেকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং প্রত্যেকটি সাইক্লোন শেল্টার স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও সরকারি ভবন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস জানান, মেঘনা নদীর বুকে জেগে উঠা ভাসানচরকে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে নিরাপদ করার জন্য নির্মান করা হয়েছে ১৪ কি:মি: করে ২ টি বেড়ি বাঁধ। প্রথমে রয়েছে একটি ছোট বেড়ি বাঁধ এবং তারপরে রয়েছে একটি বড় বেড়ি বাঁধ। তবে, এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক জোয়ারেও ছোট বেড়ি বাঁধ এর উপর দিয়ে পানি ঢুকতে পারে নি। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরণের নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের খাবার-দাবারের ব্যবস্থা সরকারিভাবে করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, সুপার সাইক্লোন আম্পান মোকাবেলায় উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটের ৩২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৬ হাজার ৭ শত স্বেচ্ছাসেবক, তিন শতাধিক রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মী ও শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব উপজেলায় সতর্কীকরন মাইকিং করা হচ্ছে।
এছাড়া, জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকার স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারগুলোর চাবি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধগুলো দেখাশুনা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার করোনা আক্রান্ত রোগি এবং লকডাউনকৃত বাড়ির লোকজনকে নিকটবর্তী আইসোলেশন কেন্দ্রে প্রেরণ এবং আশ্রায়ন কেন্দ্রে তাদের জন্য বিশেষ কক্ষে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবহাওয়ার অবস্থা অবনতি হলে, এলাকার লোকজন ও গবাদিপশুকে ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে।