বাসস দেশ-৩ : তামাক কর কাঠামো পরিবর্তনে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হতে পারে

134

বাসস দেশ-৩
তামাক- কর
তামাক কর কাঠামো পরিবর্তনে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হতে পারে
ঢাকা, ১৮ মে, ২০২০ (বাসস) : তামাক কর কাঠামো পরিবর্তন করা গেলে সম্পূরক শুল্ক এবং ভ্যাট বাবদ ৪ হাজার ১০০ কোটি থেকে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হতে পারে ।
তামাকবিরোধী সংগঠন ‘প্রজ্ঞা’র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে একথা জানিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে তামাকের ওপর বিদ্যমান কর-কাঠামো অত্যন্ত জটিল, পুরোনো ও দুর্বল। কোনো তামাককর নীতিমালা না থাকায় এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণের কোন সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই।
এতে বলা হয়, স্বল্প দামে তামাকপণ্য ক্রয়ের সুযোগ এবং ত্রুটিপূর্ণ করকাঠামো বিশেষ করে সিগারেটে ৪টি মূল্যস্তর থাকায় তামাকের ব্যবহার হ্রাসে কর ও মূল্যপদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের তথ্যমতে, বিশ্বের ১৫৭টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে কমদামে সিগারেট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১০২তম এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মিয়ানমারের পরেই বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দামে সস্তা ব্রান্ডের সিগারেট পাওয়া যায়। বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য আরও সস্তা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সিগারেটের উপর করারোপের ক্ষেত্রে বর্তমানে বহুস্তর বিশিষ্ট এডভ্যালোরেম (মূল্যের শতকরা হার) প্রথা কার্যকর রয়েছে, যা বিশ্বের মাত্র ৫/৬টি দেশে চালু আছে। উপরন্তু, তামাকপণ্যের ধরন (সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গুল) ভেদে ভিত্তিমূল্য ও কর-হার এ ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। একাধিক মূল্যস্তর এবং বিভিন্ন দামে তামাকপণ্য ক্রয়ের সুযোগ থাকায় তামাকের ব্যবহার হ্রাসে কর ও মূল্যপদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করে না।
গবেষণায় দেখা গেছে, তামাকের উপর কার্যকরভাবে করারোপ করলে তামাকের ব্যবহার হ্রাস পায় এবং রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পায়। ফিলিপাইন, তুরস্ক, মেক্সিকো ও সাউথ আফ্রিকা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সাউথ আফ্রিকায় ১৯৯৩ থেকে ২০০৯ সময়কালে সিগারেটের প্রকৃতমূল্য ৩২ শতাংশ থেকে ৫২ শতাংশে বৃদ্ধি করা হয়েছে ফলে সেখানে একদিকে প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠির মাঝে মাথাপিছু দিনপ্রতি সিগারেট সেবনের পরিমাণ ৪টি থেকে কমে ২টিতে নেমে এসেছে অন্যদিকে এসময়ে সরকারের রাজস্ব আয় ৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রজ্ঞার প্রতিবেদনে আগামী বাজেটে সিগারেটের মূল্যস্তর চারটি থেকে কমিয়ে দুটি করার প্রস্তাব করা হয়। করারোপের ক্ষেত্রে নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে একটি মূল্যস্তর (নিম্নস্তর) এবং উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরকে একত্রিত করে আরেকটি মূল্যস্তরে করার সুপারিশ করা হয়।
এক্ষেত্রে নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং প্রিমিয়াম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। বিড়ির ক্ষেত্রে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৪০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ ভাগ সম্পূরক শুল্ক ও ৬.৮৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৩২ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ ভাগ সম্পূরক শুল্ক এবং ৫.৪৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার সুপারিশ করা হয়।
ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যর (জর্দা ও গুল) ক্ষেত্রে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪০ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৩ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ভাগ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার উপর ৫.৭১ টাকা ও প্রতি ১০ গ্রাম গুলের উপর ৩.৪৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়।।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ সালে মাথাপিছু জাতীয় আয় (নমিন্যাল) পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বেড়েছে ১১.৬ শতাংশ। অথচ সর্বশেষ বাজেটে সিগারেটের বাজারের প্রায় ৭২ শতাংশ দখলে থাকা নিম্নস্তরের সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে মাত্র ৫.৭ শতাংশ। ফলে এই স্তরের সিগারেটের প্রধান ভোক্তা নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতার কোনো পরিবর্তন হবে না এবং একই সাথে ধূমপান শুরু করতে পারে এমন তরুণ প্রজন্মকে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করা যাবে না বলে ‘প্রজ্ঞা’র গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়।
বাসস/কেসি/১৩১৭/আরজি