বাসস দেশ-৩ : নাটোরে ফুটেছে দুষ্প্রাপ্য ও দৃষ্টিনন্দন সাইকাস ফুল

149

বাসস দেশ-৩
সাইকাস-ফুল
নাটোরে ফুটেছে দুষ্প্রাপ্য ও দৃষ্টিনন্দন সাইকাস ফুল
॥ ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন ॥
নাটোর, ১৭ মে, ২০২০ (বাসস) : নাটোরে এবার ফুটেছে দৃষ্টিনন্দন দুষ্প্রাপ্য সাইকাস ফুল। এক যুগের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে শহরের একটি বাড়ির আঙিনার টবে শোভা বর্ধন করছে বিশাল আয়তনের এই ফুল। পুষ্প প্রেমিরা ব্যতিক্রমী এই ফুল দেখতে আসছেন।
পাম জাতীয় সাইকাস গাছের আদি নিবাস জাপানে। খেজুর আর পাম গাছের একটু-একটু করে আদল গ্রহণ করে যেন সাইকাস তৈরী হয়েছে। আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয় সাইকাসকে। তাই অনায়াসে সৌখিন বাগান বিলাসীদের বাগানে, বিভিন্ন স্থাপনার গেটের পাশে, ড্রয়িংরুমে কিংবা কনফারেন্সরুমে, লনে জায়গা করে নিয়েছে সাইকাস।
সাইকাস দুষ্প্রাপ্য গাছ না হলেও এর ফুল দুষ্প্রাপ্য। সব গাছে এই ফুল ফোটে না। শুধুমাত্র সাইকাসের মাদার প্লান্টই ফুল দেয়। তাও গাছের বয়স অন্তত এক যুগ অতিক্রম করলে। কিন্তু কোন গাছটা মাদার প্লান্ট হবে তা বোঝার উপায় নেই। হাজারো গাছের মধ্যে হঠাৎ করে একটা মাদার প্লান্ট পাওয়া যায়। তাই সাইকাসে ফুল ফোটাকে সৌভাগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
প্রতিটি সাইকাস গাছের কেন্দ্রে শীতের শেষে বছরে একবার করে নতুন পাতা আসে। ধুসর মোচার আকৃতি নিয়ে বের হওয়া সবুজ কচি পাতা ডানা মেলে ছড়িয়ে পড়ে গাছের চারপাশে। পাতাই সাইকাসের সৌন্দর্য। ঘর সাজাতে, ফুলের ডালি ও তোড়া সাজাতে, তোড়ন তৈরীতে সাইকাস পাতার ব্যবহার আছে। পাহাড়ী এলাকাতে এই পাতায় তৈরী হয় মাদুর।
ফুলের শহর নাটোর। নাটোরের উত্তরা গণভবনে শত-শত বছর ধরে শোভাবর্ধন করে যাচ্ছে দুষ্প্রাপ্য ফুলের সমাহার। প্রাচীন এই শহরে এক সময় বাড়িতে-বাড়িতে ছিল ফুলের বাগান। শহরের আলাইপুর এলাকায় ঐতিহ্যবাহী কাজীবাড়ির বাগানটিও ছিল বড় পরিসরে। পরিবারে সদস্য সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে পুরনো বাগানের অনেকগুলোই বিলুপ্ত হয়ে সেখানে নির্মিত হয়েছে অবকাঠামো। সাবেক এমএনএ মরহুম কাজী আবুল মস্উদের বড় মেয়ে সাঈদা বেগম রীণার বাড়ির আঙিনায় শোভা পাচ্ছে সাইকাস গাছের ফুলটি।
রীণার পুত্রবধূ জীববিদ্যা’র প্রভাষক মাসুমা সুলতানা রুপা জানালেন, ১৩ বছর আগে ব্র্যাক নার্সারি থেকে সংগ্রহ করা শিশু বয়সের গাছটি এখন পরিণত এবং সৌভাগ্যক্রমে এটি একটি মাদার প্লান্ট। গত তিনসপ্তাহ ধরে ফুটতে-ফুটতে পূর্ণতা পেয়েছে সাইকাসের এই ফুল-যা মূলত এককোষী একটি স্পোর বা রেণু। ঘি রঙের ভেলভেটের মত পাঁপড়িগুলো ধীরে-ধীরে গাঢ় হচ্ছে। প্রজনন ছাড়াই হ্যাপ্লয়েড শ্রেণীর একক ক্রমোজোম বিশিষ্ট এই রেণু থেকেই এক সময় তৈরী হবে অসংখ্য চারা।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক মরহুম খন্দকার আবু আলীর পালপাড়ার বাড়িটি যেন প্রকৃতই বাগান বাড়ি। এই বাগানে কয়েক বছর আগে মূল্যবান মাদার সাইকাসের দেখা মিলেছিল। মাদার প্লান্টটি চারা দিয়েছিল প্রায় এক ডজন বলে জানালেন এই আঙিনার তত্বাবধানকারী খন্দকার আবু আলীর ভাতিজা পণ মামুন।
অনেকের মধ্যে কলেজ ছাত্র উজ্জল হোসেন এই ফুলের ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করেছিল। অসংখ্য লাইক আর মন্তব্য ভরপুর হয়ে আছে ৮ মে শেয়ার করা পোস্টটি। আসমাউল হুসনা’র লাইকি’র পোস্টেও ভিজিটরদের বিস্ময়।
৮০’র দশকে নাটোরে উদ্যানতত্ববিদ হিসেবে কর্মরত ছিলেন দেশের বরেণ্য ফুল ও ফল গবেষক এস এম কামরুজ্জামান। ওই সময় তিনি জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় দু’টি পুস্প প্রদর্শনীর সফল আয়োজন করেছিলেন। বর্তমানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘ওয়াই আর এফ পি’ প্রকল্পের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এস এম কামরুজ্জামান বলেন, ওই সময় নাটোরের রাণী ভবানী রাজপ্রাসাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী দু’টো সাইকাস গাছ চেস্টা করেও বাঁচাতে পারিনি আমরা। তবে উত্তরা গনভবনে বেশ কিছু সাইকাস রোপন করা হয়। হর্টিকালচার সেন্টারগুলো এই অলংকার গাছ-সাইকাসের প্রসারে ভূমিকা রাখতে পারে। সাইকাসের মাদার প্লান্ট তো অবশ্যই সৌভাগ্যের বলে উল্লেখ করেন এই ফল ও ফুল গবেষক।
বাসস/সংবাদদাতা/১১৩৫/কেজিএ/এবিএইচ