২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত ১,০৪১ : মারা গেছেন ১৪ জন

462

ঢাকা, ১৪ মে, ২০২০ (বাসস) : দেশে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪১ জন এবং মারা গেছেন ১৪ জন। দেশে বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৬৩ এবং মোট মৃতের সংখ্যা ২৮৩ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৩৬১ জন। তবে ২৪ ঘন্টায় কোন সুস্থতা নেই।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
গতকালের চেয়ে আজ ১২১ জন কম আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ১৬২ জন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৭ হাজার ৮৩৭টি। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ৭ হাজার ৮৬২টি। নমুনা সংগ্রহ আগের দিনের চেয়ে ২৫টি কম। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৪১টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৭ হাজার ৩৯২টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ৭ হাজার ৯শ’টি। গতকালের চেয়ে নমুনা পরীক্ষা ৫০৮টি কম। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৯৩০টি।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ঢাকার মধ্যে ২০টি ও ঢাকার বাইরে ২১টি পরীক্ষাগারে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করা হয়। গত ২৪ ঘন্টায় ঢাকার মধ্যে নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৪ হাজার ৯৫৬টি এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার ৮৮১টি। আর ঢাকার পরীক্ষাগারগুলোতে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪ হাজার ৫৮৮টি এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার ৮০৪টি। এরমধ্যে ঢাকার পরীক্ষাগারগুলোতে ৭৫৪ জন এবং ঢাকার বাইরে পরীক্ষাগারে ২৮৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।’
নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্তের পর বর্তমানে দশম সপ্তাহ চলছে। দশম সপ্তাহের মেয়াদকাল ১০ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত। অর্থাৎ এ সপ্তাহ শেষ হতে এখনও ২ দিন বাকি। তবে অষ্টম সপ্তাহের তুলনায় দশম সপ্তাহের এখনও দু’দিন বাকি থাকতেই আক্রান্ত বেড়েছে প্রায় তিনগুণ ও মৃত্যু বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
সুস্থতার পরিমাণও বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে অষ্টম সপ্তাহে যেভাবে সুস্থতা নির্ধারণ করা হতো, এখন সেখানে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অষ্টম সপ্তাহ ছিল ২৬ এপ্রিল থেকে ২ মে। সেখানে শনাক্ত ছিল ৩ হাজার ৭৯২ জন। সেই সপ্তাহে সুস্থ হয়েছিল ৬৪ জন এবং মারা যায় ৩৫ জন। নবম সপ্তাহে (৩ থেকে ৯ মে) সে সময় শনাক্ত হয়েছিল ৪ হাজার ৯৮০ জন। সুস্থ হয়েছিলেন ২ হাজার ৩৩৭ জন। ওই সপ্তাহে মারা যায় ৩৯ জন। দশম সপ্তাহ শেষ হতে এখনও ২ দিন বাকি আছে। ১৪ মে পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৯৩ জন। এ সপ্তাহে সুস্থ হয়েছে ১ হাজার ১৮৯ জন।’
দেশে করোনা শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ১৯ দশমিক ১০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫০ শতাংশ বলে অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারী ১৪ জনের মধ্যে পুরুষ ১১ জন, নারী ৩ জন। এরমধ্যে ঢাকা শহরের ৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৫ জন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন ও ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ২০১ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২ হাজার ৫৭০ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৬৬ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ১ হাজার ৩৯৮ জন। সারাদেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ৮ হাজার ৬৩৪টি। ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছে ৬ হাজার ৩৪টি এবং ঢাকা মহানগরীতে ২ হাজার ৯শ’টি। আরও শয্যা তৈরির কাজ চলছে। আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৩২৯টি, ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১০২টি। আইসিইউ এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট সংখ্যা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৩ হাজার ৩১ জনকে। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৩ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন ২ হাজার ২৯৮ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৯ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪৬ হাজার ১৪ জন।
সারাদেশের ৬৪ জেলা এবং সেখানকার উপজেলায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৬১৭টি প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ৩১ হাজার ১৬৫ জনকে কোয়ারেন্টিন সেবা দেয়া যাবে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ হয়েছে ৪৪ হাজার ৭৯৩টি। বিতরণ হয়েছে ৪৪ হাজার ৭৫০টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২২ লাখ ১২ হাজার ৩৩৯টি। বিতরণ হয়েছে ১৮ লাখ ৪০ হাজার ৯৪৬টি। বর্তমানে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৯৩টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৫১ হাজার ৫০২টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৫২-লাখ ১৭ হাজার ৫৮টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৭৪১ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ৮ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ৭৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৪০৪ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৫০৭ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৩ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৩১ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৯৩২ জন। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ১৪৯ জন এবং ৩ হাজার ৭৪৬ জন মারা গেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৩ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৫৭৭ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪১ লাখ ৭০ হাজার ৪২৪ জন। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৪ হাজার ২৪৫ জন এবং এ পর্যন্ত ২ লাখ ৮৭ হাজার ৩৯৯ জন।
আপনার সুস্থতা আপনার হাতে উল্লেখ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, রমজানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।