বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকার সব রকমের ব্যবস্থা নিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

205

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-বৃক্ষরোপণ
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকার সব রকমের ব্যবস্থা নিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দেশের ৪০টি বনজসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা এবং জলাভূমি, হাওর, নদী, উপকূলীয় দ্বীপসহ ১৩টি এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করেছে।
১৯টি উপকূলীয় এলাকায় জেগে উঠা চরসমূহে সরকার উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী তৈরীর জন্য ব্যাপক বনায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম ও মাছের প্রজনন ক্ষেত্র তৈরী করেছি। বনায়নের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগর থেকে ১ হাজার ৬০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ভূমি দেশের মূল ভূ-খন্ডের সাথে যুক্ত হয়েছে।
উপকূলীয় চরাঞ্চলে এ যাবৎ ২ লাখ ১০ হাজার হেক্টর বাগান করা হয়েছে, যা উপকূলবাসীকে প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবল থেকে রক্ষা করছে, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির সাফল্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে নারীর ক্ষমতায়ন, নেতৃত্ব সৃষ্টি, কর্মসংস্থান এবং দারিদ্রতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, সামাজিক বনায়নের আওতায় ১৯৮১-১৯৮২ হতে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় ৮৪ হাজার ৩৭৮ হেক্টর এবং ৬৮ হাজার ৮৩০ কিলোমিটার ভূমিতে বাগান করা হয়েছে। এই বাগানে ৬ লক্ষ ৫২ হাজার ৯৫৫ জন উপকারভোগী সম্পৃক্ত রয়েছে। যাদের মধ্যে মহিলা উপকারভোগীর সংখ্যা ১ লক্ষ ২১ হাজার ৫০৭ জন। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে সরকার এযাবৎ প্রায় ৩৩১ কোটি ৮ লক্ষ ৭৯ হাজার ২৫৬ টাকা রাজস্ব আয় করেছে।
সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সাল নাগাদ দেশের বনভূমির পরিমান ২০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা থাকলেও তাঁর সরকারের সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ফলে গিত সাড়ে ৯ বছরে দেশের বনভূমির পরিমান ২২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজীপুর জেলার শালবনে প্রায় ৪ হাজার একর ভূমিতে ২০১৩ সনে স্থাপিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক। চিত্ত বিনোদনের পাশাপাশি বন্যপ্রাণী বিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণার দ্বার উন্মোচন করেছে এই পার্ক। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শেখ রাসেল এভিয়ারী ইকো-পার্ক। কক্সবাজার জেলায় ২০০১ সনে ৯০০ হেক্টর এলাকায় স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক ডুলাহাজরা, কক্সবাজার যা এখন দেশী-বিদেশী পর্যটকদের অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
পলিথিন ও প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে সকলকে দেশীয় বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত পাটের পলিমার হতে প্রস্তুত পঁচনশীল সোনালী ব্যাগ ব্যবহারের আহবান জানান এবং সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় এবং সংস্থাসমূহকে প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যাগ উৎপাদনে এবং প্রচলনে উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ জানান।
এ বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আসুন প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করিঃ প্লাস্টিক পুনঃব্যবহার করি, না পারলে বর্জন করি,’ এর আলোকে প্রধানমন্ত্রী প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভাসমূহকে পুনঃব্যবহার এবং পুনঃচক্রায়ন এর উপর অধিকতর গুরুত্বারোপ করার আহবান জানান।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ, পলিসি ডায়ালগ এবং কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে কারো মুখাপেক্ষী না থেকে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যা মোকাবেলায় নিজেদেরকেই উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানান তিনি।
সরকার প্রধান বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়নে আমাদের তেমন ভূমিকা নেই। কিন্তু বাংলাদেশেকে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।’
সরকারের ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৩শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও আমাদের এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।’
তিনি শিল্প দূষণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অংশ হিসেবে পরিবেশ অধিদপ্তরে ‘মনিটরিং এন্ড এনফোর্সমেন্ট’ কার্যক্রম জোরদারকরণ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এর জনবল বৃদ্ধির বিষয়টিও তুলে ধরেন ।
১৯৭৪ সালে জাতীয় বৃক্ষরোপন অভিযান উপলক্ষ্যে জাতির পিতা প্রদত্ত বাণীর অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী দেশকে সবুজে সবুজে ভরিয়ে তুলতে দেশবাসীকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণের আহবান জানান।
জাতির পিতা বলেছিলেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য এই বৃক্ষরোপণ অভিযানের সময় এবং পরে অধিক বৃক্ষরোপণ করে সরকারের প্রচেষ্টাকে সাফল্যম-িত করে তোলা। এই বাণীর আলোকে প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে তিনি সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ তুলে ধরেন- ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যত নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়ক, অফিস-আদালত, সরকারি ভবন, পার্ক, নদীর তীর, লেক, খেলার মাঠ, কবরস্থানসহ পতিত, পরিত্যক্ত জমিতে, এমনকি বাড়ীর ছাদে যথাযথ কৌশল অবলম্বন করে সবুজ এলাকার সংখ্যা বাড়ানো যায়।
তিনি বৃক্ষরোপণ করে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন, আমরা প্রত্যেকে অন্তত একটি করে বনজ, ফলদ ও ভেষজ গাছের চারা রোপণ করি এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নির্মাণে এগিয়ে যাই।’
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে, পরিবেশ পদক ২০১৮ এর জন্য নির্বাচিত ব্যক্তি ও সংস্থা এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০১৮, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৭ ও সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেক গ্রহিতাদের অভিনন্দন জানান।
শিল্প দূষণ রোধ করে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করে পরিবেশবান্ধব একটি সবুজ অর্থনীতির দেশ গড়ে তোলার এখনই উপযুক্ত সময় বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
এবারের জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০১৮ এর প্রতিপাদ্য ‘সবুজে বাঁচি, সবুজ বাঁচাই, নগর-প্রাণ-প্রকৃতি সাজাই’ এর সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে শেখ হাসিনা আহবান জানান- ‘আসুন আমরা সবাই মিলে সবুজে-সবুজে দেশটা ভরিয়ে তুলি।’
প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পশ্চিম পার্শ্বে একটি ছাতিম গাছের চারা রোপন করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ মেলা এবং বৃক্ষ মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
বাসস/এএসজি/এফএন/১৬১৫/-আরজি