২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত ১,১৬২ : মারা গেছেন ১৯ জন

681

ঢাকা, ১৩ মে, ২০২০ (বাসস) : দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৬২ জন এবং মারা গেছেন ১৯ জন। এনিয়ে দেশে বর্তমানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার ৮২২ এবং মৃতের সংখ্যা ২৬৯ জন। এদিকে করোনা ভাইরাস থেকে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৩৬১ জন। ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন ২১৪ জন।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
গতকালের চেয়ে আজ ১৯৩ জন বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৬৯ জন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৭ হাজার ৮৬২টি। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ৬ হাজার ৮৪৫টি। নমুনা সংগ্রহ আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ১৭টি বেশি। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৪১টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৭ হাজার ৯শ’টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ৬ হাজার ৭৭৩টি। গতকালের চেয়ে নমুনা পরীক্ষা ১ হাজার ১২৭টি বেশি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৮টি।
তিনি জানান, মহামারি করোনাভাইরাসের নমুনা শনাক্তকরণে রাজধানীতে আরও ২টি এবং ঢাকার বাইরে আরও একটিসহ মোট ৩টি নতুন ল্যাবরেটরি যুক্ত হয়েছে। এ নিয়ে নমুনা শনাক্তকরণ ল্যাবরেটরির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১টিতে। নতুন যুক্ত হয় ল্যাবরেটরিগুলো হলো- ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতাল ও প্রাভা হেলথ এবং ঢাকার বাইরে জামালপুরের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ।
ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারী ১৯ জনের মধ্যে ১২ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ১৩, নারায়ণগঞ্জে ১ , মুন্সীগঞ্জে ১, খুলনা বিভাগে ১ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৩ জন রয়েছেন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায় যায়, ০ থেকে ১০ বছরের মধ্যে একটি মেয়েশিশু রয়েছে, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৫ এবং ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৫ জন রয়েছেন।
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ১৫০ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৩ হাজার ৪৩৫ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭৬ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছেন ১ হাজার ৩৩২ জন। সারাদেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ৮ হাজার ৬৩৪টি। ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছে ৫ হাজার ৭৩৪টি এবং ঢাকা মহানগরীতে ২ হাজার ৯শ’টি। আরও শয্যা তৈরির কাজ চলছে। আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৩২৯টি, ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১০২টি। আইসিইউ এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট সংখ্যা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৫৫৮ জনকে। এখন পর্যন্ত মোট ২ লাখ ২৭ হাজার ৬৪২ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৬৬২ জন এবং এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ১ লাখ ৮২ হাজার ৩৬১ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪৫ হাজার ২২১ জন।
সারাদেশের ৬৪ জেলা এবং সেখানকার উপজেলায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৬১৭টি প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ৩১ হাজার ১৬৫ জনকে কোয়ারেন্টিন সেবা দেয়া যাবে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ হয়েছে ১০ হাজার ৩০০টি। বিতরণ হয়েছে ৪১ হাজার ৩৫০টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৫৪৭টি। বিতরণ হয়েছে ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ১৯৬টি। বর্তমানে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৫১টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৬টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ ৬৫ হাজার ৫৫৬টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৭৩৩ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ১২ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ৭২ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৭০৪ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫০৩ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১২ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ২০ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৯০২ জন। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ১১৬ জন এবং এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯৭ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১২ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৫৯১ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ লাখ ৮৮ হাজার ৮৪৮ জন। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৪ হাজার ২৬১ জন এবং এ পর্যন্ত ২ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৩ জন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, রমজানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।