দেশে করোনা আক্রান্ত ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে, সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৩ হাজার

700

ঢাকা, ১১ মে, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনা আক্রান্ত ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৬৯১ জন।
এদিকে করোনা ভাইরাস থেকে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৯০২ জন। ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন ২৫২ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় ১১ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ নিয়ে ২৩৯ জনর মারা গেছেন।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান। গতকালের চেয়ে আজ ১৪৭ জন বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল আক্রান্ হয়েছিলেন ৮৮৭ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, দেশে করোনায় শনাক্ত বিবেচনায় মৃতের হার ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশ।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৭ হাজার ২৬৭টি। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ৫ হাজার ৬৪২টি। নমুনা সংগ্রহ আগের দিনের তুলনায় ১ হাজার ৬২৫টি বেশি। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে নোয়াখালীর আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজসহ দেশের ৩৭টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৭ হাজার ২০৮টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ৫ হাজার ৭৩৮টি। গতকালের চেয়ে নমুনা পরীক্ষা ১ হাজার ৪৭০টি বেশি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৮৬৫টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ১১ জনের মধ্যে ৫ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী। তাদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২ জন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন।
মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২ জন এবং রংপুর বিভাগে ১ জন রয়েছেন। এখন পর্যন্ত ঢাকা শহর ও ঢাকা বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ১৮৩ জনকে, ছাড় পেয়েছেন ৬২ জন। এখন ২ হাজার ২৩৬ জন আইসোলেশনে আছেন। এ পর্যন্ত আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১ হাজার ১৭৬ জন। মোট আইসোলেশন শয্যা আছে ৮ হাজার ৬৩৪টি। আরও শয্যা তৈরির কাজ চলছে। ঢাকা শহরের বাইরের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৩২৯টি, ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১০২টি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে ২ হাজার ৩৬০ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৪৩৯ জন। এ পর্যন্ত ২ লাখ ১২ হাজার ৯৮৩ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন থেকে মোট ছাড়া পেয়েছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৪০ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৩৬ হাজার ৩৪৩ জন।
সারাদেশের ৬৪ জেলা এবং সেখানকার উপজেলায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ হাজার ৯৫৫ জনকে কোয়ারেন্টাইন সেবা দেয়া যাবে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ হয়েছে ১১ হাজার ৪০টি। বিতরণ হয়েছে ৩৩ হাজার ১১২টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২১ লাখ ৩২ হাজার ৩২৫টি। বিতরণ হয়েছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৯২৬টি। বর্তমানে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯৯টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯৫টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৪৭ লাখ ৯৩ হাজার ৫১২টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৭০৭ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ৬ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ৬৮ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৮২৭ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১০ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৫০৬ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫ হাজার ৩১৪ জন। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ১৫২ জন এবং এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৩৫৬ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১০ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬১ হাজার ৫৭৮ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯ লাখ ১৭ হাজার ৩৬৬ জন। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৮ হাজার ৪৯৯ জন এবং এ পর্যন্ত ২ লাখ ৭৪ হাজার ৩৬১ জন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, রমজানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।