দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ জেলায় ৮২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে

231

পিরোজপুর, ৯মে, ২০২০ (বাসস) : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ জেলা গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা ও পিরোজপুরকে নিয়ে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। এই ৫ জেলার ৩৯টি উপজেলায় ফসলের নীবিড়তা ৫ থেকে ৮ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৮২ কোটি ৬৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
জানা গেছে, জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনে উপকূলীয় এলাকার লবনাক্ততার কারণে আবাদী জমিতে সীমিত আকারে ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর জেলার পরিবেশগত বৈশিষ্টের কারণে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি, জলোচ্ছ্বাস এবং ঘূর্ণিঝড়ে বার-বার আক্রান্ত হয়। এছাড়া এই অঞ্চল সমূহে শুষ্ক মৌসুমে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায় ও লবনাক্ততা বৃদ্ধি পায়।
দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় এই সব জেলায় কৃষির আধুনিক সুযোগ সুবিধা সমূহ ব্যবহারের পরিমাণ কম, ফলে কৃষির কাঙ্খিত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে না। খাদ্য ঘাটতি মেটানোর জন্য কৃষক ধানভিত্তিক শস্য উৎপাদনের প্রতি বেশী মনোযোগী হওয়ায়, ভূমিক্ষয় ত্বরান্বিত হচ্ছে। পানি সম্পদের ঘাটতে তৈরী হচ্ছে। মাটির উৎপাদন ক্ষমতা ও উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে এবং এর ফলে পুষ্টি ও খাদ্য ঘাটতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে এ অঞ্চলে জমি চাষের আওতায় আনা, পানি সম্পদের কার্যকরী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করে বসত বাড়িতে সবজি এবং উদ্যানতাত্বিক ফসল চাষ সম্প্রসারণ ও মানব সম্পদ উন্নয়নে এই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পটি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন করা হয়।
প্রকল্প পরিচালক আলমগীর বিশ^াস বাসসকে জানান, ২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, দেশের এই ৫ জেলার ৩৯টি উপজেলার ২৭ হাজার ৮৮৫টি কৃষক পরিবার প্রদর্শনীর মাধ্যমে সরাসরি উপকৃত হবে এবং ২৯ হাজার ৫২০ জন কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হবে। এছাড়া মাঠ দিবস, কৃষি মেলা, উদ্বুদ্ধকরণভ্রমণ ও আধুনিক যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে প্রায় ২ লাখ কৃষক পরিবার উপকারের আওতায় আসবে।
প্রকল্পের ডিপিডি তৌহিদুদ্দিন জানিয়েছেন, ৩৮ হাজার কৃষককে সার, সুপারিশ কার্ড প্রদান করা হবে। ধান, গম, ভুট্টা, বার্লি এর ১০ হাজার ৫৩০টি, পাটের ১১৭০টি, মুগ, মসুর, সয়াবিনের ২ হাজার ৯২৫টি, সরিষা,তিল, সূর্যমূখী, চিনাবাদানে ৩ হাজার ১২০টি, মরিচ, হলুদ, পিঁয়াজ, রসুন, আদার ৪ হাজার ৪৮৫টি, সবজির ৫৮৫টি, ডার্মি কম্পোস্ট-এর ৩৯০টি, কম্পোস্ট-এর ৩৯০টি, খামারজাত জৈব সারের ৩৯০টি, ঘেরের আইলে সবজি চাষের ৩৯০টি, জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনার ১ হাজার ৭৫৫টি, ব্লক প্রদর্শনী ধানের ৫৮৫টি, একক ফল বাগানের আম লিচু পেয়ারা মাল্টা, সফেদা, ড্রাগন ফল, আমড়ার ৭৮০টি এবং আম,লিচু পেয়ারা, লেবু, মালটা আমড়ার মিশ্র ফল বাগানের ৩৯০টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হবে।
এদিকে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে পিরোজপুর জেলায় ৫২১টি রবি মৌসুমের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হচ্ছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পিরোজপুরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া চলতি অর্থ বছরে ১ হাজার ১০২টি ক্ষুদ্রাকার কৃষি যন্ত্রপাতি, একশত ফুট ফিতা পাইপসহ ৩১২টি লো-লিফট পাম্প, ১৯৫টি হ্যান্ডরিপার, ৪০০টি হ্যান্ড স্পেয়ার, ১৯৫টি ফুট পাম্প কৃষকদের মাঝে প্রদান করা হবে। কৃষি সম্প্রসারণ জেলা কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে এই ৫ জেলায় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার উৎপাদন, ফেরমন ফাঁদ, জৈব বালাই নাশক ও জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকদের জীবন মান উন্নয়ন করা হবে।