এবার উত্তরা গণভবনে ফুটেছে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ফুল হৈমন্তি

1248

॥ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন॥
নাটোর, ৫ মে, ২০২০ (বাসস) : নাটোরের উত্তরা গণভবনে হৈমন্তির এখন ভরা মৌসুম। সাতটি হৈমন্তির রূপ রস গন্ধে অনন্য হয়ে উঠেছে উত্তরা গণভবনের আঙিনা। ফুলের কানে ভ্রমরের গুঞ্জনে মোহনীয় চারিদিক। হৈমন্তি ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ফুল।
অপরূপ স্থাপত্য শৈলীর রাজপ্রাসাদ আর বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসা অসাধারণ সব সামগ্রীর সংগ্রহশালাকে ছাড়িয়ে যায় গণভবনের দুস্প্রাপ্য কিছু গাছের সমাহার। এর বেশির ভাগটাই ফুল গাছ। এরমধ্যে পারিজাত, ম্যাগনোলিয়া, নাগালিঙ্গম, এগপ্লান্ট, সুরভিকা আর হৈমন্তি অন্যতম। এসব ফুল গাছের উপস্থিতি জানান দেয়, উত্তরা গণভবন শুধু রাজপ্রাসাদই নয় সুবিশাল পুষ্প সা¤্রাজ্যও বটে।
এরমধ্যে পারিজাত চক্রাকারে পাতার রঙ পাল্টিয়ে লাল রঙের ফুলের থোকায় পরিণত হয় বসন্তে। এগপ্লান্টে প্রায় সারা বছর দু’একটা ফুল থাকলেও শীত আর বর্ষা এর ভরা মৌসুম। নাগলিঙ্গম আর ম্যাগনোলিয়া বসন্তে ফুটলেও বিস্তৃতি বর্ষাকাল পর্যন্ত। রাজার প্রিয় ফুল সুরভিকা ফোটে মূলত শীতকালে।
আর বসন্তে পাতা হারিয়ে হৈমন্তি গাছগুলো হয়ে পড়ে বিবর্ণ। বসন্তের শেষার্ধে ফুল আসতে শুরু করলেও গ্রীষ্মে হৈমন্তি হয়ে ওঠে অপরূপা। সারাগাছ জুড়ে ফুল আর ফুল, কোন পাতা নেই। গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহে এ যেন শুভ্র সুন্দর শান্তির পরশ। গ্রীষ্মের এই ফুল সুবাস ছড়াবে অন্তত দু’মাস। এটিই হৈমন্তির ভরা মৌসুম। শরতে আরো একবার হৈমন্তি শুভ্র সুন্দর হয়ে ওঠার চেষ্টা করে। তবে, এত ফুলের প্রাচুর্য আর সুবাস তখন থাকে না।
গণভবনের সিংহ দুয়ার পেরিয়ে সোজা এগিয়ে গেলে ইটালিয়ান গার্ডেনের প্রবেশপথের আগে দাঁড়িয়ে আছে একটি হৈমন্তি। ইটালিয়ান গার্ডেনে একটি, হরিণনিবাসে একটি, সংগ্রহশালার সাথে একটি, রাজপ্রাসাদের সামনে দু’টি হৈমন্তি গাছ। আর রাণীমহলে একটি হৈমন্তি গাছ। ধীরে বর্ধনশীল হৈমন্তির সাতটি গাছের মধ্যে রাজপ্রাসাদের সামনের গাছটি ফুলে ফুলে সবচে’ সমৃদ্ধ। রাণীমহলের গাছটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রোপন করেছিলেন বলে জেলা প্রশাসন একটি ফলক দিয়েছে। সাবেক জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনের সময়ে মৃতপ্রায় হৈমন্তি গাছটি বাঁচিয়ে তুলতে পদক্ষেপ গ্রহন করা হয় আর নামফলক দেয়া হয়। বিগত কয়েক বছরের পরিচর্যায় মৃতপ্রায় গাছটি ফুলে ফুলে ছেঁয়ে যাচ্ছে।
তবে, উত্তরা গণভবনে কর্মরত সবচে’ পুরনো মানুষ অবসরপ্রাপ্ত গার্ডেনার আব্দুল হাকিম অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকাকালীন জানিয়েছিলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু নাটোরে এসে গভর্নর হাউজকে গণভবন হিসেবে নামফলক স্থাপন করেন এবং রাজপ্রাসাদের সামনে একটি গাছের চারা রোপন করেন।
সম্প্রতি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বঙ্গবন্ধুর রোপন করা হৈমন্তি গাছ নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে। সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলেন, নামফলক দেয়া হৈমন্তি গাছটি বঙ্গবন্ধুর রোপিত নয়। তবে, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ফুলের তালিকায় ছিল হৈমন্তি। এই গাছের তলায় প্রিয় সময় উপভোগ করেছেন তিনি, করেছেন কবিতা আবৃত্তি।
বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ফুল হৈমন্তি। তাই, দর্শনার্থীদেরও প্রিয় ফুল হৈমন্তি। এজন্যে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকা আর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা যায় গ্রীষ্মকালে আগত হাজারো দর্শনার্থীদের। তবে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে স্থবির হয়ে পড়া যাতায়াত-যোগাযোগ ব্যবস্থায় গণভবনে দর্শনার্থী প্রবেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তাই, দর্শনার্থীদের কোলাহল ছাড়াই নীরবে রূপ রস গন্ধ বিলিয়ে যাচ্ছে উত্তরা গণভবনের সাতটি হৈমন্তি।