করোনা আক্রান্ত ১০ হাজার ছাড়িয়েছে, সুস্থ হয়েছেন ১২০৯ জন

391

ঢাকা, ৪ মে, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। বর্তমানে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ১০ হাজার ১৪৩ জন।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ৬৮৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এটি এ যাবৎকালে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় ১৪৭ জন সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত করোনামুক্ত হয়েছেন ১ হাজার ২০৯ জন।
এ ছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় ৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এদের সবাই পুরুষ। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৮২ জন।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
গতকালের চেয়ে আজ আক্রান্ত ২৩ জন বেশি। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬৬৫ জন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৬ হাজার ৩১৫টি। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ৫ হাজার ২১৪টি। নমুনা সংগ্রহ আগের দিনের তুলনায় ২১ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৩৩টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬ হাজার ২৬০টি। আগের দিন পরীক্ষা হয়েছিল ৫ হাজার ৩৬৮টি। গতকালের চেয়ে নমুনা পরীক্ষা ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত নমুনা সংগৃহিত হয়েছে ৮৭ হাজার ৬৯৪টি।’
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারী ৫ জনের বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৬০ ষাটোর্ধ্ব ৩ জন, ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১ জন এবং ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন। ৫ জনের মধ্যে ৩ জন ঢাকার, ১ জন সিলেটের এবং ১ জন ময়মনসিংহের।
নাসিমা সুলতানা বলেন, রোববারের রিপোর্ট অনুযায়ী আক্রান্ত এবং মৃতের হার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ ভাগ পুরুষ ও ৩২ ভাগ নারী এবং মৃতদের মধ্যে ৭৩ ভাগ পুরুষ ও ২৭ ভাগ নারী। মৃতদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব বয়সের ৪২ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ২৭ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ১৯ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ৭ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের ৩ শতাংশ এবং ১০ বছরের নীচে ২ শতাংশ।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত ঢাকা বিভাগেই সর্বোচ্চ সংখ্যক শনাক্ত হয়েছে। এই বিভাগে ঢাকা সিটি এবং এরপর নারায়ণগঞ্জে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। এই বিভাগের কুমিল্লা জেলায় আক্রান্তের হার বেশি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ জেলা। সিলেটের হবিগঞ্জ জেলা, রংপুরের রংপুর জেলা, খুলনা বিভাগের যশোর জেলা, বরিশালে বরিশাল জেলা এবং রাজশাহীতে জয়পুরহাট জেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১৪৭ জন সুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল থেকে ১৩ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ১১ জন, ঢাকা মহানগর হাসপাতাল থেকে ৭ জন, রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতাল থেকে ১৩ জন, লালকুঠি হাসপাতাল থেকে ৪ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ১৪ জন, ঢাকা বিভাগে ১১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৭ জন, রংপুর বিভাগে ৪ জন এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে ১৪ জন সুস্থ হয়েছেন।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৯০ জনকে, এখন পর্যন্ত মোট আইসোলেশনে আছেন ১ হাজার ৬৩৬ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৯১ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ১ হাজার ১৭৩ জন।
সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ৯ হাজার ৭৩৮টি। ঢাকার ভেতরে রয়েছে ৩ হাজার ৯৪৪টি। ঢাকা সিটির বাহিরে শয্যা রয়েছে ৫ হাজার ৬৯৪টি। আর দেশে আইসিইউ সংখ্যা রয়েছে ৩৪৯টি, ডায়ালাসিস ইউনিট রয়েছে ১০২টি রয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৭৪২ জনকে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৩৪ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২৮ হাজার ৫৪৮ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন এক লাখ ৫৩ হাজার ৪০১ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪১ হাজার ৯৩৩ জন।
সারাদেশের ৬৪ জেলা এবং সেখানকার উপজেলায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৬০১টি প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ হাজার ৬৩৫ জনকে কোয়ারেন্টাইন সেবা দেয়া যাবে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ হয়েছে ২৩ হাজার ২০০টি। বিতরণ হয়েছে ২২ হাজার ৪০টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩৬২টি। বিতরণ হয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৯৩টি। বর্তমানে ৩ লাখ ৯৯ হাজার ১৬৯টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ৬৯ হাজার ৮২৪টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪৩৬টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মোবাইল ও ওয়েবসাইটে গত ২৪ ঘন্টায় ১৮ হাজার ৫৫৪ জন এবং এ পর্যন্ত১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৮২৬ জনকে স্বাস্থ্য পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৫৮৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ৪৪ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৫৭৩ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৮৫৩ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।