আপিল বিভাগে চেম্বার কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চে জরুরি মামলা চলবে : সুপ্রিমকোর্ট নির্দেশনা

463

ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২০ (বাসস) : বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে চেম্বার কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগে একটি বেঞ্চ মামলা সংক্রান্ত জরুরি বিষয় নিষ্পত্তিতে বসবেন।
সুপ্রিমকোর্টে রেজিস্ট্রার জেনারেল স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এছাড়া ছুটি ৫ মে পর্যন্ত ছুটি বাড়িয়ে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কঠোর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অতীব জরুরি বিষয়গুলো শুনানির নিমিত্তে ছুটিকালীন সময়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে বসবেন। তাছাড়া ছুটিকালীন সময়ে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সব অধিক ক্ষেত্রের অতীব জরুরি বিষয়গুলো শুনানির নিমিত্তে হাইকোর্ট বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। আদালত পরিচালনার কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব অনুসরণের নিয়ম-কানুনের বিষয়ে বিচারপতিরা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন।
করোনা ভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটির ২৬ মার্চ থেকে সরকারি আদেশের সঙ্গে মিল রেখে আদালত অঙ্গণও বন্ধ রয়েছে। কেবল জরুরি প্রয়োজনে প্রত্যেক জেলায় একটি করে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট খোলা রয়েছে।
এর আগে সুপ্রিমকোর্টের ১৪ জন আইনজীবী সীমিত পরিসরে অনলাইনে কোর্ট খোলার জন্য প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেন। করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রয়োজনীয় আদেশ চেয়ে একটি বেঞ্চ গঠনে অপর দুই আইনজীবীও চিঠি দেন। এছাড়াও ঢাকা বারের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও প্রধান বিচারপতি বরাবরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে জজ কোর্ট খোলারও আবেদন করেন।
আপিল বিভগের বিচারপতিদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির এক বৈঠকের পর ১১ এপ্রিল এক নোটিশে জানানো হয়, দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা এবং এর ব্যাপক বিস্তাররোধকল্পে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব আদালতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
আজ সভায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যেই স্বল্প পরিসরে আদালত পরিচালনার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘দেশব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলা এবং বিস্তাররোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ৫ মে পর্যন্ত দেশের সকল আদালতের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অতীব জরুরি বিষয়সমূহ শুনানির নিমিত্ত ছুটিকালীন সময়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে বসবেন।
এছাড়া ছুটিকালীন সময়ে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সকল অধিক্ষেত্রের অতীব জরুরি বিষয়সমূহ শুনানির নিমিত্ত হাইকোর্ট বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। আর আদালত পরিচালনার কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং সামাজিক দূরত্ব অনুসরণের নিয়ম-কানুন বিষয়ে বিচারপতি মহোদয়গণ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’
দেশের অধস্তন আদালতগুলোর বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার জারি করা আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজকে এবং মহানগর এলাকার মহানগর দায়রা জজকে ছুটিকালীন সময়ে তার সুবিধা মতো প্রতি সপ্তাহে যেকোনো দুই দিন কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জরুরি জামিন শুনানির নিমিত্ত সীমিত আকারে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। এছাড়া চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজে অথবা তার নিয়ন্ত্রণাধীন এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা ছুটিকালীন সময়ে তার বা তাদের সুবিধামতো প্রতি সপ্তাহের যে কোনো দুই দিন কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জরুরি জামিন শুনানির (কারাগারে থাকা হাজতে আসামির আবেদনসহ) নিমিত্ত সীমিত আকারে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’’
এই বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ‘যে সকল ফৌজদারি মামলায় আসামীকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জামিন প্রদান করা হয়েছে বা যে সকল মামলায় উচ্চ আদালত হতে অধস্তন আদালতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণের শর্তে জামিন প্রদান করা হয়েছে বা যে সকল মামলায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা/ স্থিতাবস্থার আদেশ প্রদান করা হয়েছে সে সকল মামলার আদেশের কার্যকারিতা আদালত খোলার তারিখ হতে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বর্ধিত হয়েছে মর্মে গণ্য হবে। ছুটিকালীন সময় উক্ত মামলা সমূহের বিষয়ে কোনো আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করা হবে না।’
‘এছাড়া একটি মামলার জামিন শুনানিতে কেবলমাত্র একজন বিজ্ঞ আইনজীবী অংশগ্রহণ করবেন। আদালত প্রাঙ্গণ এবং এজলাস কক্ষে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করা না হলে আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে। আর আদালত প্রাঙ্গণে এবং এজলাস কক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে স্ব স্ব আইনজীবী সমিতির বিজ্ঞ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং কার্যকরী কমিটির সদস্যদের সাথে আলোচনাক্রমে জেলা ও দায়রা জজ/ মহানগর দায়রা জজ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ‘জামিন শুনানিকালে কারাগারে থাকা আসামিদের কারাগার হতে প্রিজনভ্যানে বা অন্য কোনোভাবে আদালত প্রাঙ্গণে হাজির না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
ভিডিও/অডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত আরেক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে “সুপ্রিমকোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মস” কমিটি এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশকে ভিডিও/অডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে প্রয়োাজনীয় কারিগরি সুবিধা প্রদান এবং দেশের সকল জেলায় উপস্থিত হয়ে বিচারক আইনজীবী এবং আদালতের কর্মকর্তা কর্মচারীদের হাতে-কলমে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হলো।’
সুপ্রিমকোর্টের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে।