একাদশ সংসদের সপ্তম অধিবেশন সমাপ্ত : সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গৃহিত

1973

ঢাকা, ১৮ এপ্রিল, ২০২০ (বাসস) : বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সবদেশে ব্যাপক প্রাণহানি ও পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের মৃত্যুতে আজ সংসদে সর্বসম্মতভাবে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এই শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে শোকপ্রস্তাবের উপর আলোচনা ও সমাপনি ভাষণ দেন।
শোক প্রস্তাবে বলা হয়, সমগ্র বিশ্ব আজ করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এর সংক্রমণে এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। চীনের উহান রাজ্যে শুরু হয়ে করোনা ভাইরাস একের পর এক ছড়িয়ে পড়েছে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
লকডাউনে অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ব। প্রাণঘাতী করোনায় বিশ্বে এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছে লক্ষাধিক মানুষ। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ২০ লক্ষাধিক মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশে ২ হাজার ১৪৪ জন মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং এরই মধ্যে ৮৪ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।
সংসদে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন স্থানে মৃত্যুবরণকারীদের স্মরণে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। সেইসাথে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সকলের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়।
শোকপ্রস্তাবে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য সাবেক ভূমি মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা, ভাষাসৈনিক শামসুর রহমান শরীফের মৃত্যুতেও শোক প্রকাশ করা হয়।
শোকপ্রস্তাবে জানানো হয়, শামসুর রহমান শরীফ ১৯৪০ সালের ১১ মার্চ পাবনা সদর থানার হেমায়েতপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০২০ সালের ২ এপ্রিল ঢাকার একটি হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইল্লহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুর রহমান শরীফ ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর পর ৫ (পাঁচ) বার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদে বস্ত্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের অষ্টম সংসদে শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং ২০০৮ সালের নবম সংসদে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের দশম সংসদে অত্যন্ত সফলতার সাথে তিনি ভূমি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ-সদস্য থাকলেও তিনিই একমাত্র ভাষা সৈনিক ছিলেন।
সংসদে এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট রহমত আলী, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ শহীদুল হক জামাল এবং সাবেক সংসদ সদস্য মো. ওয়াজি উদ্দিন খান, সাবেক সংসদ সদস্য, সেকেন্দার আলী, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ জব্বার, সাবেক সংসদ সদস্য রহিম উদ্দিন ভরসা, সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য হুছনে আরা ওয়াহিদ এবং সংসদ সচিবালয়ের সহকারী নিরাপত্তা পরিদর্শক, মোঃ আব্দুল হাকিমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।
সংসদে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা মঈন উদ্দিন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক জালাল সাইফুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।
এছাড়া, বাংলাদেশি বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু ড. শ্রীমৎ ভদন্ত ধর্মসেন মহাথেরো, শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মোজাম্মেল হক, মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ তানজেল হোসেন খান, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন চুন্নু, ভাষাসংগ্রামী মুহম্মদ আবু সিদ্দীক, ভাসাসৈনিক নজির হোসেন, কমলাপুর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের অধ্যক্ষ, একুশে পদকপ্রাপ্ত ভদন্ত শুদ্ধানন্দ মহাথের, মুক্তিযোদ্ধা ও নারী নেত্রী রাখি দাস পুরকায়স্থ, আরমা দত্ত এমপির মাতা প্রতীতি দেবীর মৃত্যুতে সংসদে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।
এছাড়া, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে জাতীয় সংসদে গভীর শোকপ্রকাশ, সকল বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তÍপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানানো হয়।
এর আগে শোকপ্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম,শাহজান খান ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইফ মশিউর রহমান রাঙা।
শোকপ্রস্তাবের উপর আলোচনা শেষে মৃত্যুবরণকারীদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এর আগে তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এরপর সর্বসম্মতিক্রমে শোকপ্রস্তাব গ্রহন করে একাদশ সংসদের সপ্তম অধিবেশনের সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করে স্পিকার অধিবেশন সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
এর আগে আজ বিকেল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশন শুরু হয়।
অধিবেশনের শুরুতে ৫ সদস্যের সভাপতিমন্ডলীর মনোনয়ন দেন স্পিকার। সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা হলেন আ.স.ম. ফিরোজ, আবুল কালাম আজাদ, এ বি তাজুল ইসলাম, কাজী ফিরোজ রশিদ ও মেহের আফরোজ।