করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি সয়াহতা চান কক্সবাজারের শুঁটকিপল্লীর মালিক শ্রমিকেরা

411

কক্সবাজার, ১৫ এপ্রিল ২০২০ (বাসস) : বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন এবং যানবাহন চলাচল সীমিত করেছে।
এমতাবস্থায় যানবাহন সংকট ও উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন শুঁটকিপল্লীর উৎপাদনকারী ও দিনমুজুরেরা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। তাই তাঁরা সরকারি ও বেসরকারি উদ্যেগে সাহায্য কামনা করছেন।
তাঁরা জানান, সেপ্টেম্বর থেকে মে মাস শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের মৌসুম। তবে এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে গত একমাস যাবৎ উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এমতাবস্থায়, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন জানান, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর সরকারের ত্রাণ সয়াহতা কর্মসূচির আওতায় ইতোমধ্যে প্রায় ৪০,০০০ দিনমুজুরকে সরকারি ত্রাণ সয়াহতা প্রদান করেছে।
‘আমরা দিনমুজুরদের তালিকা তৈরি করছি। ধাপে ধাপে, আমরা সকল দিনমুজুরকে সরকারি ত্রাণ সয়াহতার আওতায় নিয়ে আসবো। শুধু দিনমজুর নয়, যে সকল মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ গ্রহণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না, আমারা তাদের কাছেও সরকারি সয়াহতা পৌঁছে দিচ্ছি,’ তিনি জানান।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শুটকিপল্লী নাজিরারটেক শুঁটকিমাছ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আতিকুল্লাহ সওদাগর জানান, সাধারণত আমরা মৌসুমের শেষ কয়েকমাসে সিংহভাগ শুঁটকিমাছ উৎপাদন করি। এ বছর মাছের অভাবে উৎপাদন গত একমাসে প্রায় শূন্যের কোটায় চলে এসেছে। যানবাহন সংকটের কারণে আমরা এখন চট্টগ্রাম থেকে মাছ আনতে পারছিনা।
তিনি উল্লেখ করেন, নির্ধারিত সময়ে শুঁটকিমাছ সরবরাহ করতে না পারার কারণে ইতোমধ্যে আমাদের অনেকগুলো বিক্রয়প্রস্তাব বাতিল হয়েছে।
এইখাতের ক্ষতিগ্রস্থ উদ্যেক্তাদের ক্ষতি পুশিয়ে নিতে স্বল্পসুদে ঋণের জন্য আহ্বান জানিয়ে, তিনি বলেন নাজিরারটেক শুঁটকিপল্লীর উেেদ্যক্তা ও দিনমুজুরেরা অলস সময় পার করছে। ইতোমধ্যে এই শুঁটকিপল্লীর ব্যবসায়িদের ক্ষতি আনুমানিক ১০০ কোটি টাকারও বেশি।
নাজিরারটেক শুঁটকিপল্লীর ১,০৪০ শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিটে প্রায় ৩০,০০০ শ্রমিক কাজ করে। এদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ মহিলা। এই শুঁটকিপল্লীতে বেশিরভাগ শ্রমিক দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করে। আগামী এক থেকে দেড়মাস পরে বর্ষা মৌসুম শুরু হলে স্বাভাবিক ভাবে তাঁরা বেকার হয়ে পড়বে। অধিকিন্তু তাঁরা গত এক মাস যাবৎ বেকার অবস্থায় আছে,’ আাতিকুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ ও মা এন্টারপ্রাইজের মালিক আতিকুল্লাহ উদ্বেগের সাথে জানান।
শ্রমিকদের দুর্দশা থেকে মুক্তির জন্য তিনি শ্রমিকদের ত্রাণ সয়াহতা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ফাতেমা মাছ বিক্রয় কেন্দ্রের মালিক মোঃ ইমরানুল হক জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে তাঁর ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। “আমার ইউনিটে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করে। এদের মধ্যে ছয়জন শ্রমিক পুরো মৌসুমের জন্য নিযুক্ত আছে। তাই আমাকে তাদের মজুরি ও ভরণপোষণ দিতে হবে,’ তিনি জানান।
বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর দুর্দশার কথা উল্লেখ করে দিনমুজুর জয়নাজ খাতুন জানান, ‘দুই মেয়ে একছেলে নিয়ে আমার পরিবারে সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। আমার স্বামীও দিনমজুর। শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিটে কাজ করে আমি দৈনিক ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং আমার স্বামী দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা উপার্জন করে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে আমরা এখন একমাসেরও বেশি সময় বাড়িতে বসে আছি। ইতোমধ্যে আমাদের সঞ্চিত অর্থ শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের বাচ্চাদের জন্য খাবার কেনার মতো অর্থ নেই।
আরেক শ্রমজীবী আলাম জানান, তিনি তার পাঁচ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। চলমান সংকটের কারণে তিনি ইতোমধ্যে আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন। এখন সাহায্য সহযোগীতা ব্যতিত বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার সামাথ্য তাঁর নেই।
শিশুশ্রম বিষয়ক প্রকল্প ‘কা¬ইম্ভ’ এর সিভিক এনগেইজমেন্ট এন্ড ক্যাপাসিটি বিল্ডিং বিশেষজ্ঞ মোঃ তানভীর শরীফ বলেন, এই অবস্থা শুধু আলম বা জয়নাজ খাতুনের নয়, কক্সবাজার এলাকার প্রত্যেকটি শুঁটকিপল্লীর শ্রমিকের একই অবস্থা।
তিনি বলেন, কিছু শ্রমিক মালিকদের থেকে ঋণ নিয়ে রাখেন। ঋণ পরিশোধ করার জন্য তাঁরা নিজেদের পাশাপাশি তাদের ছেলেমেয়েদেরও কাজে নিয়োগ করে। করোনা ভাইরাসের কারণে এবার তাঁরা আরও বেশি সমস্যায় পড়বে, কারণ তাঁরা এবার ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না।