বাসস ক্রীড়া-১১ : ক্রিকেট যে দিন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের শীর্ষ স্থান দখল করে

251

বাসস ক্রীড়া-১১
ক্রিকেট-বাংলাদেশ
ক্রিকেট যে দিন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের শীর্ষ স্থান দখল করে
ঢাকা, ১৩ এপ্রিল ২০২০ (বাসস) : বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক ঐতিহাসিক মূর্হুত রয়েছে। এ সব কিছুর মূলে রয়েছে আইসিসি চ্যাম্পিয়নশীপ ট্রফি জয়। ২৩ বছর আগে, ১৯৯৭ সালে আজকের এই দিনে আইসিসি চ্যাম্পিয়নশীপ ট্রফি জিতেছিলো বাংলাদেশ। ‘১৩’ সংখ্যাটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে আনলাকি। কিন্তু ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য শুভ একটি সংখ্যা।
জয় সূচক রানটি নিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে পাগলের মত ছুটছিলেন হাসিবুল হোসেন শান্ত। তাতেই মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালুমপুরের কিলাত ক্লাব মাঠে ইতিহাস সৃষ্টি করে বাংলাদেশ। মাঠটি এখন তেনাগা জাতীয় স্পোটর্স কমপ্লেক্স নামে পরিচিত।
স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু কেনিয়ার বিপক্ষে জয়টি দলের সকল খেলোয়াড়ের জন্য স্মরনীয় ছিলো।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১৫ রানে ৪ উইকেট পতনের পর অধিনায়ক আকরাম খানের ৬৭ রানের ইনিংসে দুর্দান্ত জয়ের বাংলাদেশকে টুর্নামেন্টে টিকিয়ে রেখেছিলো। যদি আকরাম খান সেই ইনিংস না খেলতেন তবে বাংলাদেশ হয়তো সেমিফাইনালে খেলতে পারতো না এবং ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেও খেলতে পারতো না।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টির কারনে ভেস্তে যাবার আগে প্রথম রাউন্ডে পাঁচটি ম্যাচের সবগুলোতেই জিতেছিলো বাংলাদেশ।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটি ছিলো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ঐ ম্যাচে জয় ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিলো না। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচটি জয়ের পর চ্যাম্পিয়নের জন্য লক্ষ্য নির্ধারন করে বাংলাদেশ, এমনটাই জানান আকরাম খান। আজ তিনি বলেন, ‘নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়ের স্মৃতি এখনো উজ্জল। এটিই ছিলো সবচেয়ে বেশি টেনশন ও শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ এবং তখন অনুভূূতি হয়েছিলে । তবে সর্বশক্তিমান আল্লাহর রহমতে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসটি খেলেছিলাম এবং সেমিফাইনালে উঠেছিলো দল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর আমাদের লক্ষ্য স্থির করি। আমরা জানতাম যদি আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারি, তবে আমরা সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ডকে হারাতে পারবো। তবে ম্যাচটি অনেক বেশি টেনশনের ছিলো, কারন এ ম্যাচ জিতলেই আমরা বিশ্বকাপে খেলতে পারবো। এছাড়া অনেকবারই আমরা খুব কাছে গিয়েও বিশ্বকাপের টিকিট পেতে ব্যর্থ হয়েছি। তবে সে বার দলের সকলে বদ্ধপরিকর ছিলো এবং স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে আমরা বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করেছিলাম।’
সেমিফাইনালে বাংলাদেশ ৭২ রানে হারায় স্কটল্যান্ডকে এবং কেনিয়ার বিপক্ষে ফাইনাল নিশ্চিত করে। আকরাম বলেন, ‘কেনিয়ার বিপক্ষে জয় তুলে শিরোপা জয় করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিলো। এ জয়ের জন্য আমরা ক্ষুধার্ত ছিলাম।’
ফাইনালে স্টিভ টিকোলোর সেঞ্চুরিতে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২৪১ রান করে কেনিয়া। এরপর বৃষ্টির কারনে ম্যাচটি রির্জাভ’ডেতে গড়ায়। বৃষ্টি আইনে ম্যাচ জয়ের জন্য ২৫ ওভারে ১৬৬ রানের জয়ের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। টার্গেটি কঠিনই ছিলো বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা হাল ছাড়েনি। প্রত্যক ব্যাটসম্যানই নিজেদের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছে। ব্যাটসম্যানদের আক্রমনাত্মক ব্যাটিংএ দুই উইকেটে জয় পায় বাংলাদেশ।
সে দিনের স্মৃতি রোমন্থন করে আকরাম বলেন, ‘শান্তর জয় সূচক রানটি ছিল ঐতিহাসিক মূর্হুত ছিলো। কিন্তু এর আগে ১৫১ রানে অষ্টম উইকেট পতনের পরও আমরা জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। শান্ত-পাইলট নিজেদের উপর আত্মবিশ্বাস ধরে রেখেছিলেন এবং শেষ বলে জয় নিশ্চিত করেন।’
পরবর্তীতে মানিক মিয়া এভিনিউতে হাজার হাজার মানুষের সামনে বিরোচিত সংবর্ধনা পায় আইসিসি ট্রফি জয়ী দল।
আকরাম বলেন, প্রথমবারের মত সাফল্যের পথ তৈরি করতে শেখ হাসিনার সরকার একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেছিলো।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই আন্তরিক ছিলেন এবং ট্রফি জিততে আমাদের সকল কিছুই দেয়া হয়েছিলো।’
ঐ সাফল্যটি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বড় প্রভাব ফেলেছিলো। ঐসময় বাংলাদেশের এক নম্বর খেলা ছিলো ফুটবল। কিন্তু আইসিসি চ্যাম্পিয়নশীপ ট্রফি জয়ের পর দেশের এক নম্বর ক্রীড়া ইভেন্ট হয়ে যায় ‘ক্রিকেট’।
আকরাম বলেন, ‘বাংলাদেশে ফুটবল ছিলো সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু আইসিসি চ্যাম্পিয়নশীপ ট্রফি দেশের ক্রীড়াঙ্গনের চিত্র পাল্টে যায়। বাংলাদেশে ক্রিকেট এখনও এক নম্বর খেলা।’
বাসস/এএমটি/১৯২৩/স্বব