বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ : ত্রাণ সামগ্রী আত্মস্যাৎকারীদের ছাড় দেয়া হবে না : প্রধানমন্ত্রী

222

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২
শেখ হাসিনা-বরিশাল ও খুলনা ভিডিও কনফারেন্স-দুর্নীতি
ত্রাণ সামগ্রী আত্মস্যাৎকারীদের ছাড় দেয়া হবে না : প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা, ১২ এপ্রিল, ২০২০ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কষ্ট লাঘবে তাঁর সরকার সরবরাহকৃত ত্রাণ সামগ্রী আত্মস্যাৎকারীদের কোনভাবেই ছাড়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে কয়েকটা খবর এ ধরনের বেরিয়েছে- যারা এ সকল ঘটনা ঘটিয়েছেন বা দুর্গত মানুষকে দেয়া চাল বা খাদ্যশস্য থেকে দুর্নীতি করার চেষ্টা করছে এবং কিছু ধরারও পড়েছে,আমি আশা করি এ ধরনের কাজ করলে সবাই ধরা পড়বেন। তাদের কিন্তু কোন ক্ষমা নেই।’
‘প্রয়োজনে সেখানে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে, বিচার পরে দেখা যাবে’, যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরিশাল এবং খুলনা বিভাগের ১৬টি জেলার স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সশ¯্র বাহিনীর সদস্য, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্য, সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে সর্বশেষ করেনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময়কালে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা চলছে। এ সময় মানুষকে সহায়তার জন্য আমরা যে খাদ্যদ্রব্য দিচ্ছি-চাল বা যা আমরা দিচ্ছি সেখান থেকে কেউ যদি দুর্নীতি করার চেষ্টা করে, তাহলে তা কোনভাবেই ক্ষমার যোগ্য নয় এবং এটা আমরা ক্ষমা করবোনা।
প্রত্যেকের নিজের একটা আন্তরিকতা থাকতে হবে উল্লেখ করে সরকার প্রধান ত্রাণ প্রদানকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যাদেরকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি তাঁরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু এরমধ্যে সামাণ্য এই দু-একটি ঘটনা আমাদেরকে অত্যন্ত কষ্ট দেয় এবং এটা খুবই একটা ঘৃণ্য কাজ। এরকম কেউ করবেন না সেটাই আমি বলবো। এই ধরণের দুর্নীতি কোনদিনই আমরা বরদাশত করবো না।
তিনি এক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব আরো বেশি উল্লেখ করে বলেন, ‘বিশেষকরে আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদের তো আরো বেশি দায়িত্ববোধ থাকত হবে। যারা সরকারি চাকরি করেন বা সরকারি বেতন পাচ্ছেন জনগণের ট্যাক্সের টাকাতেই সেটা পাচ্ছেন। কাজেই প্রত্যেককেই আজকে কাজ করতে হবে।’
মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রেস সচিব ইহ্সানুল করিম এবং পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ভিডিও কনফারেন্সে অন্যান্যের মধ্যে গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় এখানে যেকোন রোগের সংক্রমণ রোধ করাটাকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এজন্য প্রত্যেকটি মানুষ নিজের এবং নিজের পরিবারের কথা ভাবতে হবে, পাড়া প্রতিবেশী বা এলাকবাসীর কথা ভাবতে হবে। যাতে সবাই সুরক্ষিত থাকতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিজেরা চিন্তা না করলে কিন্তু আমরা মুখে বলে কিছু করতে পারবো না, ঘরে থাকতে হবে এবং প্রয়োজন কারো সঙ্গে অহেতুক মেলামেশা না করার জন্য প্রত্যেককে সতর্ক থাকার জন্য তিনি বারংবার অনুরোধ জানান। তিনি একস্থান থেকে অন্য স্থানে বা অন্যজেলায় না যাওয়ার জন্যও সকলকে অনুরোধ করেন।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অনেক জেলায় যেখানে সংক্রমণ ছিলই না কিন্তু একজনের কাছ থেকে অন্যজনের কাছে ক্রমেই চলে যাচ্ছে, সংক্রমণ হচ্ছে। সবাইকে যেহেতু ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। সেখানে অহেতুক ঘোরাঘুরি করার ফলেই এই সংক্রমণ ঘটছে। কাজেই, এ অবস্থা চতে থাকলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) এ সময় সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের এবং বাংলাদেশে যেন কেউ ঢুকতে না পারে তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন এবং কেউ ঢুকে পড়লে তাকে সেখানেই কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণেও নির্দেশ প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সকলের ঘরেই খাবার এবং সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে, যেহেতু অনেকের কাজকর্ম নেই। আবার অনেকে ত্রাণের জন্য হাত পাততে পারেন না।
তাঁর সরকার সামাজিক নিরাপত্তাবলয়সহ বিভিন্ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে যারা তালিকাবদ্ধ রয়েছেন তাঁদের সহযোগিতার পাশাপাশি তালিকার বাইরের লোকদের সহযোগিতার জন্যই অতিরিক্ত সাহায্য প্রদান করে যাচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, কাজেই সরকারের তালিকার বাইরে যারা রয়েছেন তাঁদের ফ্রেস আরেকটি তালিকা করে ফেলা দরকার। আর যারা হাত পাততে পারবেন না তাঁদের ঘরে ঘরে খাবারটা পৌঁছে দিতে হবে।
করোনাভাইরাসে সংক্রমণ রোধে আসন্ন পহেলা বৈশাখে কোন জনসমাগম করা যাবে না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এমনকি আসন্ন মুজিব নগর দিবস, ১৭ এপ্রিলও ঘরে থেকেই গণমাধ্যমের সহায়তায় পালনের জন্য ও বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি পুণরায় সকর্ত করে দিয়ে বলেন, ‘প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাহিরে বের হবেন না, সাবধানতা ছাড়া কোন উপায় নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হার্ট, কিডনি ও ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য করোনার ঝুঁকি বেশি। সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করতে হবে। কারণ, হাঁচি কাশির মাধ্যমেই এ ভাইরাস ছড়ায়।
পাশাপাশি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা করার সময় ব্যবহৃত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ও মাস্কসহ চিকিৎসা সরঞ্জামের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক বা যেসব চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়, সেগুলো জীবাণুমুক্ত রাখা এবং এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যারা কর্মরত আছেন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। যাতে এটা থেকে কোনোরকম করোনা না ছড়ায়। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’
শেখ হাসিনা দৃঢ় কন্ঠে বলেন, ‘সকলের সহযোগিতায় ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ এই দুর্যোগ থেকেও মুক্তি পাবে।’
বাসস/এএসজি-এফএন/এএইচজে-এসএইচ/১৭৪৫/আরজি