দেশে করোনায় আরও ১ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত ১১২ জন

442

ঢাকা, ৯ এপ্রিল, ২০২০ (বাসস) : গত ২৪ ঘন্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১ জন মারা গেছে। এ নিয়ে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২১ জন।
গত ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে সন্দেহভাজন আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছে ১১২ জন। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাড়ালো ৩৩০ জন।
রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস সম্পর্কে অনলাইনে নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য জানান। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি মোবিন খান, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের চেয়ারম্যান আনোয়ার খান এমপি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ডা. সানিয়া তাহমিনা ও রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ সময় অনলাইনে যুক্ত হয়ে সার্বিক করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় রাজধানীসহ সারাদেশে আইসোলেশন বেড সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। ঢাকার বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতে (আইসিসিবি) ২ হাজার বেড, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি মার্কেটে ১ হাজার ৪০০ বেড ও উত্তরার দিয়াবাড়িতে চারটি ভবনে ১ হাজার ২০০ বেডের আইসোলেশন ইউনিটসহ মোট ৫ হাজার ৬০০ বেডের আইসোলেশন ইউনিট যুক্ত হচ্ছে।
তিনি জানান, করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে দেশে এখন সাড়ে ৫শ’ ভ্যান্টিলেটর রয়েছে। আরো ৩৮০টি ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের করোনা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন এবং জনসাধারণকে ঘরে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে চীনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তারা বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ঘরে থাকতে হবে। ঘরে থাকলে নিজে ও পরিবারের সদস্যসহ সবাই ভাল থাকবেন। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরও তারা গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষার কথা তারা বলেছেন।’
বুলেটিনে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১ হাজার ৯৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে নতুন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১১২ জন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩০ জনে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে নতুন করে মারা গেছেন আরও ১ জন। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২১।’
তিনি বলেন, ‘নতুন আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৭০ জন ও নারী ৪২ জন। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ঢাকায় ৬২ জন এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নারায়ণগঞ্জে ১৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ১০ বছরের নিচে ৩ জন, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ৯ জন, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ২৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ২৩ জন এবং ষাটোর্ধ্ব ১১ জন। নতুন করে যিনি মারা গেছেন তিনি ষাটোর্ধ্ব পুরুষ। তিনি ঢাকার বাইরের।’
ডা. সানিয়া তাহমিনা জান্না, গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে আরও ১ হাজার ৩৩৭ জনকে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ১৪৯ জনকে। এ সময়ে ৮৫৬ জনকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১০ হাজার ৭৮৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ৩৭ জনকে। ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৩ জন। এখন আইসোলেশনে রয়েছেন ১৩৫ জন।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইন নম্বরে প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ মানুষ পরামর্শ ও স্বাস্থ্য সেবা নিয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় এই ফোন কলের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৪৭টি।
করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৮৮১ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ২ হাজার ৮১৮ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, নতুনভাবে আরও ২ লাখ ২২ হাজার ২৮৪টি পিপিই সংগ্রহ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ৯ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬টি ও মজুদ রয়েছে ৪ ১৮ হাজার ৯৩১টি। টেস্টিং কিট মজুদ আছে প্রায় ৭১ হাজার। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের বিমান, স্থল, সমুদ্র বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আগত ২৬৭ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
এ সময় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এসোসিয়েশনের সভাপতি মোবিন খান ও মহাসচিব ডা. এনামুর রহমান কথা বলেন।
তারা বলেন, সারাদেশের ৬৯টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টাই সব ধরনের রোগীকে সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এসব হাসপাতালের কয়েকটি করোনা রোগীদের সেবা দিতে নিবেদিত থাকবে। সব ধরনের রোগীদের সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন বেসরকারি ২০ হাজার ডাক্তার।