বাসস ক্রীড়া-৭ : করোনা : সুস্থ হয়ে উঠে ঈশ্বরকে আর্তেতার ধন্যবাদ

123

বাসস ক্রীড়া-৭
ফুটবল-আর্তেতা
করোনা : সুস্থ হয়ে উঠে ঈশ্বরকে আর্তেতার ধন্যবাদ
লন্ডন, ২৭ মার্চ ২০২০ (বাসস) : প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল ক্লাব আর্সেনালের কোচ মিকেল আর্তেতা। গত ১২ মার্চ কোভিড-১৯ পরীক্ষায় পজিটিভ ধরা পড়ে আর্তেতার। এরপর থেকেই আইসোলেশনে চলে যান তিনি। আইসোলেশনে যথাযথ নিয়ম মেনে চলায় দুই সপ্তাহের কম সময়েই সুস্থ হয়ে উঠেছেন কোচ। গত সোমবার জানা গেছে, তিনি এখন বিপদমুক্ত। চিকিৎসকদের কাছ থেকে সুস্থতার সার্টিফিকেট পাবার পর করোনাভাইরাস নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা ক্লাব ওয়েবসাইটকে জানিয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ কোচ আর্তেতা।
আর্তেতার আক্রান্ত হবার পর-পরই স্থগিত হয়ে যায় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। সকল ক্লাবগুলো তাদের খেলোয়াড়দের ছেড়ে দেয়। যাতে খেলোয়াড়রা নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করতে পারে। কারন আর্তেতা আক্রান্ত হবার কিছুদিন আগেই অলিম্পিয়াকোসের মালিকের করোনাভাইরাস ধরা পড়ে।
তারও কয়েকদিন আগে অলিম্পিয়াকোসের সাথে ইউরোপা লিগের শেষ ৩২-এর ম্যাচ খেলে আর্সেনাল। এরপরই নিজের মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষন টের পান আর্তেতা। আর্সেনালডটকমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আর্তেতা বলেন, ‘অলিম্পিয়াকোসের মালিকের করোনা ধরা পড়ার পর ক্লাব আমাদের করোনাভাইরাস নিয়ে সর্তক করে। তারা জানায়, আমরাও ভাইরাসটির সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছি। তত দিনেই আমার মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। তখন আমার মনে হচ্ছিল, কিছু একটা আছে আমার শরীরে।’
আতঙ্কিত হয়ে নিজের শারীরিক সমস্যার কথা ক্লাবের চিকিৎসককে জানান আর্তেতা। চিকিৎসক তাকে সতর্ক থাকতে বললে, ক্লাবের সকলকে সাবধান করে আর্তেতা। তিনি জানান, ‘ক্লাবকে বলেছিলাম, আমাদের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। আমিই প্রথম লক্ষণগুলো টের পাচ্ছি। প্রতিদিনই আমার সংস্পর্শে যে খেলোয়াড়েরা বা ক্লাবের লোকজন আসেন, সবাই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের কথা বলতে হবে, ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে কথা বলতে হবে, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
শুধু খেলোয়াড়-ক্লাবের কর্মকর্তাই নন, তাঁর আশপাশের সবাই আর্তেতার মাধ্যমে ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছেন, এমন উপলব্ধি হয় আর্তেতার। তাই ভয় কাজ করতে থাকে তার, ‘তখন মনে হলো, সবাই-ই তো তাহলে আমার মাধ্যমে ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে। খুবই ভয়ংকর ব্যাপার হতে যাচ্ছে। আমার কাছের যাঁরা আমার সংস্পর্শে আসছেন তারাই আক্রান্ত হচ্ছেন। তাঁদের নিয়ে চিন্তা চলে আসে তখন। আর তখনই ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে উঠি আমি।’
তবে লক্ষণ ধরা পড়ার পর সময়ক্ষেপন করেননি আর্তেতা। দ্রুতই আইসোলেশনে চলে যান তিনি। যাতে ভাইরাসটা তাঁর কাছ থেকে আর কারও শরীরে ছড়াতে না পারে।
এরপর আইসোলেশনে প্রাণঘাতি ভাইরাসের বিপক্ষে লড়াই শুরু করেন আর্তেতা। বেঁচে থাকার লড়াই। লড়াইটা কেমন ছিল আর্তেতার? আর্তেতা নিজেই বললেন সেই দুঃসময়ের কথা, ‘লক্ষণের দিকগুলো ভাবলে, আমার কাছে অন্য ভাইরাসের মতোই মনে হয়েছে। প্রথম তিন-চার দিন কঠিন গেছে। জ্বর ছিল, শুকনো কাশি ছিল, অস্বন্তি বোধ করছিলাম। খুবই বাজে কষ্টকর সময় ছিলো।’
এই মহামারীতে আক্রান্ত হবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ব্যস্ত ছিলেন আর্তেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন এমন একটা সময়ে বাস করছি, যেখানে সোশ্যাল মিডিয়াই যেন সবকিছু। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেই যোগাযোগ হয়ে যাচ্ছে। তবে একে অপরকে ছোঁয়া, আলিঙ্গন করাটাও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। আমি এসব মিস করেছি, আমার ভালোবাসার মানুষদের কাছ থেকে। আমাদের মানসিকভাবে আরও উন্মুক্ত হতে হবে। একে অপরের অনুভূতি বুঝতে হবে।’
এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পেলে তা ভুলে যাওয়াই উত্তম বলে জানান আর্তেতা, ‘আইসোলেশনে যাবার পর আমি জানতাম না কতদিন লাগবে সুস্থ হতে। দ্রুতই সুস্থ হচ্ছি। এখন পুরোপুরি সেরে উঠেছি বলেই মনে হচ্ছে। তবে আমরা যদি শীঘ্রই এটি কাটিয়ে উঠতে পারি, তাহলে ভুলে যাওয়াই ভালো। কারণ এটাই বেশি গুররুত্বপূর্ণ।’
নিজের চেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়েই বেশি চিন্তা হচ্ছিল আর্তেতার। নিজের বাচ্চাদের নিয়ে অনেক চিন্তায় ছিলেন তিনি। বাচ্চাদের কোন সমস্যা না হওয়ায় ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে ভুল করেননি আর্তেতা, ‘সবচেয়ে কঠিন হচ্ছে, ঘরে আরও মানুষের সাথে তিনটা বাচ্চা আছে আমার। ওদের নিয়ে চিন্তা হচ্ছিলো। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, বাচ্চাদের কিছু হয়নি। তবে এখন আমরা সবাই ভালো আছি।’
বাসস/অনু/এএমটি/১৭১০/স্বব