যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্বেচ্ছা আইসোলেশনে’ সাকিব

205

ঢাকা, ২২ মার্চ ২০২০ (বাসস) : করোনাভাইরাসের সংক্রমনে কাঁপছে পুরো বিশ্ব। এই ভাইরাসকে মহামারী বলে ইতোমধ্যে অ্যাখায়িত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাই এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সর্তকতা সর্বদা। বাদ যাননি সাবেক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও। পরিবারের সঙ্গে অবস্থান করতে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে যান সাকিব।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেই এক হোটেলের রুমে নিজেকে স্বেচ্ছা আইসোলেশনে রেখেছেন সাকিব। তার পরিবারের সাথেও দেখা করছেন না তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেইজে এক ভিডিও বার্তায় এসব তথ্য জানান সাকিব।
ভিডিও বার্তায় সাকিব বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে মহামারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। আপনারা জানেন যে বাংলাদেশেও বেশ কয়েকজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। আমাদের এখনই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের সতর্কতাই পারে আমাদের দেশ এবং আমাদেরকে সুস্থ রাখতে।’
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপের কথাও জানালেন সাকিব, ‘কিছু সাধারণ পদক্ষেপ অনুসরণ করলেই আমার ধারণা, আমরা এই রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারব এবং আমাদের দেশকেও মুক্ত রাখতে পারব। যেমন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় সঠিক শিষ্ঠাচার মেনে চলা এবং যদি কেউ বিদেশ ফেরত থাকেন তাহলে অবশ্যই নিজেকে ঘরে রাখা এবং ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা। আরেকটা বিষয় মনে রাখতে হবে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা যেন আপনার সাথে দেখা না করতে পারে। ১৪ দিন আপনাকে ঘরে থাকতে হবে। এটা খুবই জরুরি।’
করোনারভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কিছু নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিলেন সাকিব। যুক্তরাষ্ট্রের হোটেলে নিজেও সেইসব নিয়মকানুন মানছেন তিনি। নিয়ম মানতে গিয়ে নিজের সন্তানের সাথেও দেখা করছেন না সাকিব। এমনটাও জানিয়েছেন তিনি, ‘আমি নিজের একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। আমি মাত্রই যুক্তরাষ্ট্রে এসে পৌঁছেছি। যদিও বিমানে সব সময়ই একটু হলেও ভয় কাজ করেছে, তবু চেষ্টা করেছি নিজেকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখার। এরপর যখন আমি যুক্তরাষ্ট্রে এসে নামলাম, আমি সোজা একটি হোটেলে উঠেছি। ওদের জানিয়ে দিয়েছি, আমি কিছুদিন এখানে থাকব। আর আমি যেহেতু বিমানে চড়ে এসেছি, তাই আমার একটু হলেও ঝুঁকি আছে। এ জন্য আমি নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে রেখেছি। যে কারণে নিজের বাচ্চার সাথেও দেখা করিনি। এখানে এসেও নিজের বাচ্চার সঙ্গে দেখা করছি না, অবশ্যই আমার জন্য এটা কষ্টদায়ক। তারপরও আমার মনে হয়, এই সামান্য আত্মত্যাগটুকু করতে পারলে আমরা অনেক এগোতে পারব।’
বিদেশফেরত অনেকে বাংলাদেশে এসে অনেকেই সেল্ফ আইসোলেশনে যাননি। তাদের উদ্দেশেও অনুরোধ করেছেন সাকিব। বাংলাদেশ সরকার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো সংগঠনদের দিক-নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি, ‘যদি কেউ বিদেশফেরত থাকেন, তাহলে অবশ্যই নিজেকে ঘরে রাখা এবং ঘর থেকে যাতে বাইরে না যাওয়া হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। একই সাথে আরেকটি ব্যাপার মনে রাখতে হবে, যেন আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী এসে আপনার সঙ্গে দেখা করতে না পারেন। ১৪ দিন আপনাকে ঘরে থাকতে হবে, যেটা খুবই জরুরি। আমাদের দেশেও যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছেন, অনেকেই এসেছেন খবরে পড়েছি। আমাদের দেশেরই মানুষ তাঁরা। যেহেতু তাঁদের ছুটির সময় কম থাকে, অনেক সময়ই তাঁরা চান আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে, ঘুরতে, খাওয়া দাওয়া করতে, আড্ডা দিতে, কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে একত্রিত হতে। যেহেতু আমাদের সময়টা অনুকূলে না, আমি সবাইকে অনুরোধ করব সবাই যেন এ ক্ষেত্রে নিয়মগুলো মেনে চলেন। কারণ আমাদের এই সামান্য আত্মত্যাগটুকুই পারে আমাদের পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে, সুস্থ রাখতে, আমাদের নিজেদেরও সুস্থ রাখতে। আশা করি আপনারা আমার এই কথাগুলো শুনবেন এবং কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো সংগঠন যেসব দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন, সেগুলোর ব্যাপারে অবগত হবেন, এবং সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবেন।’
সময়টা বেশ ভয়াবহ, তারপরও আতঙ্কিত না হবার পরামর্শ দিয়েছেন সাকিব, ‘আরেকটা কথা বলব, কেউ আতঙ্কিত হবেন না। আতঙ্কিত হওয়াটা কারও জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে না। আমি খবরে দেখেছি, অনেকেই তিন-চার-পাঁচ এমনকি ছয় মাসের খাবার সংগ্রহ করে রাখছেন। আমার ধারণা খাবারের ঘাটতি কখনোই হবে না। আমরা কেউ না খেয়ে মারা যাব না। আমরা এ রকম আতঙ্কিত না হই। কিছু সঠিক সিদ্ধান্তই পারে আমাদের এই বিপদ থেকে মুক্ত করতে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা, খুব প্রয়োজন ছাড়া আশা করি কেউ এই সময়ে ভ্রমণ করবেন না বা বাসা থেকে বের হবেন না।’