বাসস দেশ-৫ : আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প মেহেরপুরে প্রতিবন্ধী ডেইজিকে দিয়েছে মাথা উঁচু করার সিঁড়ি

127

বাসস দেশ-৫
মেহেরপুর-প্রতিবন্ধী
আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প মেহেরপুরে প্রতিবন্ধী ডেইজিকে দিয়েছে মাথা উঁচু করার সিঁড়ি
॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ২০ মার্চ, ২০২০ (বাসস) : জেলার শারীরিক প্রতিবন্দ্বী ডেইজি খাতুন প্রতিবন্দ্বী প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। গ্রামে সে এখন দারিদ্র বিমোচনে মডেল।
সরকারের দারিদ্র বিমোচনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ ১০ উদ্যোগের অন্যতম উদ্যোগ হচ্ছে ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প। মেহেরপুরের এই প্রকল্পের সদস্য শারীরিক প্রতিবন্দ্বী ডেইজি খাতুন।
ডেইজি খাতুন শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নে প্রেরণা পেয়েছে এই প্রকল্পের ঋণে হাঁস, মুরচি ও ছাগল পালনের মাধ্যমে।
জেলার সদর উপজেলার আমদহ ইউনিয়নে সাহেবপুর একটি ছোট্ট গ্রাম। গ্রামের শ্রমজীবী আশেক বিশ্বাস ও গৃহবধূ মাছুরা খাতুনের দুই কন্যা সন্তানের মধ্যে ডেইজি খাতুন বড়। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় শুধু অসচ্ছল পরিবারেরই নয় প্রতিবেশী ও সমাজের কাছেও বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সে। কিন্তু ডেইজি খাতুনের ইচ্ছাশক্তি ও আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প তাকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে।
দরিদ্র এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে সে এখন স্বাবলম্বী। সে এবছর এসএসসি পরক্ষিা দিয়েছে। শ্রমজীবী বাবা যখন মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারছিল না তখন ডেইজি খাতুনের চলার পথ সুগম করে দিয়েছে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প।
শারীরিক প্রতিবন্ধী ডেইজি ২০১৭ সালে এই প্রকল্প থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১টি ছাগল ও ৬ টি মুরগি কিনে পালন শুরু করে। লালন পালন কওে সেই ছাগল ১৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে সে ঋণ শোধ করে। এরপর ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছাগল ক্রয় করে। এরপর এই প্রকল্প থেকে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নেয়। সেই ঋণের টাকায় ফের ছাগল পালন করে এখন ৯টি ছাগল, ১০টি হাঁস ও মোরগ মুরগিতে বাড়ি ভরে গেছে। হাঁস মুরগির ডিম বিক্রি করে নিজের লেখাপড়ারসহ পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ডেইজি। প্রতিমাসে সে এখন ২শ টাকা করে সঞ্চয় জমা করছে।
কথা হয় ডেইজির সঙ্গে। সে জানায়- শ্রমজীবী বাবার সংসারে একসময় নিজেকে বোঝা মনে হতো। লাঠিতে ভর করে চলতে ফিরতে হয়। স্কুলেও সাথীদের মতো চলতে পারতাম না। সমবয়সীরা যখন ছুটোছুটি করে খেলা করতো তখন আড়ালে আবডালে কাঁদতাম। ভাবতাম প্রতিবন্ধীতার কারণে আমার বিয়ে হবে না। এখন বিয়ের কথা ভাবিনা। ভাবি আমিতো লাঠিতে ভর করে হলেও চলতে ফিরতে পারি। টেলিভিশনে আমার বাড়ি আমার খামারের কথা শুনে ইউপি মেম্বারের মাধ্যমে প্রকল্পে যোগাযোগ করি। সেখারে সদস্য হয়ে ঋণ পাই। সেই ঋণ আমার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। এখন ভাবি প্রতিবন্ধী কোটায় যদি সরকার একটি চাকরি দেয়।
সাহেবপুর গ্রামের ডেইজি খাতুন এখন এই প্রকল্পে একটি আলোচিত নাম। সরেজমিনে তাদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় তার মা মাছুরা হাঁস মুরগি আর ছাগলের যতœ নিয়ে ব্যস্ত। বাবা কাজ করতে মাঠে গেছে। ডেইজি গেছে জেলা শহরে। বাড়ি ফিরতেই তার পালিত হাঁস প্যাক প্যাক করে জানান দিল তাদের খাবারের কথা। ধানের কুড়া পানি মিশিয়ে দিলেন হাঁসগুলোকে। সকালে সংগ্রহ করে রাখা কাঁঠাল পাতা দিলেন ছাগলকে। ডেইজি‘র মা মাছুরা জানান- এসব পালনের মাধ্যমে তারা এখন ভালই আছেন। কষ্টের মধ্যেও মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রকল্পের মাঠ সহকারি সাইফুল ইসলাম বলেন, সাহেবপুর গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্যদের মধ্যে ডেইজি খাতুন শুধু নিজ গ্রামেই নয় এই প্রকল্পের রোল মডেল।
আমদহ ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প আমার ইউনিয়নের নিজ পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন করে নিয়েছে ডেইজি। গৃহপালিত প্রাণি সম্পদ পালন সম্প্রসারণ করার ব্যাপারে এ থেকে আমিও অনুপ্রাণিত হয়েছি। তিনি আরও বলেন, ছাগল পালনে এখানে কোন খরচ নেই। ছাগল মাঠে চরে খেয়ে জীবন ধারণ করে। আর হাঁস পাশের নদী থেকে খাবার খেয়ে ডিম দেয়। হাঁস ও ছাগল পালন খুবই লাভজনক। তাই, এ এলাকার মানুষ যাতে হাঁস ও ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হয় সেই পদক্ষেপ নেব।
আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী মো. মনওয়ার হোসেন বলেন, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পে সদর উপজেলায় ৪১৪১ জন সদস্যর ১ কোটি ৩৪ লাখ ২৭ হাজার ১১ টাকা সঞ্চয় জমা আছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সভাপতি মাসুদুল আলম বলেন, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পেটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে গঠিত সমিতির প্রতিটি সদস্যের বাড়ি আজ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক ইউনিট হিসেবে গড়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই সুচিন্তিত উদ্যোগ সীমান্তবর্তী জনপদের দরিদ্র মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। সাহেবপুর গ্রাম সমিতির সদস্য ডেইজি খাতুন এ প্রকল্পের সুবিধা গ্রহন করে আতœনির্ভরশীল হয়েছে। প্রতিবন্ধীত্বকে জয় করে সমাজে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার তার এই প্রত্যয়ের সাথে যুক্ত হতে পেরে আমরা গর্বিত।
বাসস/সংবাদাদাতা/১৩৫০/আরজি