আগামীকাল কবি-ভাষাসৈনিক হাসান হাফিজুর রহমানের ৮৬তম জন্মদিন

437

ঢাকা, ১৩ জুলাই, ২০১৮ (বাসস): আগামীকাল চৌদ্দ জুলাই বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি, ভাষাসৈনিক ও সাংবাদিক হাসান হাফিজুর রহমানের ৮৬তম জন্মদিন।
তিনি ১৯৩২ সালের ১৪ জুন জামালপুর জেলা শহরের মাতুতালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দি গ্রাম তার পৈত্রিক নিবাস। পিতার নাম আবদুর রহমান। মা হাফিজা খাতুন। একান্ন বছর বয়সে ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল কবি মস্কোর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
বাঙালি সংস্কৃতি, সাহিত্য, ভাষা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা ক্ষেত্রে কবির বিচরণ ও লেখালেখি প্রায় চার দশক।
ছাত্র জীবনেই কবির লেখালেখি শুরু। তিনি ১৯৪৬ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে বি,এ এবং ১৯৫৫ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৫৪ সালে ডাকসু’র সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে সময় থেকেই তিনি সাহিত্য ও সামাজিক বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নেন।
ছাত্রাবস্থায়ই ১৯৫২ সালে ‘সাপ্তাহিক বেগম’ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়ে সাংবাদিকতা পেশা গ্রহণ করেন। সেই সাথে ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। ভাষা আন্দোলনের স্বারক এবং মহান একুশের প্রথম সংকলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’র সম্পাদনাও তিনি করেন ১৯৫৩ সালে। এ সংকলনে ভাষার ওপর কবির লেখা কবিতা ‘অমর একুশে’ প্রকাশ পায়। পরবর্তীতে সওগাত, দৈনিক পাকিস্তান ও ইত্তেহাদে কাজ করেন এবং সত্তরের শেষভাগে ‘দৈনিক বাংলা’র সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত কবি জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতাও করেন। তিনি প্রগতিশীল লেখক-শিল্পী সমিতি গঠন করে ভাষা আন্দোলনে যোগদান এবং রবীন্দ্র সঙ্গীতের বিরোধীতাকারীদের প্রতিহত করার সংগ্রামে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি যোগ দেন। ১৯৭৪ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে। এরপর মস্কোসহ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৮ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ প্রকল্পতে হাসান হাফিজুর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়। এ প্রকল্প থেকে মুক্তিযুদ্ধের ১৬ খন্ডের ইতিহাস ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র’ তার সম্পাদনায় প্রকাশ পায়। কবি সিকান্দার আবু জাফর প্রতিষ্ঠিত বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পত্রিকা ‘সমকাল’ এর সম্পাদকের দায়িত্বও তিনি কয়েক বছর পালন করেন।
অধ্যাপক ও গবেষক রফিকুল্লাহ খান ‘হাসান হাফিজুর রহমান রচনাবলী’ গ্রন্থের বইটির ভূমিকায় বলেন, ‘বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে হাসান হাফিজুর রহমান ছিলেন সমকালীন শিল্পী সাহিত্যিকদের অন্যতম। শিল্পীর সৃজনাবেগ এবং সংস্কৃতিকর্মীর দায়িত্ববোধকে তিনি সমতাৎপর্যে গ্রহণ করেছিলেন। পেশাগত জীবনে অধিকাংশ সময় পত্রিকায় সংশ্লিষ্ট থাকার ফলে সৃষ্টিশীল রচনার পাশপাশি পত্রিকার চাহিদা অনুযায়ী তাকে বিচিত্র বিষয়ে লিখতে হয়েছে’।
বাংলা একাডেমি প্রকাশিত কবি হাসান হাফিজুর রহমান রচনাবলীর সম্পাদক রফিকুল্লাহ খান আরো বলেন, বাংলাদেশের সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রগতিশীল ও প্রতিবাদী জীবন চেতনার অন্যতম প্রবর্তক হাসান হাফিজুর রহমান।
তিনি তার ‘হাসান হাফিজুর রহমান প্রসঙ্গ’ লেখাটিতে বলেন, ‘ছাত্র জীবনেই হাসান হাফিজুর রহমান জাতীয় সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিস্ময়কর সাংগঠনিক দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন। বিচিত্র কর্মধারার সঙ্গে জড়িত থাকা সত্বেও জীবনের উল্লেখযোগ্য সময়, অর্থ এবং শ্রম তিনি ব্যয় করেছেন মানুষ ও শিল্পের কল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য’।
কবি হাসানের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তেরটি। এর মধ্যে আটটি কাব্যগ্রন্থ। তার প্রথম লেখা ছোটগল্প ‘অশ্রুভেজা পথ চলতে’ ১৯৪৬ সালে প্রকাশ পায় সওগাত পত্রিকায়। তখন তিনি স্কুলের ছাত্র। প্রথম কবিতা প্রকাশ পায় ‘সোনার বাংলা’ পত্রিকায় ১৯৪৯ সালে। সেই থেকে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ও সাহিত্য সমালোচনায় কবি আমৃত্যু লেখালেখি করেন। তার উল্লেখযোগ্য ও প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে বজ্রেচেরা আঁধার আমার, সীমান্ত শিবিরে, মূল্যবোধের জন্যে, দক্ষিণের জানালা, আরও দুটি মৃত্যু, বিমুখ প্রান্তর, আর্ত শব্দাবলী, শোকার্ত তরবারি, আমার ভিতরের বাঘ, আধুনিক কবি ও কবিতা, সাহিত্য প্রসঙ্গ। তার অনুবাদ গ্রন্থ হচ্ছে ‘হোমারের ওডিসে’।
কবি হাসান হাফিজুর রহমান বিভিন্নক্ষেত্রে অবদানের জন্য পাকিস্তান লেখক পুরস্কার, আদমজী পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, সুফী মোতাহার হোসেন পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, সওগাত সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার অর্জন করেন।