বাজিস-১ : কুমিল্লার বরুড়ায় ১৬শ’ পরিবার হোগলাপাতা শিল্পের সাথে জড়িত

243

বাজিস-১
কুমিল্লা-হোগলাপাতা
কুমিল্লার বরুড়ায় ১৬শ’ পরিবার হোগলাপাতা শিল্পের সাথে জড়িত
॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ১৬ মার্চ, ২০২০ (বাসস) : জেলার বরুড়া উপজেলায় ১৬শ’ পরিবার হোগলাপাতা শিল্পের সাথে জড়িত। এ উপজেলার একটি গ্রামের নাম রাজপুর, ঘুমিয়ে নেই এ গ্রামের মানুষ। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার রাজপুর গ্রামে নেই কোন বেকার মানুষ। পুরো গ্রামটি ঘুরে চোখে পড়েনি বেকার কোনো যুবক-যুবতীর চেহারা। কাজ করেই গ্রামটির আর্থিক চেহারা বদলে দিয়েছে। কী সেই জাদুকরী প্রভাব যাতে গ্রামটির সবার কর্মসংস্থান ঘটেছে? যে জন্য গ্রামটি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী? এর মূল উপাদান হলো হোগলাপাতা। গ্রামে ঢুকেই চোখে পড়ে প্রতিটি ঘরেই হোগলাপাতায় তৈরী হচ্ছে হরেক রকমের ডিইজানের পাটি। সারা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির প্রতিটি আঙিনা ও অলিগলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ডিজাইনের হোগলাপাটি। নারী-পুরুষ-শিশুসহ সব বয়সের মানুষই হোগলাপাতা দিয়ে বিভিন্ন সাইজের পাটি তৈরী করতে নিয়োজিত। প্রত্যেকে নিজ নিজ কাজের ফাঁকে সময় অনুযায়ী পাটি তৈরী করছে। এভাবে কাটছে রাজপুর গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের জীবনধারা। এখান থেকেই বিভিন্ন সাইজের পাটি তৈরী পণ্য চলে যায় ঢাকা, সিলেট, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, রংপুর, গাইবান্ধা, রাজশাহী, বরিশাল, পটুয়াখালী, দিনাজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এমনকি রাজাপুরের পাটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তাবলিক জামাত বিশ্ব এজতেমার প্রায় সকল হোগলাপাটি নেওয়া হয় রাজপুর থেকেই।
বরুড়া সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে রাজপুর গ্রামের অবস্থান। গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে হোগলা পাতার গাছ। জমিতে ধান- পাটের পরিবর্তে হোগলাগাছ। ধান-পাট আবাদের চেয়ে হোগলাগাছ আবাদ লাভজনক পাইট্যা পরিবারের জন্য। কারণ এ হোগলা পাতা থেকে তাদের সারা বছরের কর্মসংস্থান হয়। হোগলাপাতার প্রায় ৫’শ বিঘা জমি রয়েছে রাজপুর গ্রামে। এলাকার মানুষ এ গ্রামকে পাইট্যাপাড়ার নামে চেনে।
রাজপুর গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়লো একজন, তার হোগলাপাতার জমিটি তদারকি করছেন। এলাকার হোগলাপাতার চাষ সর্ম্পকে তার কাছেই পাওয়া গেলো নানান তথ্য। সে মানুষটি হলো বরুড়া উপজেলার রাজপুর গ্রামের উষা সরকার। সে বলল হোগলাপাতার কথা। তাদের এ জমিতে হোগলাগাছ লাগানো হয়েছে কবে তা তিনি সঠিক ভাবে না বলতে পারলেও তিনি বলেন আমাদের দাদা-বড়দাদার আমল থেকে এ হোগলাপাতার চাষ শুরু হয়েছে। সে থেকে এ হোগলা শিল্পের সাথে জড়িত আমরাও। তা ছাড়া হোগলাগাছ একবার লাগানো হলে তা যুগের পর যুগ আর লাগাতে হয় না। প্রতিবছরই গাছ কাটা হয় এবং প্রকৃতির নিয়মেই আবার গজিয়ে ওঠে। রাজপুর গ্রামের তপন চন্দ্র সরকার জানালেন-এক বিঘা জমি থেকে সংগৃহীত হোগলাপাতা দিয়ে ৩’শ পাটি তৈরী করা যায়। যাদের জমি নেই তারা এক বিঘা জমির হোগলাপাতা ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় কিনে কাজ করে। প্রথমে জমি থেকে সংগ্রহ করা হয় হোগলাপাতা। বাড়িতে বসে পরিমাণ অনুযায়ী এ পাতা কেটে টুকরা করা হয়। এরপর পাতাগুলো রোদে শুকিয়ে তৈরী করা হয় হোগলাপাটি।
বরুড়ার রাজপুর গ্রামের ১৬শ’ পরিবার হোগলাপাতা চাষ করে পাল্টে দিয়েছেন এলাকার দৃূশ্যপট। হোগলাপাতা চাষ করে এখানকার অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার রাজপুরের গ্রামের মানুষের দেখাদেখি এখন বরুড়ার বেলাভোজ, লক্ষীপুর, শসইয়া, জাগুরিয়া, নিশ্চতপুর, বাগমারা, দেওড়া ও মধ্যমতলা এলাকার শত শত চাষী হোগলাপাতা আবাদ করে এখন সচ্ছল জীবন যাপন করছে। হোগলাপাতা চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছর চাষীর সংখ্যা বাড়ছে।
বরুড়া উপজেলার মধ্যলক্ষীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তপন ভৌমিক জানান, এ ইউনিয়নের প্রায় সকল মানুষ হোগলা শিল্পের সাথে জড়িত থাকার কারণে এ ইউনিয়নে চুরি-ডাকাতিসহ অন্যান্য সামাজ বিরোধী কোন কাজ হয় না। সবাই যার যার কাজ নিয়েই ব্যস্ত।
বাসস/সংবাদদাতা/০৯৩২/নূসী