বাসস দেশ-২০ : বাংলাদেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মান অর্জনে সঠিক অবস্থানে রয়েছে : বিশেষজ্ঞ

217

বাসস দেশ-২০
এআই-বাংলাদেশ
বাংলাদেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মান অর্জনে সঠিক অবস্থানে রয়েছে : বিশেষজ্ঞ
ঢাকা, ১৩ মার্চ, ২০২০ (বাসস) : ডিজিটাল দেশে পরিণত করার জন্য পরিষেবাকে ডিজিটাইজ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করায় বাংলাদেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মান অর্জনের ক্ষেত্রে সঠিক অবস্থানে রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইন্টেলিজেন্ট থ্রো ডিজাইন অটোমেশন, রিসার্চ এন্ড এক্সপেরিয়েন্স (আইডিএআরই)’র প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. খাইরুল চৌধুরী এক ই-মেইল সাক্ষাৎকারে বাসসকে বলেন, ‘এআই এর সম্ভাব্য মান ডিজিটাইজড ডেটার পরিস্থিতির উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। তাই এআই ব্যবহার করে ডাটা-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের এটাই সঠিক সময়। ’
এআই হলো মেশিন, বিশেষত কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে মানব বুদ্ধিমত্তার সিমুলেশন।
তিনি বলেন, ‘এআই’র ব্যবহার মানুষ, শিল্প ও সংস্থার জন্য ব্যয়, সময় ও সম্পদকে অনুকূল করে তোলে।’
বাংলাদেশ-বংশোদ্ভূত মার্কিন এই প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি ‘বিগ ডাটা টু অ্যাকশনেবল ইন্টেলিজেন্স: বাংলাদেশের জন্য একটি সলিউশন রোডম্যাপ’ শীর্ষক একটি গবেষণা তদারকি করেছিলেন, যেখানে তথ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশদ জরিপ করা হয়।
সমীক্ষা অনুযায়ী, সরকার ১২টি ডিজিটাল উদ্যোগ নিয়েছে, যা জনসংখ্যা, আর্থিক, আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা ও পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত ৬০০ টেরাবাইট (টিবি) উপাত্ত তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, এটি উল্লেখযোগ্য যে, গত বিশ বছর ধরে ডিজিটাল ডাটা নির্ভর ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের দেশগুলো মাত্র কয়েক বছর আগে ডাটা-নির্ভর সিদ্ধান্ত নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যদি এখনই কার্যকর সিদ্ধান্ত নিয়ে এআই ব্যবহার শুরু করতে পারে, তবে তারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব থেকে দূরে থাকবে না।
তিনি বলেন, আমি আশা করি যে, এআই ব্যবহার শুরু করলে বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশের তুলনায় এগিয়ে থাকবে।
এআই এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে কী পরিবর্তন আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে কোনও অর্থনীতির জন্য অনিশ্চয়তা হলো লোকসান বা প্রবৃদ্ধির সীমাবদ্ধতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন অর্থনীতিবিদ এটি আরও ভাল বলতে পারবেন।
তিনি বলেন, ‘এআই যা নিয়ে আসে তা হলো ভবিষ্যতের অনুমানযোগ্যতা বা আরও ভাল দৃশ্যমানতা, যা একটি যুগান্তকারী সাফল্য। এই পূর্বাভাসযোগ্যতা সম্পদের আরও উত্তম ব্যবস্থাপনা করতে সহায়তা করে, যা সীমিত সম্পদের বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির চাবিকাঠি।’
বাংলাদেশে এআই এর জন্য কোন সেক্টরগুলো অত্যন্ত সম্ভাবনাময় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতই এআই এর পক্ষে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং আশ্চর্যজনকভাবে, সরকারি খাতগুলো খুব ভাল অবস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এজন্য বর্তমান সরকারের প্রশংসা করতে হবে। সুতরাং, এআই ব্যবহার করে সরকার পরিচালনা করা খুব উচ্চ সম্ভাবনাময়।’
আইটি বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ডেঙ্গুর মতো সংক্রামক ব্যাধি মোকাবেলা, স্বাস্থ্যখাতে ভবিষ্যদ্বাণী, বিদ্যালয়ের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, ট্র্যাফিক জ্যাম নির্মূলের জন্য স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাফিক আইন প্রয়োগ, শিল্পের জন্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং বিদ্যুতের চাহিদার পূর্বাভাস এবং উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের মতো উন্নততর প্রশাসন এই সকল খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভূত রিটার্ন আসতে পারে।
অর্থনীতিতে এআই এর সম্ভাব্য সীমাবদ্ধতা বা অসুবিধা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলোতে কখনও কখনও চাকরির ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দেয়, যেখানে কাজের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে অত্যন্ত দক্ষ, তবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে উচ্চ দক্ষতা-সম্পন্ন শ্রমিকের অভাব রয়েছে।
তিনি যোগ করেন, ‘এ ক্ষেত্রে, এআই প্রচুর পরিমাণে প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মানুষের শক্তি বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।’
চৌধুরী অবশ্য বলেন, মূল উদ্বেগ চাকরির ক্ষতি নয় বরং এআইয়ের ভুল প্রয়োগ, যা অত্যন্ত গুরুতর বিষয়।
তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘এআই আগুনের মতো, যদি কেউ উচ্চ দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা প্রয়োগ না করে, তবে এটি পুরো জিনিসটিকে পোড়াতে পারে এবং এটি বিপর্যয়কর হতে পারে। সুতরাং, এআই কেবল বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রয়োগ করা উচিত।
আইডিএআরই থেকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কাজের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ই-গভর্নেন্সে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারা বিরাট আনন্দের বিষয়।
তিনি বলেন, আইডিএআরআই পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি খাতে বিশ্লেষণ করতে শুরু করেছে যেমন – বেনবেইসের জন্য এআই ব্যবহার করে শিক্ষা খাতে রিসোর্স ম্যানেজিং, ডেঙ্গু ট্র্যাকিং ও ভবিষ্যদ্বাণী, এবং এটুআই’র সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভিজ্যুয়াল অ্যানালিটিক্স।

তিনি বলেন, আইডিআরএর ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণ গণনা সিস্টেম ঢাকা ও কুমিল্লার জন্য এসএসসি পরীক্ষায় ব্যর্থতার পিছনে কিছু মূল বিষয় সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল এবং ৯৬ শতাংশ নির্ভুলতার সাথে বিদ্যালয়ের পাসের হারের পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হয়।
তিনি বলেন, এ ধরনের নির্ভুলতা স্কুলের কার্য-সম্পাদনাকে উন্নত করতে কার্যকরভাবে সম্পদ ব্যবহারে আর্কিটেকচার তৈরিতে সহায়তা করে।
তিনি বলেন, আইডিএআরই ডেঙ্গু ট্র্যাক করার জন্য একটি ভিজ্যুয়াল অ্যানালিটিক্স প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে এবং বর্তমানে এআই ব্যবহার করে ডেঙ্গুর পূর্বাভাস মডেল তৈরি করছে।
অন্য প্রচেষ্টায় আইডিএআরআই দুর্যোগ ও এর ব্যবস্থাপনার জন্য ভিজ্যুয়াল অ্যানালিটিক্স ড্যাশবোর্ড সরবরাহ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তবে তিনি বলেন, সকল প্রযুক্তি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে এবং এটি প্রয়োগের জন্য পরিপক্কতার প্রয়োজন রয়েছে।
বাসস/এমকেডি-কেইউসি/অনুবাদ-এইচএন/২১২৫/-শআ