বাসস ক্রীড়া-৩ : ইলিসিচের চার গোলে নাটকীয় ভ্যালেন্সিয়াকে হারিয়ে শেষ আটে আটালান্টা

127

বাসস ক্রীড়া-৩
ফুটবল-চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
ইলিসিচের চার গোলে নাটকীয় ভ্যালেন্সিয়াকে হারিয়ে শেষ আটে আটালান্টা
ভ্যালেন্সিয়া, ১১ মার্চ ২০২০ (বাসস) : চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আটালান্টার রূপকথার কাহিনী আরো একধাপ এগিয়ে গেছে। প্রথমবারের মত খেলতে এসেই শেষ আট নিশ্চিত করে ফেলেছে সিরি-এ লিগে দুর্দান্ত পারফরমেন্স দেখানো এই ইতালিয়ান ক্লাবটি। মঙ্গলবার ৭ গোলের নাটকীয় ম্যাচে আটালান্টার স্লোভেনিয়ান অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার একাই করেছেন চার গোল। আর তার এই চার গোলে ভ্যালেন্সিয়াকে শেষ ১৬’র দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে ৪-৩ গোলে পরাজিত করে দুই লেগ মিলিয়ে ৮-৪ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে আটালান্টা।
মেস্তালা স্টেডিয়ামে করোনাভাইরাস আতঙ্কে দর্শকের উপস্থিতি নিষিদ্ধ ছিল। যে কারনে ভ্যালেন্সিয়ার ৫৫ হাজার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ঐতিহ্যবাহী এই স্টেডিয়ামে প্রতিটি আসনই ছিল শুন্য। দুইবার পিছিয়ে পড়েও এগিয়ে যাওয়া ভ্যালেন্সিয়াকে সমর্থন যুগিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে তাই কেউ সহযোগিতা করতে পারেনি।
ইতালিতে প্রথম লেগে ৪-১ গোলে পরাজিত হবার পরেই মূলত ভ্যালেন্সিয়ার বিদায় রচিত হয়ে গিয়েছিল। তার উপর গতকাল মাত্র ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে ফরাসি ডিফেন্ডার মুকটার ডিয়াখাবির ফাউল থেকে প্রাপ্ত পেনাল্টিতে ইলিসিচ গোল করে আটালান্টাকে এগিয়ে দিলে সব আশাই শেষ হয়ে যায়। যদিও ২১ মিনিটে কেভিন গামেইরোর গোলে স্বাগতিকরা সমতা এনেছিল। বিরতির ঠিক পরপরই গামেইরো ও ফেরান টোরেসের গোলে ভ্যালেন্সিয়া কিছুটা হলেও জয়ের আশা জাগিয়ে তুলেছিল। ৭১ মিনিটে ইলিসিচের হ্যাটট্রিক ও ৮২ মিনিটে চতুর্থ গোলে শেষ পর্যন্ত আটালান্টার জয় নিশ্চিত হয়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক আউট পর্বে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এ্যাওয়ে ম্যাচে চার গোল করার কৃতিত্ব গড়েছেন ইলিসিচ।
অথচ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথমবারের মত খেলতে আসা আটালান্টার শুরুটা মোটেই সুখকর হয়নি। গ্রুপ পর্বে প্রথম তিনটি ম্যাচে সবকটিতেই পরাজিত হয়ে তারা বিদায়ের ক্ষন গুনছিল। ক্লাবের ইতিহাসে ১১৩ বছর পর তারা ইউরোপের সর্বোচ্চ আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
ম্যাচ শেষে আটালান্টার কোচ গিয়ান পিয়েরো গাসপেরিনি বলেছেন, ‘কঠিনভাবে প্রতিযোগিতা শুরুর পর আমরা নিজেদের প্রমান করেছি। এখন শুধু এগিয়ে যাবার পালা।’
প্রথমদিকে ভ্যালেন্সিয়া সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে দর্শকদের চিৎকার বাজালেও পরবর্তীতে পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় তা বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু এটা দিয়ে তো আর প্রকৃত পরিবেশ ফুটিয়ে তোলা সম্ভব না। পুরো মাঠে কেবলমাত্র খেলোয়াড়দের আওয়াজই শোনা গেছে। ম্যাচের আগে অবশ্য টিম বাসকে স্বাগত জানানোর জন্য ভ্যালেন্সিয়ার সমর্থকরা স্টেডিয়ামে বাইরে জড়ো হয়েছিল। কিন্তু কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আটালান্টা ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় বারগামোর শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতালির এই প্রদেশেই সবচেয়ে বেশী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেস পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত ইতালিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে।
ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে আটালান্টার খেলোয়াড়রা জার্সি তুলে নীচের ইনারে লেখা একটি বার্তা প্রদর্শন করে। যেখানে লেখা ছিল, ‘বারগামো, এটা তোমাদের জন্য।’
গাসপেরিনি বলেছেন, ‘আক্রান্ত প্রদেশটির জন্য কিছুটা একটা করতে পেরে আমরা দারুন খুশী।’
স্প্যানিশ সরকার সোমবার জানিয়েছে মাদ্রিদের সকল স্কুল আপাতত বন্ধ থাকবে। ইতোমধ্যেই লা লিগা থেকে ঘোষনা এসেছে আগামী দুই সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য সবগুলো ম্যাচই দর্শকশুন্য স্টেডিয়ামে খেলা হবে। যদিও খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে লা লিগা বন্ধ করে দেবার অনুরোধ এসেছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গতকাল ম্যাচ শুরুর দুই মিনিচের মধ্যেই ইলিসিচকে ডি বক্সের মধ্যে ফাউল করে বসেন ডিয়াখাবি। এর ফলে প্রাপ্ত পেনাল্টি থেকে মৌসুমের ১৮তম গোল করেন এই স্লোভেনিয়ান। আটালান্টার মধ্যমাঠের ভুলে রডরিগোর সহযোগিতায় ২১ মিনিটে সমতা ফেরান গামেইরো। বিরতির ঠিক আগে ডিয়াখাবির হ্যান্ডবলে প্রাপ্ত পেনাল্টি থেকে আবারো আটালান্টাকে এগিয়ে দেন ইলিসিচ। ৫১ মিনিটে টোরেসের ক্রস থেকে হেডের সাহায্যে ২-২ গোলে সমতা ফেরান গামেইরো। ৬৭ মিনিটে আটালান্টার গোলরক্ষক মার্কো স্পোর্টিয়েলোর মাথার উপর দিয়ে বল জালে প্রবেশ করিয়ে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন টোরেস। কিন্তু চার মিনিট পর ইলিসিচ হ্যাটট্রিক পূর্ণ করলে ভ্যালেন্সিয়ার সামনে পরাজয় সময়ের ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়। ৮২ মিনিটে নিজের চতুর্থ গোল করে আটালান্টাকে বড় জয় উপহার দেন ইলিসিচ।
বাসস/এএফপি/অনু/নীহা/১৬১৫/স্বব