ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে দর্শকশুন্য স্টেডিয়ামে চাপে থাকবে পিএসজি

184

প্যারিস, ১০ মার্চ ২০২০ (বাসস) : বিশ্বব্যাপী চলমান করোনাভাইরাস আতঙ্কে ঘরের মাঠ পার্ক ডি প্রিন্সেসে দর্শক ছাড়াই বরুসিয়া ডর্টমুন্টের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ১৬’র দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে বুধবার মাঠে নামতে হচ্ছে ফরাসি জায়ান্ট প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইকে। ডর্টমুন্ডের মাঠে প্রথম লেগে ২-১ গোলে পরাজিত পিএসজি যে স্বাগতিক সমর্থকদের সমর্থন ছাড়া শতভাগ চাপে থাকবে তা নি:সন্দেহে বলা যায়।
সিগন্যাল ইডুনা পার্কে দুই সপ্তাহ আগে নরওয়ের ১৯ বছর বয়সী এ্যাটাকার আর্লিং হালান্ডের কাছে পরাস্ত হয়েছিল পিএসজি। ম্যাচে দুটি গোলই করেছিলেন ডর্টমুন্ডের এই তরুন তুর্কি। জার্মানীর ৮০ হাজার সমর্থক তাদের দলকে যেভাবে সমর্থন যুগিয়েছিলেন তার পুরোটাই কাল মিস করবে পিএসজি। যে কারনে আরো একবার নক আউট পর্বের প্রথম রাউন্ডেই বিদায়ের হুমকিতে রয়েছে প্যারিসের জায়ান্টরা। আর সেটা হলে টানা চতুর্থবারের মত শেষ ১৬ থেকে বিদায় নিবে পিএসজি।
প্রায় ৫০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে যেখানে ম্যাচটি আয়োজনের কথা ছিল সেখানে দর্শকশুন্য মাঠে ৬ মিলিয়ন ইউরোর আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছে স্থানীয় আয়োজক কমিটি। যদিও ক্লাবটির বিশেষ সমর্থকদের স্টেডিয়ামের বাইওেরসমবেত হবার আহবান জানানো হয়েছে। তারপরেও স্বাগতিক দল হিসেবে নিজেদের মাঠে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে পিএসজি।
প্রথম লেগে পরাজয়ের পর অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা ও দলের দুই সুপারস্টারের বিপক্ষে সমর্থকরা ব্যানারে লিখেছিল, ‘সিলভা, এমবাপ্পে ও নেইমার জয়ী হতে ভয় পায়।’
গত আট মৌসুমে টানা সপ্তমবারের মত লিগ ওয়ান শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ভালভাবেই এগিয়ে রয়েছে পিএসজি। সে কারনে বলতেই হয় ফরাসি লিগে পিএসজির একচেটিয়া আধিপত্য চোখে পড়ার মত, যা ঘরের বাইরে দেখা যায়না। এখানেই ঘরোয়া লিগ ও উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মধ্যে পার্থক্য। ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোর লড়াইয়ে মূলত নিজেকে সেরা প্রমান করাটা সত্যিই কঠিন কাজ।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে গত মৌসুমে পিএসজির রাজস্ব আয় হয়েছে ৬৩৬ মিলিয়ন ইউরো। এ কারনে ক্লাবটিকে বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও বায়ার্ন মিউনিখের পরে বিশ্বের পঞ্চম ধনী ক্লাব হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
গত তিন মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে পিএসজির বিদায়টা খুব একটা সুখকর হয়নি। ২০১৭ সালে প্রথম লেগে ৪-০ গোলে জয়ী হবার পরে দ্বিতীয় লেগে বার্সেলোনার কাছে ৬-১ গোলে পরাজিত হয়ে বিস্ময়করভাবে বিদায় নিতে হয়েছিল। এরপর তারা ৪০০ মিলিয়ণ ইউরো ব্যয় করে নেইমার ও এমবাপ্পেকে দলে ভেড়ায়। এই চুক্তি বিশ্বের ক্লাব ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলবদলের রেকর্ড গড়ে। কিন্তু ইনজুরির কারনে ২০১৮ সালে নেইমার মাদ্রিদের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে খেলতে পারেননি। এরপর গত বছর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে উভয় লেগেও তিনি দলে বাইরে ছিলেন।
আট বছর আগে কাতারী ধনকুবেরের কাছে ক্লাবের মালিকানা যাবার পর থেকে পিএসজি নক আউট পর্বে মাত্র তিনবার জয়ী হয়েছে। ভ্যালেন্সিয়া, বায়ার লিভারকুসেন ও চেলসিকে দুইবার পরাজিত করে তারা এগিয়ে গিয়েছিল। ক্যানাল প্লাসের সাথে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাতকারে পিএসজির স্পোর্টিং পরিচালক লিওনার্দো বলেছেন, ‘এটা জীবন-মৃত্যুর কোন বিষয় নয়। পরাজিত হলে আগামী বছরের জন্য চেস্টা করবো। সব ধরনের নেতিবাচক দিকগুলো আমাদের বন্ধ করতে হবে। আমাদের দলটি চমৎকার, এখানকার খেলোয়াড়রাও অসাধারন।’
ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ম্যাচটির উপর কার্যত নেইমার ও এমবাপ্পের ভবিষ্যত কিছুটা হলেও নির্ভর করছে। ২০১৬ সালের পর তারা যদি পিএসজিকে প্রথমবারের মত কোয়ার্টার ফাইনালের জায়গা উপহার দিতে পারে তবে বিষয়গুলো একটু হলেও হালকা হবে। কারন তখন শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখাও শুরু হয়ে যাবে।
কোচ থমাস টাচেলের সাথে পিএসজির বর্তমান চুক্তিটি ২০২১ সাল পর্যন্ত রয়েছে। এই সময় পর্যন্ত দলে রয়েছেন উনাই এমেরি ও লরেন্ট ব্ল্যাঙ্ক। সে কারনেই ইউরোপীয়ান আসরে আরো একটি হতাশাজনক পারফরমেন্সের আগে দলকে নিয়ে টাচেলের বাড়তি চিন্তা অবশ্যই রয়েছে। কারন প্রথম লেগে পরাজয়ের পর টাচেলও চাপে রয়েছেন। তবে দলের ভাগ্য অনেকটাই যার উপর নির্ভরশীল সেই নেইমারের কাছ থেকে বড় কোন পারফরমেন্সই আশা করছেন টাচেল। এবারের মৌসুমে ৩০ গোল করা এমবাপ্পেও যেন কালকের ম্যাচে বাড়তি কিছু করে দেখাতে পারে সেটাই এখন সংশ্লিষ্ঠদের প্রত্যাশা।