বাজিস-১ : বরগুনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নৈতিক, মানবিক ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা চর্চা

220

বাজিস-১
বরগুনা- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
বরগুনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নৈতিক, মানবিক ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা চর্চা
বরগুনা, ৯ মার্চ, ২০২০ (বাসস) : জেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নৈতিক, মানবিক ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ক শিক্ষা ও চর্চার সুন্দর পরিবেশ তৈরী হয়েছে।
জেলার ১২টি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক পরিচালনা করছে ‘সততা সংঘ’ ও ‘সততা স্টোর’। ১০টি স্কুল ও কলেজে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এনএসএস স্থাপন করে দিয়েছে মানবিক কর্নার এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষে বরগুনা জেলা প্রশাসন ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে মেয়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু করা হয়েছে ‘নন্দিনী হাইজিন কর্ণার’। উদ্যোক্তরা জানিয়েছেন জেলার মাধ্যমিক স্তরের মোট ৩০৫টি স্কুলসহ পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
‘নন্দিনী হাইজিন কর্ণার’ এর মাধ্যমে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের (ছাত্রী) পিরিয়ডকালীন ব্যবস্থাপনা ও ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিছন্নতার অভ্যাস গড়ে তোলাসহ বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন করা চলছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে জেলার ৩০৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নন্দিনী হাইজিন কর্ণার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি বিদ্যালয়ে কর্ণার করা হয়েছে। সেখানে স্যানিটারি ন্যাপকিন, ফার্স্ট এইড, আয়রন বড়ি রাখা হয়েছে। এছাড়া একটি ঢাকনাওয়ালা ঝুড়িও রয়েছে। এ কর্ণার স্থাপনের ব্যয় বহণ করবে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। এ কর্মসূচির মাধ্যমে ইউনিসেফের সহায়তায় প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে একজন ছাত্রী (নন্দিনী গার্ল), একজন ছাত্র (নোবেল বয়), একজন শিক্ষক, প্রধান শিক্ষকসহ ১২২০ জনকে বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষিতরা বিদ্যালয়ের বাকি শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেবে।
‘নন্দিনী হাইজিন কর্ণার’ কর্মসূচির সমন্বয়ক বরগুনা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, সার্ভে অন পার্সোনাল মিনস্ট্রুয়াল হাইজিন ম্যানেজমেন্ট শীর্ষক জরিপে দেখা গেছে, পিরিয়ডের সময় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮১ শতাংশ ও দাখিল মাদ্রাসার ৮৩ শতাংশ ছাত্রী পুরোনো কাপড় ব্যবহার করে। এ সময়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮৪ শতাংশ ও মাদ্রাসার ৮৬ শতাংশ ছাত্রী শ্রেণীকক্ষে অনুপস্থিত থাকে। মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়গুলোয় মেয়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রথমবারের মতো নন্দিনী হাইজিন কর্ণার স্থাপন করা হচ্ছে। এর আগে শিক্ষার্থীরা এমনকি শিক্ষকরাও শ্রেণীকক্ষে পিরিয়ড ও বয়ঃসন্ধিকালীন বিষয় নিয়ে কথা বলতে সংকোচ বোধ করতেন। জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগে এখন খোলামেলা কথা বলার পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানিয়েছেন, বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তুলতে হাইজিন কর্ণার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির সুস্বাস্থ্য, মানসম্মত শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা অর্জন, শান্তি ন্যায়বিচার, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসহ বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নন্দিনী হাইজিন কর্মসূচি সহায়তা করবে।
দুদক পটুয়াখালী-বরগুনা সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিকতা চর্চার জন্য জেলার ৩০৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সততা সংঘের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় সাড়ে চার হাজার টাকা করে অর্থ বরাদ্দ প্রদান করে কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুদকের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে সততা স্টোর। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু হওয়া সততা স্টোর হলো বিক্রেতা বিহীণ ও অলাভজনক বিক্রয় কেন্দ্র। এখানে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মালামাল ও খাবার বিক্রি হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীরা মালামাল ক্রয় করে নিজ উদ্যোগে ক্রয়মূল্য সততা স্টোরে রেখে আসে।
বরগুনার জেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদ মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, নৈতিকতা না থাকলে দুর্নীতি বন্ধ করা যায় না। তাই দমন কর্মসূচীর পাশাপাশি দুদকের নৈতিকতা চর্চার এ প্রয়াস অত্যন্ত ফলপ্রসু হবে বলে আশা রাখি।
মাধ্যমিক স্তরের পাশপাশি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মানবিক সহায়তা প্রদানে উন্নয়ন সংস্থা এনএসএস প্রতিষ্ঠা করছে ‘মানবিক কর্ণার’। আমতলী উপজেলার বকুল নেছা মহিলা কলেজ, চাওড়া কারিগরি কৃষি কলেজ, এমইউ বালক বিদ্যালয়সহ ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানবিক কর্ণারের মাধ্যমে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উপকরণ পাচ্ছে, জানালেন, প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও শিক্ষার্থীরা।
এনএসএস এর নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. শাহাবুদ্দিন পান্না জানিয়েছেন, আর্থিক সহায়তা দিয়ে উদ্যোগটা আমাদের। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, দানশীল ব্যক্তিবর্গ ও সচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহায়তায় মানবিক কর্ণারের কার্যক্রম অব্যাহত থাকছে।
বাসস/সংবাদদাতা/০৯৩৯/নূসী