বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : দেশের সার্বিক উন্নয়নে গবেষণার মাধ্যমে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের আহবান প্রধানমন্ত্রীর

124

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ
দেশের সার্বিক উন্নয়নে গবেষণার মাধ্যমে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের আহবান প্রধানমন্ত্রীর

আইয়ুব সরকারের সময় করে যাওয়া (পাকিস্তানের মার্শাল ল’ সরকার) স্কুলের নবম শ্রেনী থেকেই বিজ্ঞান, কলা এবং পরবর্তীতে বাণিজ্য শাখায় বিভাজনের বিষয়টি স্কুলে না রাখার বিষয়ে তাঁর নিজস্ব অভিমত পূণর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত। কারণ, শুরু থেকেই বিজ্ঞান চর্চাটা থাকা দরকার। আমাদের শিক্ষার্থীরা সব বিষয়েই জানবে এবং এসএসসি পাশ করার পর তাঁরা তাঁদের বিষয়টা ভাগ করে নেবে কোন বিষয়ে সে বিশেষায়িত হবে, জ্ঞান লাভ করবে।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ব্যক্তি জীবনের একটি অভিজ্ঞতার উদাহারণ টেনে বলেন, আমি চাই স্কুলে আর এই ভাগটা থাকবে না, স্কুলে যারা যাবে তারা সব পড়বে। কলেজে যেয়ে তারপর ভাগ হবে। সেটাই আমি করতে চাই এবং এজন্য আমি আপনাদের সমর্থনের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিজ্ঞানীদের সমর্থনটা সবসময় দরকার হয়, বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অতীতের দুঃসময়ের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে সকলে অবহেলার চোখে দেখতো সেখানেই আমরা সিদ্ধান্ত নেই বাংলাদেশকে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বাংলাদেশ বিজয়ী দেশ। সেই দেশকে কেউ অবহেলার চোখে দেখবে এটা কখনো মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, সে কারণেই সকল প্রচেষ্টা চালিয়েছি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের সাথে সাথে শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষায় আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা যেন এগিয়ে যেতে পারে এবং ভূমিকা রাখতে পারে সেই সুযোগটা সৃষ্টি করার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশকে আর কেউ অবহেলার চোখে দেখতে পারে না কারণ, কারো কাছে হাত পেতে আমরা চলি না।
তিনি বলেন, আমরা বাজেট ৭ গুণ বৃদ্ধি করেছি, স্বাক্ষরতার হার ৭৩ ভাগে বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা প্রযুক্তি শিক্ষায় এগিয়েছি, বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছি, সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় বিষয় ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি, সেটা গবেষণার জন্যই সম্ভব হয়েছে। দেশে আজ স্ট্রবেরিসহ নানারকম ফলমূল এবং বিভিন্ন মওসুমী তরিতরকারীর সারাবছরই চাষাবাদ হচ্ছে। আমরা যে হাইব্রিড ধান উৎপাদন করেছি, সেটাও গবেষণার ফসল। বিশ্বে এখন মিঠা পানির মৎস উৎপাদনে আমরা তৃতীয় এবং সব্জী উৎপাদনেও এগিয়ে গেছি।
তিনি বলেন, অনেকেই এক সময় এর বিরোধিতা করেছেন। আমি জানি আমাদের ১৬ কোটির ওপরে মানুষ কিন্তু জায়গা কম। কাজেই আমাদের ফসল উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার আগে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এবং এখন পুষ্টি নিশ্চয়তার দিকে নজর দিয়েছে।
তিনি জাতির পিতার অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর দেশের মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে জাতির পিতা কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ তিনি গড়ে তুলছিলেন। তারপরেও এই দিকটা ভোলেন নাই। কারণ, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন।’
প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর যেকোন দেশের চাইতে আমাদের ছেলে-মেয়েদের মেধাবী আখ্যায়িত করে বলেন, ‘এটা হলো বাস্তবতা। কারণ, আমি পৃথিবীর বহুদেশ ঘুরেছি এবং অনেক দেশের বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলে এবং মিশে দেখেছি। আমাদের ছেলে-মেয়েরা একটু সুযোগ পেলে অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারে।’ কাজেই শিক্ষাক্ষেত্রে সে সুযোগ সৃষ্টি করাটাই তাঁর সরকার কাজ বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি এই ছেলে-মেয়েদের দেশকে ভালবেসে দেশের কল্যাণে কাজ করা এবং পিতা-মাতা-শিক্ষকের কথা মেনে চলে লেখাপড়ায় মনযোগ দিয়ে নিজেদেরকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শিশুদের জন্য শুধু লেখাপড়া নয়, খেলাধূলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজস্ব মেধার স্বতস্ফূর্ত স্ফূরণ ঘটাতে হবে।
আর যেন বাংলাদেশ থমকে না দাঁড়ায় সে দায়িত্ব দেশের বিজ্ঞানীদের নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের শিশুদের যেন আমাদের মতো ভুগতে না হয়। তারা যেন একটা সুন্দর ভবিষ্যত, একটা সুন্দর দেশ পায়। বিশ্বের দরবারে যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারে। বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী দেশ, এই পরিচয়ে যেন বসবাস করতে পারে ।’ সেজন্য তাঁর সরকার নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘গ্রামের অর্থনীতিকে আমরা আরও শক্তিশালী করছি। গ্রামের অর্থনীতি যত শক্তিশালী হবে বাংলাদেশ তত এগিয়ে যাবে।’
বাসস/এএসজি-এফএন/১৬৪৮/আরজি