বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে ৫ দফা নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর

139

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-এসএমই মেলা
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে ৫ দফা নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর

পণ্য উৎপাদন, বাজারজাত, নতুন বাজার সৃষ্টিসহ এসএমই সংশ্লিষ্ট শিল্পের সকল ক্ষেত্রে গবেষণার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে গবেষণাটা একান্তভাবে প্রয়োজন। গবেষণার মধ্যদিয়ে আমরা যেন পণ্য চাহিদা, পণ্য উৎপাদন এবং পণ্য বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করতে পারি, সেটা আমরা করবো।’
তিনি এসময় এসএমই ফাউন্ডেশনকে গবেষণায় গুরুত্ব দেওয়ারও নির্দেশ প্রদান করেন।
তাঁর সরকার সবসময় এসএমই ফাউন্ডেশনকে গুরুত্ব দিলেও ‘এখানে উদ্যোক্তার সংখ্যা আশানুরূপ নয়,’ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, তাঁর আজকের অনুষ্ঠানে আসার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে এসএমই’তে যারা কাজ করবেন এবং ঋণ নেবেন তাঁদের উৎসাহিত করা। কারণ, এর মাধ্যমেই দেশকে বিরাটভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসএমই ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে সারাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ১৭৭টি ক্লাস্টার চিহ্নিত করেছে এবং উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, স্বল্পসুদে অর্থায়ন, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।’
এসব ক্লাস্টারের উন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত সুবিধাদি বৃদ্ধির জন্য যা যা প্রয়োজন সেসব ধরনের সহায়তাও তাঁর সরকার প্রদান করবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ব্যাংক ঋণে সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনাকেও গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে বিষয়টির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর ফলে আগামীতে নারী উদ্যোক্তাসহ এসএমইখাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তিতে সুবিধা হবে।’
উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সরকারের বিনাজামানতে ব্যাংক ঋণ কর্মসূচির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে বিনাজামানতে সরকার নবীন উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা প্রদান করছে। এসএমই ফাউন্ডেশন থেকেও ঋণ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজস্ব বাজার সৃষ্টি করতে হবে। সেই সাথে সাথে নতুন নতুন বাজার অন্বেষণ করতে হবে। কোথায় আমরা নতুন বাজার পেতে পারি, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি সেটা খুঁজে বের করা এবং সেই ধরনের পণ্য উৎপাদন করা। সেই উদ্যোগ নিতে হবে।’
পণ্য বাজারজাতকরণে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধান করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাজারজাত করা একটা সমস্যা। সে জন্য বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা নিতে হবে।’
একইসঙ্গে কাঁচামাল প্রাপ্তি নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলবো তার যে কাঁচামাল তার চাহিদা কিভাবে পূরণ হবে সেটা আমাদের দেখতে হবে, এই কাঁচামাল প্রাপ্তি ও নিশ্চিত করতে হবে।’
ফ্যাশন ডিজাইন এবং পণ্য উৎপাদনে ঋতু বৈচিত্রের বিষয়টি মাথায় রাখার ওপর ও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ-বিদেশে সবখানেই সবাই দক্ষ জনশক্তি চায়। সেই দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ১৯৫৬ সালে বাণিজ্য, শিল্প, শ্রম ও ভিলেজ এইড মন্ত্রী ছিলেন। তিনি মাত্র আট মাস এ দায়িত্ব পালন করেন। তারপর মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলকে শক্তিশালী করার কাজে মনোনিবেশ করেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প আইন (১৯৫৭) প্রণয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন এবং দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টির পূর্বেই ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন।
জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে এসএমই শিল্প বিকাশে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
সরকার প্রধান বলেন, তাঁর সরকার শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র আইন (২০১৯), শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আইন (২০১৮), স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন আইন (২০১৮), ট্রেডমার্ক (সংশোধনী) আইন (২০১৫), ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য আইন (২০১৩)-সহ নানাবিধ আইন প্রণয়ন করেছে।
একইসঙ্গে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে শহরের সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দিতে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরো বলেন,‘আমাদের সরকার গৃহীত এসএমই নীতি (২০১৯), জাতীয় শিল্পনীতি (২০১৬), বিভিন্ন পণ্য উন্নয়ন নীতিমালা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার নীতিমালা (২০১৯), জাতীয় উদ্ভাবন ও মেধাসম্পদ নীতিমালা (২০১৮) সহ অন্যান্য কর্মসূচি গ্রহণের ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদান ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।’
বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষ উদযাপন এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকে কেন্দ্র করে তাঁর সরকারের ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে নানা আয়োজনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবন, দর্শন ও আত্মত্যাগের ইতিহাস স্মরণ করা হবে।’
২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেশ গড়ে তুলতে এ সময় তিনি সকলের সহযোগিতারও কামনা করেন।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৬২০/আরজি