সাগর-রুনি হত্যা: সন্দেহভাজন তানভীরের আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ

164

ঢাকা, ৪ মার্চ, ২০২০ (বাসস): সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার ‘সন্দেহভাজন’ তানভীর রহমানের আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়টির শুনানিতে হাইকোর্ট বেঞ্চের এখতিয়ার নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তির প্রেক্ষিতে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন।
আজ শুনানির শুরুতে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা ও সন্দেহভাজন তানভীর বিষয় সংক্রান্ত র‌্যাবের দেয়া প্রতিবেদন আদালতে পেশ করেন রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, এ মামলা বাতিলের তানভীরের আবেদনটি যখন করা হয় তখন এই বেঞ্চের ক্রিমিনাল জুরিসডিকশন (ফৌজদারি এখতিয়ার) ছিল। কিন্তু জুরিসডিকশন চেঞ্জ হয়ে এখন এই বেঞ্চের রিট জুরিসডিকশন রয়েছে। তাই এই আদালত এ বিষয়ে এখন আদেশ দেয়ার এখতিয়ার রাখেন না।
এ সময় আদালত বলেন: ‘রুলস অনুযায়ী, কোন বেঞ্চ একটি জুরিসডিকশন থাকা অবস্থায় কোনো মামলার রুল এবং আদেশ দিলে, পরবর্তীতে ওই জুরিসডিকশন চেঞ্জ হলেও চলমান মামলাটির ক্ষেত্রে আদেশ দিতে পারেন। সেই বিবেচনায় এ বিষয়ে আমাদের এখতিয়ার রয়েছে। তবে যেহেতু রাষ্ট্রপক্ষ এক্ষেত্রে আমাদের এখতিয়ার নিয়ে আপত্তি তুলেছেন তাই আমারা (তানভীরের মামলা বাতিলের) বিষয়টি আমাদের বেঞ্চের কার্যতালিকা থেকে বাদ দিচ্ছি।
আদালতে তানভীরের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।
সাগর-রুনি হত্যায় সন্দেহভাজন হিসেবে অভিযোগ ওঠা তানভীর রহমান নামের এক ব্যক্তির করা মামলা বাতিলের আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন। সে অনুযায়ী গত ১১ নভেম্বর হাইকোর্টে হাজির হন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শফিকুল আলম। সেদিন এ কর্মকর্তা হাইকোর্টকে বলেন: ‘তদন্ত চলছে। চারটি ডিএনএর নমুনা এফবিআইয়ের সনদপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে দুটি নমুনা আসামিদের সঙ্গে মেলেনি। বাকি দুটি নমুনা প্রকাশিত হয়নি। যে কারণে নমুনা পুনরায় এফবিআইয়ের সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। এরপর হাইকোর্ট সন্দেহভাজন হিসেবে আটক মো. তানভীর রহমান ও এ মামলার তদন্ত সংক্রান্ত বিষয়ে আদেশের জন্য ১৪ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। সে ধারাবাহিকতায় গত ১৪ নভেম্বর হাইকোর্ট তার এক আদেশে সন্দেহভাজন তানভীর রহমানের বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। সেই সাথে তানভীর রহমানকে নিম্ন আদালতে স্বশরীরে হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। তবে আইনজীবীর মাধ্যমে তাকে হাজিরা দিতে বলা হয়।
এরপর হাইকোর্ট সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সর্বশেষ অবস্থার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়ে এ বিষয়ে আদেশের জন্য ৪ মার্চ দিন ধার্য করেন।
সে অনুযায়ী আজ হাইকোর্টে সাগর-রুনি হত্যার তদন্তের যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাড়িতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। সাগর মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। এই হত্যাকান্ডের সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ। এই হত্যাকান্ডের পর সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এ মামলায় মোট আটজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলেন রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মো. সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান ওরফে অরুণ, সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল, পলাশ রুদ্র পাল এবং নিহত দম্পতির বন্ধু তানভীর রহমান। এদের মধ্যে প্রথম পাঁচজনই মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র হত্যার ঘটনায় র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেফতার হন। প্রথম পাঁচজন ও নিরাপত্তারক্ষী এনামুল এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।
এদিকে এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ৭১ বারের মত পিছিয়ে আগামী ২৩ মার্চ নতুন দিন ধার্য করেছেন ঢাকার সিএমএম আদালত।