নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নের ধারা অব্যাহত রাখা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব : আইনমন্ত্রী

339

ঢাকা, ২ মার্চ, ২০২০ (বাসস) : আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নের ধারা অব্যাহত রেখে আগামীতেও জনগণের আস্থা ধরে রাখা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব।
আজ সোমবার বিকেলে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন ।
তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন যে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেছে তার বিশ্বস্ততা নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে একটি আস্থা তৈরি হয়েছে। কোন অবস্থাতেই যাতে এক ব্যক্তি দুই জায়গায় ভোটার হতে না পারে এবং রোহিঙ্গা বা অন্য কোন দেশের নাগরিক যেন অবৈধভাবে ভোটার হতে না পারে সে বিষয়ে কমিশনকে অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। প্রয়োজনে এসব অপরাধের কঠোর শাস্তির বিধি-বিধান করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের সব ধরণের সহযোগিতা থাকবে।
অনুষ্ঠানে এ বছর জাতীয় নির্বাচন পদকপ্রাপ্ত তিনজন নির্বাচন কর্মকর্তার হাতে পদক তুলে দেন আনিসুল হক। একই সময় কয়েকজন নতুন ভোটারের হাতে জাতীয় পরিচয়ের স্মাট কার্ড তুলে দেন তিনি।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির কল্যাণেই বিশে^র অনেক দেশ উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে গেছে। এখন প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে কাঙ্খিত উন্নয়ন করা কঠিন ব্যাপার। নেতিবাচক ধারণা কিংবা অজ্ঞতার কারণে প্রযুক্তি গ্রহণ না করলে আমাদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে হবে এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে। এর অন্যতম উদাহরণ হলো, পরপর দুইবার বিনামূল্যে সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব পাওয়া সত্বেও তৎকালীন বিএনপি সরকার অজ্ঞতার কারণে সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল এবং পরবর্তীতে এই নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে প্রায় একযুগ অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এর ফলে বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে। এর প্রভাব আমরা উপলব্ধি করেছি। আমরা এ রকম ভুল আর করতে চাই না। যে প্রযুক্তির দ্বারা দেশ ও জাতির কল্যাণ হবে তা অবশ্যই গ্রহণ করা হবে।
আনিসুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল, রাশিয়া, ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, পেরু, কাজাখস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশ ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চালু করলেও বাংলাদেশের কেউ কেউ পুরোপুরিভাবে না জেনেই ইভিএম-এর বিষয়ে নেতিবাচক ধারণ পোষণ করছেন। বাস্তবতা হলো ১৯৭৫ এর পর বাংলাদেশের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যে অপসংস্কৃতি চালু হয়েছিল তা সম্পূর্ণ দূর করতে হলে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের বিকল্প নেই।
মন্ত্রী বলেন, ইভিএম পদ্ধতি এই অপসংস্কৃতি দূর করতে মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে। তবে ইভিএম- পদ্ধতিকে আরো আধুনিক ও স্বচ্ছ করার জন্য ধারাবাহিক গবেষণা করতে হবে। “ট্রায়াল এন্ড এরার” এর ভিত্তিতে ইভিএম পদ্ধতিকে স্ট্যান্ডারাইজড তথা সার্বিক ত্রুটিমুক্ত করতে হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে যাতে মানুষ ঘরে বসেই অনলাইনে তার নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন। তার ভোটটি কোথায় গেল তা যেন নিশ্চিত হতে পারেন। কোন কেন্দ্রে মোট কত ভোট পড়েছে এবং কারা কারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন তাদের ছবি ও আইডি নম্বরসহ অনলাইনে তালিকা প্রকাশ করা যায় কিনা সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে হবে। এতে করে ভোটারের সংখ্যা ও উপস্থিতি নিয়ে কারো মনে কোন সংশয় থাকবে না এবং যিনি ভোট দিবেন তাকে ভোট গ্রহণের একটি কনফারমেশন স্লিপ দেয়া যায় কিনা সে ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা কোন জায়গায় অনলাইনে আবেদন করলে এবং আবেদন সাবমিট হয়ে গেলে তো এ রকম স্লিপ পেয়ে থাকি। তাছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ভিশন পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করতে গেলেও ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা দরকার হবে।
মন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে নির্বাচন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে নির্বাচন হলো ‘গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা’। নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র হয় না, আবার গণতন্ত্র ছাড়া নির্বাচন প্রায় অর্থহীন বা আত্মাহীন দেহের মতো। তাই দেশে দেশে গণতন্ত্র পাওয়ার আশায় হাজার বছর ধরে নির্বাচন চর্চা অব্যাহত রয়েছে। নব্য স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৭৩ সালে অবাধ ও নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচন চর্চা শুরু হলেও ১৯৭৫ সালের পর দীর্ঘ সময় দেশে নির্বাচন চর্চার পথ ছিল অত্যন্ত অমসৃন ও বন্ধুর। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও নির্বাচন চর্চার পথ মসৃন করতে এই সময় কত আন্দোলন -সংগ্রাম করতে হয়েছে তার প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই রয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।