টেনিস থেকে অবসরের ঘোষণা শারাপোভার

359

প্যারিস, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ (বাসস/এএফপি) : টেনিস থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন পাঁচ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম বিজয়ী বিশ্বের সর্বাধিক অর্থ উপার্জনকারী ক্রীড়াবিদ রুশ তারকা মারিয়া শারাপোভা। বুধবার অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ৩২ বছর বয়সি এই টেনিস তারকা, যিনি ভুষিত হয়েছেন ‘এক কিংবদন্তী’ ও ‘ গ্রেট চ্যাম্পিয়ন’ খেতাবে।
ভোগ এন্ড ভ্যানিটি ম্যাগাজিনে লেখা নিজের এক কলামে শারাপোভা লিখেছেন,‘ আমি টেনিসকে বিদায় জানাতে চাই। ২৮ বছরের ক্যারিয়ারে ৫টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের পর আমি আরেকটি পর্বত পাড়ি দেয়ার জন্য প্রস্তুত। এখন নতুন লড়াইয়ে সামিল হতে চাই।’
এ ঘোষনার পরই টেনিসে শারাপোভার অসাধারণ কীর্তির কথা স্মরণ করে পুরুষ টেনিসের এক নম্বর র‌্যাংকধারী নোভাক জকোভিচ তাকে‘ কিংবদন্তী’ উল্লেখ করে বলেছেন,‘তিনি খুবই স্মার্ট মহিলা। তার মধ্যে চ্যাম্পিয়নের মত মানষিকতা রয়েছে। যা অনেকের থাকে না।’
২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ডোপ পরীক্ষায় অত্তীর্ণ হতে না পেরে ১৫ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হবার আগেও টিনএইজে গ্র্যান্ডস্লাম জিতে নিজেকে প্রকৃতি প্রদত্ব সেরা খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন শারাপোভা।
রাশিয়ার সাবেক এই এক নম্বর টেনিস তারকা বর্তমানে ৩৭৩ নম্বর র‌্যাংকে অবস্থান করছেন। কাঁধের সমস্যার কারণে গত এক বছর ধরে কঠিন সময় পার করছেন তিনি। মাঠে নেমে কিছু কিছু খেলায় জয় পেলেও হেরেছেন প্রচুর ম্যাচে। অতি সম্প্রতি তিনি মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছেন।
সাইবেরিয়ায় জন্মগ্রহন করা শারাপোভা প্রথম র‌্যাকেট হাতে নেন চার বছর বয়সে সোচিতে। ১৯৮৬ সালে চেরোনোবিল ধ্বংসযজ্ঞের সময় তার বেলারুশের বাবা-মায়ের সঙ্গে সেখান থেকে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে যান যুক্তরাস্ট্রে। ২০০৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি জয় করেন উইম্বলডন শিরোপা। তৃতীয় কমবয়সি হিসেবে ঘাসযুক্ত কোর্ট থেকে এই শিরোপা জয় করেছিলেন তিনি। ২০০৫ সালে ১৮ বছর বয়সে ইউএস ওপেন জিতে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষ স্থান দখল করেন এই রুশ কিশোরী।
শারাপোভা বুধবার বলেন,‘ আমার সফলতার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমি কখনো পেছন ফিরে তাইকাইনা। আবার সামনের দিকেও তাকাইনা। আমি বিশ্বাস করি বার বার নিস্পেষন করতে পারলে আমি নিজেকে অসাধারণ অবস্থানে নিয়ে যেতে পারব।’
২০০৭ সাল থেকে মাঠে ও মাঠের বাইরে কাঁধের ইনজুরির সঙ্গে লড়াই শুরু হয় শারাপোভার। ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ছিল তার। কিন্তু মৌসুমের দ্বিতীয় রাউন্ডে ইনজুরির কারণে লড়াই থেকে সরে যেতে বাধ্য হন তিনি। এ সময় তিনি অংশ নিতে পারেননি ইউএস ওপেন ও বেইজিং অলিম্পিকে।
২০১২ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনের শিরোপা জয় করেন শারাপোভা। এর মাধ্যমে ১০ম নারী হিসেবে পাঁচটি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের নজীর সৃস্টি করেন তিনি। একই বছর সাইবেরিয়ায় জন্ম নেয়া এই নারী জয় করেন অলিম্পিকের রৌপ্য পদক।
শারাপোভা বলেন,‘ আমি টেনিসকে আমার জাীবন দিয়েছি, আর টেনিস আমাকে জীবন দিয়েছে। এটিকে আমি প্রতিদিন মিস করব। মিস করব আমার প্রতিদিনের রুটিন এবং অনুশীলন। আমি মিস করব আমার দল এবং কোচকে। আমি মিস করব প্রশিক্ষনের সময় সাইটবেঞ্চে বসে থাকা আমার বাবাকে। ম্যাচে হারি কিংবা জিতি খেলা শেষে প্রতিপক্ষের সঙ্গে করমর্দনকে। পেছনে ফিরে তাকালে দেখতে পাই টেনিস আমাকে পর্বত চুড়ায় পৌঁছে দিয়েছে।’
বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর শারাপোভা ছিলেন বিশ্বের সর্বোচ্চ অর্থ উপার্জনকারী নারী অ্যাথলেট। খেলোয়াড়ি জীবনে ৩৬টি একক শিরোপা জয় করা এই ক্রীড়াবিদ শুধুমাত্র প্রাইজমানি হিসেবে আয় করেছেন ৩৮.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।