দিল্লিতে সহিংসতা : শান্তি, ভ্রাতৃত্বের আহ্বান মোদির

520

নয়াদিল্লি, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০(বাসস) : উত্তরপূর্ব-পশ্চিম দিল্লিতে তিনদিনের নজিরবিহীন সহিংসতার প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সকলের প্রতি শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার বিকালে এক টুইটে তিনি এ আহ্বান জানান।
টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘দিল্লির ভাই-বোনদের কাছে আমি সবসময় শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার অনুরোধ করছি।’ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে (সিএএ) ঘিরে রোববার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের এ রক্তক্ষয়ী সহিংসতায় এ পর্যন্ত ২২ জন নিহত ও দুই শতাধিক লোক আহত হওয়ার পর এটাই ছিল মোদির প্রথম প্রতিক্রিয়া।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, সিএএবিরোধী আন্দোলনকারীদের নিয়ে ক্ষমতাসীন এক বিজেপি নেতার হিংসাত্মক বক্তব্যের পরপরই এ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বিজেপির ওই নেতা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডেনাাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের পর দিল্লির আন্দোলনকারীদের ‘পিটিয়ে উঠিয়ে দেয়ার’ হুমকি দেন। দিল্লির এ সহিংসতার কারণে ভারতে ট্রাম্পের দুইদিনের সফরও অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে বলে মত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের। ট্রাম্প ভারত ছাড়ার পর থেকেই পরিস্থিতি সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ বাড়তে শুরু করে।
বুধবার দিল্লিবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বানের পাশাপাশি পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার কথাও জানিয়েছেন মোদি। এদিন পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক এক বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন তিনি।
বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল সর্বশেষ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করেন। দোভাল মঙ্গলবার রাতে সংঘাতমুখর এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন। ওইদিন বিবদমান বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে লাগাতার পাথর ছোড়াছুড়ি, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও মারামারির ঘটনা ঘটে।
বুধবার সকালেও বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও পাথর নিক্ষেপের খবর পাওয়া গেছে। ভজনপুরা এলাকার একটি ব্যাটারির দোকানে আগুন দেয়া হয়েছে। দোকানটি ভাংচুরের পর জ্বলতে থাকা ব্যাটারিগুলোকে রাস্তায় ফেলা হয়। দিল্লির চান্দ বাগ এলাকার একটি নর্দমা থেকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা অঙ্কিত শর্মার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে একটি সেতুর ওপর একদল উন্মত্ত লোক তাকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চারদিনেও সহিংসতা বন্ধে ব্যর্থ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনার করেছেন কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধী। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করেছেন তিনি।
পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লি পুলিশের ভূমিকায় ভারতের উচ্চ আদালতও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সহিংস এলাকাগুলোর বোর্ড পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে। সরকারি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় পুলিশকে দেখামাত্র গুলিরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানা গেছে।
সহিংসতা-কবলিত দিল্লির উত্তরপূর্বাঞ্চলে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। কোথাও কোথাও থমথমে নীরবতা নেমে এসেছে। বুধবার সকালে এই এলাকাগুলোকে যুদ্ধক্ষেত্রের মতো দেখাচ্ছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদশী সাংবাদিকরা।
টুইটারে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল পরিস্থিতিকে ‘ভয়ানক’ বলে বর্ণনা করে সংঘাত-কবলিত এলাকাগুলোতে আশু সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছেন।
মঙ্গলবার রাতভর কেজরিওয়ালের বাসভবনের সামনে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) ও জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বহু লোক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে জলকামানও ব্যবহার করতে হয়।