বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : নবম শ্রেণী থেকেই স্কুলে বিষয় ভিত্তিক বিভাজন না করার পক্ষে বললেন প্রধানমন্ত্রী

108

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-স্বর্ণ পদক-ভাষণ
নবম শ্রেণী থেকেই স্কুলে বিষয় ভিত্তিক বিভাজন না করার পক্ষে বললেন প্রধানমন্ত্রী

মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, দৈনন্দিন জীবনে কর্মক্ষেত্রে বা চাকরি পেতে যে শিক্ষার দরকার হয়, সে শিক্ষাটাও তাঁরা (মাদ্রাসার শিক্ষার্থীগণ) গ্রহণ করবে। সেখানেও মেধাবী শিক্ষার্থী আছে। তাঁদেরকে কেন অবহেলা করবো- প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী।
একটি সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলায় তাঁর সরকারের প্রচেষ্টার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একই সঙ্গে প্রত্যেক উপজেলায় কারিগরি স্কুল, কলেজ এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। তিনি বলেন, যার যেভাবে শিক্ষা গ্রহণ বা কর্মক্ষেত্রে কাজ করার দক্ষতা রয়েছে সে সেইভাবেই শিক্ষালাভ করতে পারবে। সে সুযোগটা সৃষ্টি করে দেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যেন আমাদের মঞ্জুরি কমিশন খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারি নিয়োগ সংক্রান্ত একটা অভিন্ন নীতিমালা করা। ’
‘কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কত ছাত্র-ছাত্রী থাকবে সেটা নির্দিষ্ট করে দেওয়াটাও জরুরী’,-এমন অভিমত ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যাতে মান সম্মত শিক্ষা দিতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আর এখন সেটা খুব কঠিন কাজ নয়,’যোগ করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় করেছি সেগুলোর যেন ভালভাবে নজরদারি করতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে এটাকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি এবং নেবো।’
‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ পাস কওে দেওয়ায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের ‘জবাবদিহিতা’ নিশ্চিত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অতীতে এটা ছিল না। যে যার মতো একখানা বিশ্ববিদ্যালয় করতো। এক বিল্ডিংয়েই দেখা যায় তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়। আমার কাছে অবাক লাগতো সে সময়।’
শিক্ষার সম্প্রসারণে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ সমূহের উল্লেখ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের কাছ থেকেও এ সম্পর্কিত মতামত প্রত্যাশা করেন।
তিনি বলেন, ‘চিন্তা করে দেখেন- শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য এবং শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার জন্য আমাদের আর কি কি প্রয়োজন। যা প্রয়োজন, আমরা তাই করবো এবং সেটাই আমাদের নীতি।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতার বক্তৃতার চুম্বক অংশ শিক্ষকরে উদ্দেশ্যে তুল ধরেন।
জাতির পিতা বলেছেন, ‘আগামী প্রজন্মের ভাগ্য শিক্ষকদের ওপর নির্ভর করে। ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার ব্যত্যয় ঘটলে কষ্টার্জিত স্বাধীনতা অর্থহীন হবে।’
‘কাজেই শিক্ষকদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে- জাতির পিতার এই কথাটা সবসময় আপনারা মনে রাখবেন’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাওয়ায় ‘আজকালকার শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি মেধাবী’- এমন অভিমত ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁদেরকে সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে। কারণ, বাংলাদেশকে আমরা যেভাবে গড়ে তোলার সুদূর পরিকল্পনা নিয়েছি তার যেন বাস্তবায়ন করে যেতে পারি।
সারাদেশের বিশ্ববিদালয় সমূহে প্রযুক্তি শিক্ষা, মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ রুম তৈরী, অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাসহ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশেই আমরা ইন্টারনেট সার্ভিস দিচ্ছি, ব্রডব্যান্ড লাইন দিচ্ছি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উক্ষেপণ করেছি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এর কাজ চলছে।’
‘তথ্য যোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষাটা আধুনিক জগতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভবিষ্যতে হয়তো আরো নতুন নতুন পদ্ধতি আসবে। কিন্তু যখনই যেটা আসবে তার জন্য আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা সবসময় যেন প্রস্তুত থাকতে পারে সেভাবেই তাঁদেরকে আমরা গড়ে তুলতে চাই।’
সারাদেশে বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার মেরিন একাডেমির সঙ্গে মেরিন বিশ্ববিদ্যালয় করেছে, ডিজিটাল, টেক্সটাইল এবং ফ্যাশন ডিজাইনিং বিশ্ববিদ্যালয় ও করেছে। একইসঙ্গে লালমনিরহাটে একটি অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ও করছে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার প্রতিটি জেলাকে ভাগ করে, কোথায় কোনটা প্রতিষ্ঠা করা হবে, তা ঠিক কের দিচ্ছে, যাতে কেবল রাজধানী কেন্দ্রিক উন্নয়ন না হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার প্রসারকে আমরা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। পড়াশোনার বহুমুখী করণের মাধ্যমে দেশে এবং বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশকে এগিয়ে নেওয়াই এর উদ্দেশ্য বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনটা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করেছি এবং প্রত্যেকটা বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা তৈরী করা হবে। যেখানে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্য্যালয় ছিল সেখানে কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি এবং বিজ্ঞান শিক্ষাকে শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য ‘৯৬ সালেই ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আইন পাশ করে যাই।
সরকার গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গবেষণা ছাড়া কখনো উৎকর্ষতা লাভ করা যায় না। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হলে গবেষণার বিকল্প নেই।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় স্বর্ণ পদক বিজয়ী শিক্ষার্থীদের সোনার ছেলে-মেয়ে আখ্যায়িত করে আগামীতে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলায় নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলে দেশগড়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্যও সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয়েছে এবং লেখাপড়ায় আজকাল মেয়েরাই ভাল করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ছেলেদের পাঠে আরো মননিবেশ করারও আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘আজকের এই অনুষ্ঠানেও ১৭২ জন কৃতি শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৮ জন নারী (৮৪ জন পুরুষ) স্বর্ণপদক পেয়েছেন। মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে- বিষয়টি একদিকে আনন্দের হলেও পড়ালেখায় ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধান করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।’
বাসস/এএসজি-এফএন/১৭০৫/আরজি