আরটিটিসি ১৪,৭১৯ যুবককে দক্ষ শ্রমশক্তিতে পরিণত করেছে

549

॥ মো. মামুন ইসলাম ॥
রংপুর, ১১ জুলাই, ২০১৮ (বাসস) – রংপুর টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (আরটিটিসি) ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত আটটি ট্রেডের ২২টি কোর্সে ১৪ হাজার ১৭৯ জন বেকার যুবক-যুব মহিলাকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ প্রকৌশলী লুৎফর রহমান বাসস’কে বলেন, ‘আরটিটিসি সফলভাবে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির মাধ্যমে বিকাশমান দেশীয় শিল্পে জনশক্তির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এ সঙ্গে বিদেশে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় অগ্রযাত্রায়ও অবদান রাখছে।’
এ পর্যন্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্যে ২ হাজার ১৫৩ জন যুব মহিলাসহ মোট ৯, ৯ ৪৭ জন বেকার যুবক বিভিন্ন স্থানীয় এবং বিদেশী শিল্প-কারখানা এবং সংস্থায় নিয়োগ পেয়ে সন্তোষজনক উপার্জন করছেন।
তিনি বলেন, ”চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ৬ হাজার ৪৫৩ জন বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশের ১৭টি দেশে কাজ করছেন এবং তারা ওইসব দেশে কর্মরত অদক্ষ কর্মীদের চেয়ে দুই থেকে চার গুণ বেশি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।”
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন মানবসম্পদ কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বেকার জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে এই কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।
অধ্যক্ষ রহমান জানান, ২০০৮ থেকে এ পর্যন্ত আরটিটিসির মোট ১৬ হাজার ৭৬৭ প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে ১৪ হাজার ৭১৯ জন বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। তারা কম্পিউটার ট্রেডের অধীনে ছয়টি এবং রেফ্রিজারেশন, এয়ার কন্ডিশনিং, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, ওয়েডিং, ফ্যাব্রিকেশন, অটোমোটিভসহ বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
বর্তমানে আরো ১ হাজার ৮১০ শিক্ষার্থী আরটিটিসি ২২টি কোর্সে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
অনেক স্থানীয় শিল্প-কল-কারখানা ও সংস্থা আরটিটিসি প্রশিক্ষিতদের সরাসরি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিচ্ছে এবং বিদেশে নিয়োগকারী সংস্থাগুলোও তাদেরকে নিয়োগের জন্য নির্বাচন করছে।
সম্প্রতি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ‘চর্কা টেক্সটাইলস মিলস লিমিটেডের কর্মকর্তারা আরটিটিসিতে এসে সরাসরি সাক্ষাতকার নিয়ে ১৯ জন মহিলা ও ১১ জন যুবককে চাকরিতে নিয়োগ দিয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তরা ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেলাই মেশিন অপারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ’ কোর্সের উপর উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
একই দিন ’স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ অব ঢাকা’ আরটিটিসিতে সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তাদের পোশাক কারখানায় উল্লেখিত কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩০ নারী কর্মীকে নিয়োগ দেয়।
অধ্যক্ষ বলেন, ‘একইভাবে, বিদেশে চাকরিতে নিয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারাও প্রায়ই আরটিটিেিত এসে তাদের চাহিদামত প্রশিক্ষিত পুরুষ ও মহিলা কর্মীকে বিভিন্ন দেশে নিয়োগের জন্য বাছাই করে।’
আরটিটিসিতে প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করার পরে সেলিম ভূঁইয়া এবং নারায়ণ চন্দ্র এখন মালয়েশিয়ায় গার্ডেনার হিসেবে কাজ করছেন এবং তারা প্রত্যেকে প্রতি মাসে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০ হাজার করে টাকারও বেশি আয় করছেন।
‘দুই বছর আগে আমি মালয়েশিয়ায় গিয়ে সন্তোষজনকভাবে চাকরি করছি। আমি এখানে একজন অদক্ষ শ্রমিকের চেয়ে অনেক বেশি আয় করছি,’ সম্প্রতি আরটিটিসি’র অধ্যক্ষ লুৎফর রহমানের সাথে ফোনালাপে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার নারায়ন চন্দ্র তার এ সন্তুষ্টির কথা জানান।
প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর আবদুর রহমান ও হাশু শেখ এখন সৌদি আরবে যথাক্রমে অফিস সহকারী এবং ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন। আবদুর রহমান প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা এবং হাশু শেখ ৪০ হাজার টাকা করে উপার্জন করছেন।
এদিকে ’হাউজকিপিং’ ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে সাথী আক্তার, রানী বেগম এবং রোকসানা আক্তার বর্তমানে সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তারা সেখানে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা করে উপার্জন করছেন।
অধ্যক্ষ রহমান বলেন, ‘দক্ষ জনশক্তি উন্নয়নের পাশাপশি আমরা আরটিটিসিতে ১৭টি দেশে চাকরিপ্রাপ্ত ৫ হাজার ৭১৭ জন পুরুষ ও মহিলা কর্মীর জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের বিদ্যমান আইন ও অন্যান্য বিষয়ে প্রাক প্রস্থান প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করেছি।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নারায়ণ চন্দ্র বর্মা বাসস’কে বলেন, ‘আরটিটিসি বেকার যুবক-যুব মহিলাদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বিদেশী মুদ্রা আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ।”