বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : প্রযুক্তি ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর

408

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-আওয়ামী লীগ-আলোচনা
প্রযুক্তি ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে মোস্তাক-জিয়াউর রহমান জড়িত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের শাসকরা বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিতে হত্যার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেনি। কিন্তু স্বাধীনতার পর পরাজিত শত্রুরা এদেশীয় দালালদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা করে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল। জাতির পিতার খুনীদের অনেকেই পরিচিত মুখ, যে বিষয়টিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ অভিহিত করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, ‘খুনীদের মধ্যে অনেকেই ছিল যারা আমাদের বাড়িতে নিয়মিত আশা-যাওয়া করতো। আমার মা (বঙ্গমাতা বেগম মুজিব) যাদের রান্না করে খাওয়াতেন- তারাও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনী মোস্তাক-জিয়ারা মদদ না দিলে এ ধরণের ঘটনা ঘটতো না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁর নাম পর্যন্ত মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সত্য ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না, মিথ্যা দিয়ে কখনো সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না- এটাও আজ প্রমাণিত হয়েছে।’ ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার ভূমিকা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই উপমহাদেশে বাংলাদেশই হচ্ছে একটি মাত্র দেশ, যেটা একটা ভাষাভিক্তিক রাষ্ট্র। যা প্রতিষ্ঠা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’ তিনি বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে জাতির পিতা মাতৃভাষার জন্য যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, সেই সংগ্রামের ধারবাহিকতায় তাঁর (বঙ্গবন্ধু) লক্ষ্যই ছিল এই ভূখন্ডকে স্বাধীন করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৮ সালের ২রা মার্চ ফজলুল হক হলে (এফএইচ) অনুষ্ঠিত এক সভায় বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ, তমুদ্দীন মজলিস এবং আরও কয়েকটি ছাত্র সংগঠন মিলে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয় এবং ১১ই মার্চকে ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ জনগণকে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করে।
ভাষা আন্দোলন চলাকালে জাতির পিতার বারংবারের কারাবরণের প্রসংগ টেনে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১১ই মার্চ সাধারণ ধর্মঘট পালনকালে বঙ্গবন্ধুসহ অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয় এবং সাধারণ ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে মুসলিম লীগ সরকার ১৫ই মার্চ বন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, ১৬ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় রাষ্ট্রভাষার দাবিতে যে সভা অনুষ্ঠিত হয় তাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৫২ সালের ২৫-এ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় ঘোষণা দিলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এ সময় বঙ্গবন্ধু বন্দি অবস্থায় চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি ছিলেন। তিনি বলেন, হাসপাতালের কেবিনে প্রায়শই বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নঈমুদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদকসহ ছাত্রনেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করতেন এবং আন্দোলনের দিক নির্দেশনা দিতেন। গোপন বৈঠকে তিনি আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। মধ্যরাতের পর অনুষ্ঠিত এরকম এক বৈঠকেই ২১-এ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
তিনি ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস জানতে জাতির পিতা রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং বঙ্গবন্ধু বিরুদ্ধে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট নিয়ে প্রকাশিতব্য ১৪ খন্ডের সিরিজ ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টালিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ সকলকে পড়ার পরামর্শ দেন। এ পর্যন্ত এই সিরিজের ৪খানা বই ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি বাংলাদেশের মানুষের প্রতি জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এই কারণে যে, বারবার তাঁরা ভোট দিয়েছে। তাঁদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে।
তিনি বলেন, সবথেকে বড় পাওয়া আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় আর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করতে যাচ্ছি। সরকার প্রধান বলেন, ১৭ই মার্চ আমরা তাঁর (বঙ্গবন্ধু) জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবো, যার ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে। সেই ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পর্যন্ত সময়কে আমরা ‘মুজিববষর্’ ঘোষণা দিয়েছি।
রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাঁর সরকার জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাতে সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আলোচনা সভায় তার বক্তব্যে বিএনপি’র রাজনীতি দেশের জনগণ এবং উন্নয়ন কেন্দ্রিক না হয়ে ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের মধ্যে আটকে আছে’ উল্লেখ করে তাদের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘জনগণের বিষয় নিয়ে তাদের (বিএনপি) কোন বক্তৃতা বিবৃতি নেই। কোমরের ব্যাথায় খালেদা জিয়ার দাঁড়াতে পারছেন না, খালেদা জিয়া অসুস্থ, এই হচ্ছে তাদের রাজনীতি। এটার মধ্যেই তারা আটকে আছে। অথচ এই ব্যাথা নিয়ে খালেদা জিয়া দুই বার প্রধানমন্ত্রী, দুই বার বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং ২০১৩ ও ২০১৪ সালে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার যে আন্দোলন সেটারও নেতৃত্ব দিয়েছেন।
এ সময় দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রসংগ টেনে ড. হাছান মাহমুদ আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি আরো অনেক বেশি হতে পারতো যদি আমাদের দেশে বিএনপি-জামায়াতেরএবং বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোটের ধ্বংসাত্মক রাজনীতি না থাকতো।’
বাসস/এএসজি-এফএন/২২০২/কেএমকে