বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
নারী-ক্ষমতায়ন
গার্মেন্টস কর্মী ছবি দাস এখন নিজেই গার্মেন্টস কারখানার মালিক
ঢাকা, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : মাত্র ১২ বছর বয়সে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে ছবি দাস তার কর্ম জীবন শুরু করেছিলেন। আর সেই তিনি এখন নিজেই একটি গার্মেন্ট কারখানার মালিক। এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র তার একাগ্রতা, নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম আর সাধনার ফলে।
ছবির বয়স যখন ১১ বছর, তখন তার বাবা মারা যান। পরিবারের খরচ মেটাতে মাত্র ১২ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। চাকরি নেন চট্টগ্রামের এক গার্মেন্টস কারখানায়। পরিবারের সাতজন সদস্যের মুখে খাবারের যোগান দিতে স্কুল বাদ দিয়ে চাকরি জীবনে প্রবেশ করতে হয় তাকে। আর সেই ছবি এখন নিজেই একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। সেখানে কাজ করছেন ১০০ বেশি শ্রমিক।
চাকরিতে যোগদানের পর ১৮ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করেছেন তিনি। এরমধ্যে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ালেখা করবেন বলে। কিন্তু বিধিবাম। অর্থের অভাবে তাও বন্ধ হয়ে যায়।
এত অভাব-অনটনের পরেও ছবি স্বপ্ন দেখতেন তিনি একটি গার্মেন্ট কারখানা চালু করবেন এবং তা বাস্তবায়ন করবেন। সেই স্বপ্ন দেখা থেকেই তিনি তার চাকরির বেতন থেকে টাকা জমানো শুরু করেন।
এভাবে ১৮ বছর টাকা জমানোর পর ২০১৬ সালে চট্টগ্রামের খলিফা পট্টি এলাকায় এক ভাড়া বাসায় ‘সেন্স ফ্যাশন’ নামে তার নিজের কারখানা। নিয়োগ দেন ছয় জন কর্মচারি এবং ১০ টি সেলাই মেশিন ক্রয় করেন। এসব মেশিন ক্রয় করতে তার খরচ হয় ৭ লাখ টাকা যার মধ্যে ৫ লাখ টাকা তার নিজের জমানো। আর ২ লাখ টাকা ধার করেন।
মাত্র দুই বছর পর ব্যবসার পরিধি বাড়ান। কারখানা স্থানান্তর করেন চট্টগ্রামের নতুন চাক্তাই এলাকার রাবেয়া টাওয়ারে। সেখানে নিয়োগ দেন ১০০ বেশি কর্মচারি। আর এখন সেলাই মেশিন রয়েছে ৬০টি।
ছবি বলেন, একসময় আমি অপেক্ষা করতাম বেতনের জন্য যাতে করে পরিবারের খাবারসহ অন্য খরচ মেটাতে পারি। আর এখন আমি প্রায় ৬ লাখ টাকা কর্মচারি-কর্মকর্তাদের বেতন দিই প্রতি মাসে।
৩২ বছর বয়সী ছবির বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ার উপজেলার পশ্চিম শোলকাটা গ্রামে।
তিনি বলেন, আমি যখন নিজের ব্যবসা খুলতে যাই তখন অনেকেই আমাকে নিরুৎসাহিত করেছেন। কিন্তু কোন কিছুই আমাকে দমাতে পারেনি। আবার এখানে কারখানা স্থানান্তরের পর অনেক বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। পাশে অনেক ব্যবসায়ীই আমার সাথে বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা করেছেন। এমনকি বিদ্যুৎ পর্যন্ত পাইনি তাদের কারণে। তাদের অনেক বুঝানোর পর আমি ভালোভাবে ব্যবসা চালু করতে পেরেছি। এজন্য আমাকে চারমাস কাজ করতে হয়েছে।
ছবি বলেন, তার স্বামী এবং তার এক বন্ধু এই কারখানা খুলতে অনেক সাহায্য করেছেন। তাদের সাহায্য ছাড়া আমার এতদূর আসা সম্ভব হত না। তারা সবসময় আমার সুখে-দুখে পাশে ছিলেন।
ছবি সরকারের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ পেতে আবেদন করেছেন যাতে করে কারখানার পরিধি বাড়ানো যায় এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরী করতে পারেন।
ছবির কারখানায় কাজ করা জাহানারা খাতুন বলেন, আমি আগেও বেশ কয়েকটি গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করেছি। কিন্তু এখানে কাজ করে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি। আর কারখানার মালিক একজন নারী হওয়ায় তিনি আমাদের সমস্যাগুলো বুঝতে পারেন এবং সবসময় সহাযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
আরেক কর্মচারি রাশেদা বলেন, আমরা যারা নতুন তারা আমাদের মালিকের কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখতে পারি। যেহেতু, তিনি নিজেই এসব কাজ করে এসেছেন, তাই তিনি আমাদের সেটা বেশ ভালভাবেই শেখান।
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/ফই/১৩৩০/আহো/-আরজি
Home 0সকল সংবাদ বাসস দেশ বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : গার্মেন্টস কর্মী ছবি দাস এখন নিজেই গার্মেন্টস কারখানার...