বিদেশীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ক্যানবেরায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন

279

ঢাকা, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : ক্যানবেরায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে বৈদেশিক কূটনৈতিকসহ অষ্ট্রেলিয়াবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আজ যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশের মধ্য দিয়ে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়েছে।
অষ্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে ক্যানবেরাস্থ তেলোপিয়াপার্কে মানুকাসার্কিট ও নিউসাউথ ওয়েলস স্ট্রীটের ক্রসরোডে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সকালে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রভাত ফেরী অনুষ্ঠিত হয়। আজ ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানা গেছে।
প্রভাত ফেরীতে অংশগ্রহণ করেন এসিটি গভর্ণমেন্টের জাস্টিস মিনিস্টার সেইন রেটেনবারি, বিরোধী দলের নেতা এলিষ্টর কো। ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, পেরুর রাষ্ট্রদূত অষ্ট্রেলিয়ান ইনডোজেনিয়াস এজেন্সীর প্রতিনিধি মাল্টিকালচারাল অথরিটির প্রতিনিধিসহ ও বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকবৃন্দ, অষ্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন ট্রেড (ডিএফএটি)-এর প্রতিনিধি অষ্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী ও অভিবাসীগণএবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ।
অংশগ্রহণকারীরা সমবেত স্থল থেকে পদব্রজে ক্যানবেরাস্থ অ্যাভিনিউর মানুকাঅ্যাভাল প্রদক্ষিণ শেষে অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং ভাষা শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার, ভারতের হাইকমিশনার, এসিটি জাষ্টিস মিনিষ্টার এবং বিরোধী দলের নেতা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। এতে বক্তাগণ মহান শহীদ দিবস ও আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস এর তাৎপর্য তুলে ধরেন।
হাইকমিশনার সুফিউর রহমান তাঁর বক্তব্যে সকল ভাষা শহীদ ও ভাষা সংগ্রামীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ব্যক্ত করেন।
তিনি ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর ভাষাকে যথাযথ মর্যাদা প্রদান ও বিলুপ্ত ভাষা রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সকলকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান।
ভারতের রাষ্ট্রদূত সাম্প্রতিক বাংলাদেশের অর্জনের ভূয়সী প্রসংশা করেন।
এরপর হাইকমিশন প্রাঙ্গণে হাইকমিশনার সুফিউর রহমান জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।
নিজ নিজ ধর্মমত ও প্রথা মোতাবেক ভাষা শহীদদের উদ্দেশ্যে মৌন প্রার্থনা এবং তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসটির প্রথম প্রহরের অনুষ্ঠান শেষ হয়।
ক্যানবেরাস্থ প্রসিদ্ধ তেলোপিয়া পার্ক স্কুলসহ অন্যান্য স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের একুশের ব্যাপারে সম্যক অবহিত করা এবং নৃ-তাত্ত্বিক ভাষাসহ সকল মাতৃভাষার সম্মান তাদের মানসে বিস্তারের লক্ষ্যে এই অস্থায়ী শহীদ মিনার তিনদিনব্যাপী খোলা রাখা হয়েছে। ২১শে ফেব্রুয়ারীর মত পরবর্তী দুই দিনেও কয়েকশত ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল স্তরের মানুষ শহীদ মিনার পরিদর্শন করে এবং ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন।
সান্ধ্যকালীন আয়োজনে “মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস”এর তাৎপর্য বিষয়ে আলোচনায় হাইকমিশনারসহ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীরা অংশগ্রহন করেন। হাইকমিশনার তাঁর বক্তব্যে বিলুপ্ত ভাষার প্রেক্ষিত বর্ণনা করে বাংলাসহ সকল মাতৃভাষার উন্নয়ন ও অধিকতর চর্চার উপর গুরাত্বারোপ করেন।
তিনি রাজনৈতিক ক্ষেত্র প্রস্তুতের মাধ্যমে বাংলা ভাষার বর্তমান উৎকর্ষ অবস্থান সৃষ্টির জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ট নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি প্রবাসী বাঙ্গালিদের বাংলা চর্চার চ্যালেঞ্জের উপর আলোকপাত করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে শিশুকিশোরসহ বাংলাদেশী শিল্পীদের অংশগ্রহনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এতে বাংলাদেশ থেকে আগত প্রসিদ্ধ নৃত্যশিল্পী ওয়ারদা রিহাব ও তাঁর দল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন যার উপজীব্য বিষয় ছিল বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ। প্রায় দেড় শতাধিক প্রবাসী ও অভিবাসী বাংলাদেশী উক্ত অনুষ্ঠান উপভোগ করেন এবং নৈশভোজে অংশ নেন।