বাংলাদেশকে নিয়ে রেড্ডির মন্তব্যের জবাব দিলেন প্রখ্যাত ভারতীয় দুই কলামিস্ট

233

\ আমিনুল ইসলাম মির্জা \
নয়াদিল্লী, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : বাংলাদেশের সাথে ভারতের কয়েকটি সূচকের তুলনা করে ভারতের একজন জুনিয়র মন্ত্রীর অবমাননাকর মন্তব্যের কঠিন জবাব দিয়েছেন দেশটির প্রখ্যাত কলামিস্ট করন থাপার ও স্বতী নারায়ণ।
গতকাল হিন্দুস্তান টাইমসের একটি নিবন্ধতে থাপার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জুনিয়র মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডির মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘ভারতের বৈধ নাগরিক হওয়ার চেয়ে বাংলাদেশে একটি উঁইপোকা হয়ে থাকাও ভাল।’
গত ৯ ফেব্রুয়ারি রেড্ডি বলেন, ‘ভারত নাগরিকত্ব লাভের প্রতিশ্রুতি দিলে অর্ধেক বাংলাদেশ শূন্য হয়ে যাবে… বাংলাদেশের অর্ধেক লোকই ভারতে চলে আসবে।’ টেলিভিশনে টকশো ও উপস্থাপনার মাধ্যমে জনপ্রিয় হওয়া থাপার বলেন, এ ধরনের মন্তব্য করে রেড্ডি মূলত এটাই প্রকাশ করে দিলেন যে তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে কতটা অজ্ঞ।’ থাপার ‘বাংলাদেশ কিভাবে ভারতের চেয়ে এগিয়ে গেছে’ শীর্ষক নিবন্ধতে বলেন, ‘তিনি রেড্ডি) জানেন না যে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক দিক দিয়েই অনেক এগিয়ে আছে। সূচক অনুযায়ী জীবনযাত্রার মানের দিক দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘রেড্ডিকে কারো বলে দেয়া উচিৎ যে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাগরিকত্ব দেয়ার অঙ্গীকার করে, তবে ভারতীয়দের অর্ধেক সেখানে পাড়ি জমাবেন। বস্তুত অর্ধেকের চেয়েও অনেক বেশি লোক সেখানে চলে যাবেন।’
তিনি আরও লিখেছেন, প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, গড় আয়ুু, সাক্ষরতা এবং স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ ভালো করছে।
অন্যদিকে, স্বতি নারায়ণ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে তার নিবন্ধে বলেন, গত দশকে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে ভাল করেছে।
নিবন্ধে তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক উদারীকরণের পর থেকে ভারতীয়রা বাংলাদেশীদের চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে, কিন্তু জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে আমাদের প্রতিবেশী (বাংলাদেশ) আমাদের থেকে বহুলাংশে ছাড়িয়ে গেছে।
বর্তমানে মানব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের একজন ভিজিটিং ফেলো নারায়ণ আরো লিখেছেন, তিনি ভেবেই অবাক কেন বাংলাদেশীরা তাদের প্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে যেতে চাইবে এবং তিনি লিখেন, ‘ভারতে বাংলাদেশী ঢুকে পড়ার বিষয়টি অমূলক।’ থাপার আরো লেখেন, ‘বাংলাদেশে যে হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তা ভারতে আমরা কেবল দুই তিন বছর পর আশা করতে পারি।’ তিনি লিখেছেন, আমরা যখন ৫ শতাংশের নিচে পড়ে আছি তখন বাংলাদেশ ৮ শতাংশের উপরে ছুটছে।
বাংলাদেশের অভিভূত হওয়ার মত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সাক্ষরতার হার, পুষ্টির মাত্রা এবং গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসের বিষয় তুলে ধরে থাপার লেখেন: স্পষ্টত, বাংলাদেশের জীবনমান ভারতের চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
নারায়ন তার ‘বাংলাদেশের জীবনযাপন উত্তম’ শিরোনামের আর্টিকেলে বলেন, জনগণ তাদের উন্নত জীবন যাপনের জন্য বিদেশে পাড়ি জমান তবে, বাংলাদেশে জীবন-যাপন নিঃসন্দেহে উত্তম বলেই তিনি মনে করেন।’
থাপারের কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে নারায়ন বলেন, যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি যেখানে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে, সেখানে কেন একজন বাংলাদেশি নাগরিক যাবেন? তিনি তার নিজের সম্প্রিতিক ডক্টোরাল থিসিস থেকে উদ্ধৃতি তুলে ধরেন ‘বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জনসেবাখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সামাজিক ও লিঙ্গ-বৈষম্য দূরীকরনের মাধ্যমে সক্ষমতা অর্জন।’ তিনি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের ধুয়াতুলে খামাখা আমাদের প্রতিবেশীদের ওপর অবৈধ অভিবাসনের ভুয়া অভিযোগ আনাটা একটি অন্যায্য ইসলামফোবিয়া বিচ্যুতি ছাড়া আর কিছুই নয়।