বাসস ক্রীড়া-৫ : দক্ষিণ আফ্রিকার রানের পাহাড় টপকে টি-২০ সিরিজও জিতলো ইংল্যান্ড

140

বাসস ক্রীড়া-৫
ক্রিকেট-টি-২০
দক্ষিণ আফ্রিকার রানের পাহাড় টপকে টি-২০ সিরিজও জিতলো ইংল্যান্ড
সেঞ্চুরিয়ন, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ (বাসস) : ওয়ানডেতে না পারলেও, টেস্টের মত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-২০ সিরিজও জিতলো সফরকারী ইংল্যান্ড। তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতলো ইংলিশরা। গতরাতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-২০ ম্যাচে ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। সিরিজের প্রথম টি-২০তে ১ রানে জয় পেয়েছিলো প্রোটিয়ারা। দ্বিতীয়টিতে ২ রানে জিতেছিল ইংল্যান্ড।
সেঞ্চুরিয়নে সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এবারও দলের মারমুখী মেজাজে ইনিংস শুরু করেন দুই ওপেনার তেম্বা বাভুমা ও অধিনায়ক কুইন্টন ডি কক। ৪৬ বলে ৮৪ রান যোগ করেন তারা। ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ২৪ বলে ৩৫ রান করে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন ডি কক। মাত্র ২ বল পর প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন বাভুমাও। হাফ-সেঞ্চুরির দোড়গোড়ায় পৌঁছে থামেন তিনি। ২৪ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৯ রান করে আউট হন বাভুমা।
তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি ভ্যান ডার ডুসেন। ৯ বলে ১১ রান করেন তিনি। ফলে ভালো শুরু পরও ২৯ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ অবস্থায় ইংল্যান্ডের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন হেনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার।
ব্যাট হাতে ঝড় তুলে টি-২০ ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৩৩ বলে ৪টি করে চার-ছক্কায় ৬৬ রান করেন ক্লাসেন। মিলারের সাথে চতুর্থ উইকেটে মাত্র ৩১ বলে ৬৪ রানের জুটি গড়েন ক্লাসেন। এই জুটির কল্যাণেই বড় সংগ্রহের পথ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ক্লাসেনের পর ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ১১ ও আন্দিলে ফেলুকুওয়াও ১ রান করে আউট হলেও, দক্ষিণ আফ্রিকাকে রানের পাহাড়ে বসিয়েছেন মিলার। ২০ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ৩৫ রান করেন মিলার। এতে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ২২২ রানের বড় সংগ্রহ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ম্যাচের হিরো টম কারান-বেন স্টোকস ২টি করে উইকেট নেন।
২২৩ রানের বিশাল টার্গেটে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি ইংল্যান্ডের। নিজেদের ইনিংসের অষ্টম বলেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ওপেনার জেসন রয়। ৪ বলে ৭ রান করেন তিনি। তবে শুরুর ধাক্কাটা দ্রুতই কাটিয়ে উঠে ম্যাচে ফিরে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় উইকেটে ৪৯ বলে ৯১ রানের জুটি গড়েন আরেক ওপেনার জশ বাটলার ও জনি বেয়ারস্টো। দু’জনই হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছেন। টি-২০ ক্যারিয়ারে বাটলার অষ্টম ও বেয়ারস্টো চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান। দলীয় ১০৬ রানে বাটলার ও ১৪০ রানে আউট হন বেয়ারস্টো।
৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৯ বলে ৫৭ রান করেন বাটলার। আর ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৪ বলে ৬৪ রান করেন বেয়ারস্টো। বেয়ারস্টোর পর দ্রুত ডেভিড মালানকেও হারায় ইংল্যান্ড। ফলে ১৪৫ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলো ইংল্যান্ড। কারন এ সময় ম্যাজ জয়ের জন্য শেষ ৩৮ বলে ৭৮ রানের দরকার ছিলো ইংলিশদের।
দল চিন্তায় পড়লেও হাল ছাড়েননি ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ইয়োইন মরগান ও অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। ১৮ ওভারেই দলের স্কোর ২০৬এ নিয়ে যান মরগান ও স্টোকস। অর্থাৎ পঞ্চম উইকেট জুটিতে ২৭ বলে ৬১ রান দলকে উপহার দিয়ে জয়ের পথ অনেকটাই সহজ করে ফেলেন তারা। লুঙ্গির করা ১৯তম ওভারের ১টি চার ও ২টি ছক্কা হাকান স্টোকস। শেষ পর্যন্ত ১২ বলে ২২ রান করেন ফিরেন স্টোকস।
স্টোকস ফিরলেও, জয়ের ব্যাপারে প্রবল আত্মবিশ্বাসী ছিলো ইংল্যান্ড। কারন উইকেটে ছিলেন অধিনায়ক মরগান। শেষ ১১ বলে ১৭ রান দরকার পড়ে তাদের। লুঙ্গির ১৯তম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে দু’টি ছক্কা মেরে জয়ের নাগাল পেয়ে যায় ইংল্যান্ড। ঐ ওভারে ১৬ রান তুলে ম্যাচ সমতায় আনে ইংল্যান্ড।
পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে ২১তম বলে টি-২০ ক্যারিয়ারে ১৩তম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মরগান। ইংল্যান্ডের পক্ষে দ্রুত হাফ-সেঞ্চুরিতে নিজের রেকর্ডেই ভাগ বসান মরগান। ২০১৯ সালে নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২১ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন মরগান। দ্রুত হাফ-সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ডটি ভারতের যুুবরাজ সিংএর। টি-২০ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন যুবরাজ।
২০তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে ৫ বল হাতে রেখে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন মঈন আলি। মাত্র ২২ বলে ৭টি ছক্কায় অপরাজিত ৫৭ রান করেন মরগান। তার ইনিংসে কোন বাউন্ডারি ছিলো না। ২ বলে অপরাজিত ৫ রান করেন মঈন। ম্যাচ ও সিরিজ সেরা হয়েছেন ইংল্যান্ডের মরগান।
টি-২০র আগে এবারের সফরে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে জিতেছিলো ইংল্যান্ড। তবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ হয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
দক্ষিণ আফ্রিকা : ২২২/৬, ২০ ওভার (ক্লাসেন ৬৬, বাভুমা ৪৯, কারান ২/৩৩)।
ইংল্যান্ড : ২২৬/৫, ১৯.১ ওভার (বেয়ারস্টো ৬৪, মরগান ৫৭*, লুঙ্গি ২/৫৫)।
ফল : ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ইয়োইন মরগান (ইংল্যান্ড)।
সিরিজ সেরা : ইয়োইন মরগান (ইংল্যান্ড)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয় ইংল্যান্ড।
বাসস/এএমটি/১৭৫৫/স্বব