বাসস ইউনিসেফ ফিচার-৪ : শিশুর নিউমোনিয়া চিকিৎসায় ডে-কেয়ার কার্যকর

248

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-৪
নিউমোনিয়া-ডে-কেয়ার
শিশুর নিউমোনিয়া চিকিৎসায় ডে-কেয়ার কার্যকর
ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : একটা শিশু জন্মের পর অনেক রোগেই আক্রান্ত হতে পারে। তার মধ্যে নিউমোনিয়া একটি কঠিন রোগ। তবে ঠিকমত চিকিৎসায় এ রোগ থেকে শিশুদের সুস্থ করে তোলা যায়। শিশুদের তীব্র নিউমোনিয়া হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাই উচিৎ। তবে বেশিরভাগ নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে সাধারণত তীব্র নিউমোনিয়া অপুষ্টিতে আক্রান্ত সব শিশুর চিকিৎসার জন্য যথেষ্ঠ সংখ্যক হাসপাতাল ও শয্যা থাকেনা। এছাড়া মায়েরাও সাংসারিক কাজের চাপে হাসপাতালে শিশুকে ভর্তি করে সময় দিতে পারেন না।
গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতালের পাশাপাশি দিবাযত্ন (ডে-কেয়ার) ব্যবস্থাপনায়ও নিউমোনিয়া চিকিৎসা অনেক কার্যকর ফলদায়ক। এ ব্যবস্থাপনায় খরচও অনেক কম। গবেষকদের মতে, দিবাযত্ন ব্যবস্থাপনার প্রসার ঘটাতে পারলে দেশে নিউমোনিয়ায় শিশু মৃত্যু কমবে। এ ধরনের শিশুর জন্য ‘ডে-কেয়ার মডেল’-এর মত বিকল্প ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত কার্যকর। ডে-কেয়ার ব্যবস্থাপনায় শিশুকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন কম হয় ও ব্যয় অর্ধেকে নেমে আসে। আইসিডিডিআরবির এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ব্যাসেল এবং যুক্তরাস্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেনটাকির সহযোগিতায় এক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৬-২০১৯ সাল পর্যন্ত তীব্র নিমোনিয়ায় আক্রান্ত ৩ হাজার ৪৯ শিশু নিয়ে এই গবেষণা করা হয়েছে। ইমেরিটাস সাইন্টিস্ট ও গবেষণাটির প্রিন্সিপাল ইবভেস্টিগেটর ড. নুর হক আলম বলেন, তীব্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে মায়েরা হাসপাতালে যেতে চান না। হাসপাতাল দূরে, শয্যাসংকট, পরিবারের কাজের চাপ, যাতায়াত সমস্যা, খরচ-এসব বিবেচনায় নিয়ে শিশুকে হাসপাতালে নিতে চান না। কিন্তু বাড়ির কাছে সেবা নিতে তাদের কোন দ্বিধা থাকেনা।
গবেষকরা গ্রামে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র এবং শহরে এনজিও ও ব্যক্তিগত ক্লিনিকে দিবাযতেœর ব্যবস্থা করেছিলেন। ধামরাই, করিমগঞ্জ, পাকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জ সদর এলাকায় এ গবেষণ পরিচালনা করা হয়। এসব এলাকার চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিÿণের পাশাপাশি নিউমোনিয়া চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও শয্যার ব্যবস্থা করা হয়। সেগুলো সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখা হতো। দেখা গেছে গ্রামের ৯৩ ও শহরের ৮৪ শতাংশ শিশু নিরাপদ চিকিৎসা পায়। হাসপাতালে চিকিৎসায় যে খরচ হয়, এখানের খরচ হয় তার অর্ধেক।
আইসিসিডিআরবির পুষ্টি ও ক্লিনিক্যাল সেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক অধ্যাপক তাহমিদ আহমেদ বলেন, প্রতিবছর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশ এবং বিশ্বে হাজার-হাজার শিশু মারা যায়। কমিউনিটিতে রেখে, বিকল্প ব্যবস্থা করে আইসিসিডিআরবির বিজ্ঞানীরা সাশ্রয়ী একটি পন্থা উদ্ভাবন করেছেন। এ উদ্ভাবন বাংলাদেশসহ বিশ্বেও বিভিন্ন দেশে নিউমোনিয়ায় শিশু মৃত্যু কমাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, কমিউনিটি পর্যায়ে সমন্বিত স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় আছে।
এ মডেলটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি করে অক্সিজেন থেরাপি, ফ্লুইড, পুষ্টি ব্যবস্থাপনা ও এ্যান্টিবায়োটিকের সমন্বয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থার মতই কার্যকর, নিরাপদ এবং বেশ ব্যয়সাশ্রয়ী। বাংলাদেশের বিদ্যমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দিবাযতœ ধারনা ভিত্তিক নিউমোনিয়া ব্যবস্থাপনার এ পদ্ধতি বেশ সম্ভাবনাময়।
পরিসংখ্যান মতে সারাবিশ্বে প্রতিবছর ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ১২কোটি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। যার প্রায় ১০ শতাংশের বেশি (১ দশমিক ৪ কোটি) তীব্র আকার ধারণ করে এবং হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়।
উন্নয়নশীল দেশসমুহে শ্বাসতন্ত্রের নি¤œাংশের তীব্র সংক্রমন (এএলআরআই) বিশেষ করে নিউমোনিয়া ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ, যা বছরে ৫০ লাখ মৃত্যু বা প্রতি ৫টি মৃত্যুর একটি। বাংলাদেশে ২০২৮ সালে প্রতি ঘন্টায় একটিরও বেশি শিশু নিউমোনিয়ায় মারা গেছে। অর্থাৎ এক বছরে ১২ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন ইউনভার্সিটির এ্যাডজাঙ্কড অধ্যাপক ড. হারিদা আক্তার এ সংক্রান্ত অন্যান্য ক্রিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল উপস্থাপনকালে বলেন, দেখা গেছে অপুষ্টিসহ বা ছাড়া তীব্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত প্রায় ৯০ শতাংশ শিশুর চিকিৎসা ডে কেয়ার ক্লিনিকে নিরাপদভাবে করা যায়।
অবশ্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদÿেপের কারণে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এসেছে অনেক পরিবর্তন। যে কারণে দেশে শিশু মৃত্যুর হার এখন অনেকটাই কমেছে। এক দশক আগে যেখানে গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়াটা কল্পনা করা যেত না, এখন বলতে গেলে প্রতিটি ইউনিয়নেই রয়েছে কম্যুনিটি ক্লিনিক।
ডে কেয়ার ক্লিনিকি সম্পর্কে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শায়লা হক বলেন, ‘নিউমোনিয়া থেকে রÿা পেতে দিবাযতœ পদ্ধতিটি অত্যন্ত কার্যকর একটি পদÿেপ হতে পারে। তবে তার আগে এ রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে আগে শিশুর মায়েদের সচেতন করে তোলা দরকার। কেবলমাত্র সরকারের একার পÿে এটা সম্ভব নয়, সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে।’
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/এসডিজি/১১৫৫/আহো-কেজিএ