বাসস ইউনিসেফ ফিচার-৩ : পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বেড়েছে

273

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-৩
পরিবার-পরিকল্পনা
পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বেড়েছে
ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বাসস/ইউনিসেফ) : বর্তমান সরকারের নানামুখি জনসচেতনতা মূলক পদক্ষেপের কারণে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বেড়েছে।
২০১৮ সালে পরিচালিত এক জরিপের তথ্যমতে, ১৯৭৫ সালে যেখানে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ছিলো ৭ দশমিক ৭ শতাংশের নিচে। সেই সংখ্যা ২০১৭ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ দশমিক এক শতাংশের বেশিতে।
গত ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এক অর্থবছরে পরিবার পরিকল্পনায় সাফল্য এসেছে। সেখানে দেখা গেছে, দেশের প্রায় পৌনে ৭ লাখ নারী-পুরুষ স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫ জন নারী-পুরুষ স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। বাকি ৫ লাখ ৪২ হাজার ৪৩ জন নারী ও পুরুষ দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
এবিষয়ে মহানগর ঢাকা পরিবার পরিকল্পনা স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মেডিকেল অফিসার ডা. মেহেদী হাসান সরকার এই প্রতিবেদককে জানান, বর্তমান সরকারের নানামুখি পদÿেপের কারনে নারী ও পুরুষ দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি গ্রহণ বেড়েছে। আগে নারী ও পুরুষরা যে কোন পদ্ধতি গ্রহণ করতে তাদের মধ্যে এক ধরনের লজ্জা কাজ করতো। এখন মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। যে কারণে নারী ও পুরুষরা সরকারি ক্লিনিকে গিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করছে। আগে যেখানে আমরা মানুষকে বোঝাতাম পদ্ধিতি গ্রহণ করার জন্য, তবে এখন কিন্তু মানুষ পদ্ধতি গ্রহণ করার জন্য ক্লিনিকে নিজে থেকে আসছেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য থেকে আরও জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে দেশে গড় প্রজনন হার ছিলো ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। সেই হার ২০১১ সালে নেমে এসেছে ২ দশমিক ৩ শতাংশে। বর্তমানে প্রজনন হার বা মহিলা প্রতি গড় সন্তান জন্মদানের হার ২ দশমিক ৭ শতাংশ। বর্তমানে প্রজননক্ষম সকল দম্পতি পরিবার পরিকল্পনার কোন না কোন পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।
২০১২ সালে যুক্তরাজ্যে স্বাস্থ্যবিষয়ক এক গেøাবাল সামিটে বাংলাদেশ ঘোষণা করে, চলতি বছরে (২০২০) দেশের প্রজনন হারকে দুই শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা হবে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে দেশের নারী-পুরুষকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। গতবছর থেকে বিবাহ পূর্ব কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সভা- সেমিনার, পথনাট্য, চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে।
এছাড়াও দেশের তৈরি পোশাক খাতে বড় ভূমিকা রাখছে আমাদের অদম্য নারীরা। তাদের মধ্যে সচেতনতা গড়তে পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে অধিদপ্তর। সেইসাথে ইতোমধ্যে নগরীর ব¯িÍরবাসীকে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে সচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বর্তমান সরকারের নানামুখি সচেতনতা মুলক কর্মসূচির কারনে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। একইসঙ্গে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের হার বেড়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দক্ষ সেবাদানকারীর মাধ্যমে নিরাপদ প্রসবের হার শতকরা ২৩ ভাগ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৭ ভাগ ও গর্ভ, প্রসব ও গ্রসব-পরবর্তী সেবা গ্রহণের হার শতকরা ১৯ ভাগ থেকে ৪৩ ভাগ হয়েছে। দেশে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের হার শতকরা ৬২ ভাগ হয়েছে। মাতৃমৃত্যু হার আগের তুলনায় ৫০ ভাগ কমেছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী আ খ ম মুহিউল ইসলাম বলেন, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বাড়াতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের মানুষের মধ্যেও সচেতনতাবোধ তৈরি হচ্ছে। ২০১৪ সালের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, টোটাল ফারটিলিটি রেট (টিএফআর) ২ দশমিক ৩ থাকলেও স¤প্রতি বিবিএসের তথ্যানুসারে তা ২ দশমিক ১ ভাগে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচি বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রতিবছর পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহীতা শতকরা গড়ে ১ দশমিক ৫ ভাগ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার শতকরা ৫৫ দশমিক ৮ ভাগে উন্নীত হয়েছে। প্রজনন হার বা মহিলা প্রতি গড় সন্তান জন্মদানের হার কমে বর্তমানে ২ দশমিক ৭ ভাগে নেমেছে। বর্তমানে প্রজননক্ষম সকল দম্পতি পরিবার পরিকল্পনার কোন না কোন পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ১৯৭৫ সালের ৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ২০১০ সালে ৬১ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিÿণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা শাহীনা আখতার বলেন, সা¤প্রতিক সময়ে মানুষ জন্ম নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী হচ্ছে। এর কারণ হলো আমাদের শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ যত শিক্ষিত হবে গোড়ামী তত কমে যাবে এবং সচেতনতা তত বৃদ্ধি পাবে। গ্রামের সাধারণ মানুষ আগে মনে করতো সন্তান বেশি হলে তাদের কাজে সহায্য করতে পারবে। এখন তারা বুঝতে পেরেছে একটি বা দু’টি সন্তান হলে তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি নিশ্চিত করা অনেক সহজ হয়। কাজেই সন্তান শিক্ষিত ও সুনাগরিক হলে বাবা-মাকে অনেক বেশি সহায়তা করতে পারে।
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/বিকেডি/আহো/১১৩০/-কেজিএ