বাজিস-১ : বরিশালে শিক্ষা গ্রহণ করছেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

244

বাজিস-১
বরিশাল-শিক্ষা-সহায়তা-কর্মসূচি
বরিশালে শিক্ষা গ্রহণ করছেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী
॥ শুভব্রত দত্ত ॥
বরিশাল, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : জেলায় শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করছেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। জেলায় এ প্রকল্পের সহযোগিতা নিয়ে পিতা দিলীপ সেনের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে তার তিন কন্যা। একই পরিবারের তিন কন্যা ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মানে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার সংগ্রামে সফলতার দ্বারপ্রান্তে।
পারিবারিক সূত্রে পাওয়া তথ্যনুযায়ী জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে দিলীপ সেন পটুয়াখালীর বাউফলের কাছিপাড়া গ্রাম থেকে এসে তিন কন্যা এবং স্ত্রীসহ নগরীর কাশিপুরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। দিলীপ সেন নগরীর কাশিপুর বাজারে নর-সুন্দরের (সেলুন) কাজ করেন। তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে কোন মতে জীবন যাপন করছেন তিনি। তার স্বপ্ন ছিল তিন কন্যাকে উচ্চ-শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। তার সে স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে সহায়তা করছে বর্তমান সরকারের শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি।
দিলীপ সেনের বড় মেয়ে প্রিয়াংকা সেন ২০০৮ সালে কাশিপুর হাইস্কুল এন্ড কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি এবং ২০১০ সালে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করেন। এরপর সে সরকারি ব্রজমোহন কলেজ থেকে ২০১৪ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে সম্মান এবং ২০১৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রিয়াংকা বর্তমানে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অধীনে ন্যাশনাল সার্ভিস প্রোগ্রামে কর্মরত।
মেজ মেয়ে পিংকি সেন ২০১০ সালে কাশিপুর হাইস্কুল এন্ড কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি এবং ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করেন। এইচএসসি পাসের পর ২০১৫ সালে পিংকি সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে বি.এ পাস করেন। সে বর্তমানে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। পিংকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এম.এ পাস করেন।
ছোট মেয়ে পূজা সেন ২০১৭ সালে কাশিপুর স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এসএসসি করে ২০১৯ সালে একই বিভাগে অমৃত লাল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভালো ফলাফলের আশায় প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে দিলীপ সেন বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি-এর সুবিধা পেয়ে আমি আমার তিন কন্যাকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পেরেছি। যে কারণে আমি খুব আনন্দিত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ মহৎ উদ্যোগটি মাধ্যমে বহু অস্বছল ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবেন।
এবিষয়ে আলাপকালে প্রিয়াংকার মা হাসি রানী সেন বলেন, সরকারের শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির সুবিধা পেয়ে আমার তিন মেয়েকে শিক্ষিত করতে পেরে আনন্দিত। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তার সুস^াস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করছি।
এব্যাপারে প্রিয়াংকা বলেন, বর্তমান সরকারের শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির সহযোগিতায় আমার শিক্ষা অর্জনের পথ সুগম করেছে। পাশাপাশি সামাজিক প্রতিবন্ধকতা যেমন- বাল্যবিয়ে, যৌতুক বিরোধী সচেতনতা, নারী নির্যাতন, সমাজে পিছিয়ে পড়া মেয়েদের আগ্রসর হওয়ার ব্যাপারে আমি সচেতন হয়েছি এবং অন্যদের সচেতনতার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
প্রসঙ্গক্রমে পিংকি সেন বলেন, বর্তমান সরকারের শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির সুবিধা পেয়ে আমি এমএ পাস করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করছি। আমি স্বাবলম্বী হয়ে অন্যদের স্বাবলম্বী হতে সচেতন করার চেষ্টা করছি।
পূজা সেন তার লেখাপড়ার ব্যপারে জানান, শুধু শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির উপবৃত্তিই নয়, স্কুল এবং কলেজে আমাকে কখনো বেতন দিয়ে পড়তে হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষা সহায়তা উদ্যোগটিকে আমি স্বাগত জানাই। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর এ শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির সুবিধা পেয়ে আজ আমি উচ্চ-শিক্ষার স্বপ্ন দেখছি।
এ প্রসঙ্গে কাশিপুর স্কুল এন্ড কলেজ’র অধ্যক্ষ মোঃ মামুন-অর-রশীদ বলেন, ওরা পড়াশুনার ব্যাপারে ছিল খুবই আন্তরিক। বর্তমান সরকারের শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি-এর সুবিধা পেয়ে ওরা সকলেই নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকতো।
অধ্যক্ষ মোঃ মামুন-অর-রশীদ আরো বলেন, বর্তমান সরকার কর্তৃক যে সকল গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী গৃহীত হয়েছে তার মধ্যে উপবৃত্তি প্রদান কর্মসূচী অন্যতম। শুধু অতি দরিদ্র নয়, দরিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী সকল শিক্ষার্থী সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছেন।
বাসস/সংবাদদাতা/০৯৪৫/নূসী