আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পে রেহানা-গোলসেনারাদের ভাগ্য বদল

374

রংপুর, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার পীরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের লালদিঘী ফতেহপুর গ্রামের গোলসেনার বেগমের দারিদ্রতা ঘুচে গেছে চিরদিনের মতো। নিজের ৯ শতক জমিতে টিন শেডের বাড়ি করে সেখানে গরু মোটা তাজাকরন খামার গড়ে তুলেছেন তিনি। বিগত বছরে ওই খামারে শুধুমাত্র একটি বকনা বাছুর ছিল। এ বছর সেখানে ৩টি রয়েছে। মাস কয়েক পূর্বে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প থেকে তাকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেয়া হয়।
এক সময় গোলসেনার পরিবারে অভাব ছিল। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা ছিল। কোন ব্যংক বা এনজিও কেউ তাদের বিশ্বাস করতো না। নিজস্ব জমি না থাকায় তার ভাগ্যে ঋণও জোটেনি। অথচ শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং ২ কপি ছবি নিয়েই তাকে ১০ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছিল আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প। যে ঋণের টাকায় আজ তার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। গোলসেনারা ছোট্ট একটি ঘরের পরিবর্তে টিনশেডের পৃথক বাড়ি হয়েছে। সেখানে গড়ে উঠেছে গরু মোটাতাজাকরণ খামার। ওই গ্রামের আব্দুল হাকিমের স্ত্রী গোলসেনারার মতো একই ইউনিয়নের প্রতিবেশী তারা মিয়া, চককরিম গ্রামের সুজন মিয়া, কিশোরগাড়ি গ্রামের হাছেন আলী, দুবরাজপুর গ্রামের সাইদুর রহমান, মিলনপুরের রেহানা বেগমসহ ১৮ হাজারেরও বেশি সদস্য রয়েছে পীরগঞ্জের আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পে। এদের প্রত্যেকের পরিবারে সামান্য হলেও স্বচ্ছলতা এসেছে। এরা এক সময় দরিদ্র ছিল। কোন সংস্থা বা সমিতি এদের ঋণ দেয়ারও সাহস করতো না। অথচ আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প এদের ২ কপি ছবি ও ভোটার আইডি কার্ড নিয়েই লাখ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে, এবং তা আদায়ও হচ্ছে শতভাগ। চককরিম গ্রামের সুজন জানায়, আমরা সমাজে সব চেয়ে বেশি অবহেলিত ছিলাম। আমাদের উপর কারো বিশ^াসও ছিল না। ৩ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প আমাকে ১০ হাজার টাকা ঋণ দেয়। যে টাকায় আমি লালদীঘিতে সারের দোকান করেছি। গত ৭ বছর আমার সংসারের সব খরচ চালানোর পরেও আমার দোকানে এ মুহূর্তে ৫০ হাজার টাকারও বেশি মালামাল রয়েছে। কিশোরগাড়ি গ্রামের হাছেন আলী জানায়, দীন মজুরী করে তার সংসার চলতো। কিন্তু রোজ দীনমজুরীর কাজ জোটেনা। তাই মাঝে মধ্যেই অনাহারে থাকতে হতো। এ অবস্থ্ াথেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য অনেক চেষ্টা করেও কাজ হয়নি। অবশেষে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প আমাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে এসে সদস্য করে নেয়। সেখানে সঞ্চয় জমা করে এক সময় আমাকে ৮ হাজার টাকা ঋণ দেয়া হয়। সেই টাকায় আমি কাঁচামালের ব্যবসা শুরু করি। এর আগে আমি ব্যবসার উদ্দেশ্যে অনেক চেষ্টা করেও ২ হাজার টাকা ধার বা ঋণ পাইনি। যে কারণে চেষ্টা থাকার পরেও কোন ব্যবসা শুরু করা সম্ভব হয়নি। এক সময় আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প আমার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি নিয়ে আমাকে প্রথমে ৮ হাজার টাকা ঋণ দেয়। যে টাকায় আমার সংসার চলার পরেও বর্তমানে পুঁজি ৫০ হাজারেরও বেশি। এখন আমাকে তারা ১ লাখ টাকাও দিতে রাজি আছে। কিন্তু আমি তা নেইনি। দুবরাজপুর গ্রামের সাইদুর রহমান, মিলনপুরের রমজান আলী, রেহানা, রামনাথপুরের সাগর, সেকেন্দার আলী, মেস্তার আলী, সোলায়মানসহ এ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের শত শত নি¤œবিত্তের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের কল্যাণে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দশটি বিশেষ উদ্যোগ বলয়ের মধ্যে রয়েছে-এ দেশের অসহায় মানুষের প্রত্যেকের থাকবে আমার বাড়ি আমার খামার। প্রকল্পের পীরগঞ্জ উপজেলা সমন্বয়কারী ও শাখা ব্যবস্থাপক পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক মনোয়ার হোসেন জানান-“হত দরিদ্রদের জীবিকার মানোন্নয়নে বিগত ২০০৯-২০১০ সালে পীরগঞ্জে এ প্রকল্প চালু হবার পর ১৫টি ইউনিয়নে প্রথম পর্যায়ে দরিদ্রদের চিহ্নিত করে ৮ হাজার ১’শ সদস্যকে ১৩৫টি সমিতিভুিক্তর মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এরপর প্রত্যেক সদস্যের কাছে প্রতি মাসে ২’শ টাকা হারে সঞ্চয় নিয়ে ২ বছরে সঞ্চিত ২ হাজার ৪’শ টাকার সাথে প্রকল্পের দেয়া ২ হাজার ৪’শ টাকা যোগ করে ৪ হাজার ৮’শ টাকার মূলধন দিয়ে যাত্রা শুরু করা হয় প্রত্যেকের। এরপর তাদের পছন্দের প্রকল্পের উপর ৩ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে নামমাত্র সুদে ঋণ দেয়া হয়। গৃহীত ঋণে স্ব-স্ব প্রকল্পে গত কয়েক বছরেই প্রতিটি পরিবার আতœনির্ভর হয়েছে। যাত্রা শুরুর পর গত কয়েক বছরে ১৩৫টি সমিতির পর আরও ২’শ ৭০টি সমিতিতে এখন সদস্য সংখ্যা ১৮ হাজার ’শ তে দাঁড়িয়েছে। এসব সদস্য নিয়ন্ত্রণে গোটা উপজেলায় ২৮ জন মাঠ কর্মি রয়েছে। তারা মাসিক কিস্তিতে প্রদত্ত ঋণের টাকা আদায় করেন। মাঠকর্মি স্বপন জানায়, নি¤œবিত্তদের নিয়ে আমাদের কারবার হলেও কোন সদস্য কিস্তির খেলাপ করে না। আমাদের ঋণের শতভাগ আদায় হয়। আসলে গরীবরা ঋণের টাকা আতœসাত করে না। যারা কোটি কোটি, টাকা ঋণ নেয় তারাই এ কাজ করে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, যারা এক সময় প্রত্যেকে দরিদ্র ছিল। ঋণের টাকা দেয়ার আগে মাত্র ৩ দিনের প্রশিক্ষণ এদের প্রত্যেকের স্বভাব পাল্টে দেয়। যে কারণে কোন দরিদ্র তাদের ঋণ খেলাপ করে না। বরং উল্টো বছরের পর বছর ঋণের পরিমান বাড়িয়ে নিয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে নিচ্ছে। এজন্য বর্তমানে দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া প্রতিটি পরিবারেই স্বচ্ছলতা এসেছে। এ কর্মসূচি চলমান থাকলে আগামী কয়েক বছরেই গোটা উপজেলায় একটা সিংহভাগ পরিবারে স্বচ্ছলতা আসবে একথা নিশ্চিত বলা চলে।