সেন্টমার্টিনে ট্রলার ডুবিতে নিহত ১৫

464

কক্সবাজার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : বঙ্গোপসাগরে সেন্টমার্টিন উপকূলের অদূরে ট্রলার ডুবিতে নারী শিশু সহ ১৫ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে এই পর্যন্ত ৭২ জনকে জীবিত ।
আজ সকালে ট্রলার ডুবির এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে নৌ বাহিনী এবং কোস্ট গার্ড উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
কোস্টগার্ড সেন্টমার্টিন স্টেশনের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার নাঈম-উল হক বাসস’কে জানান, মঙ্গলবার ভোরে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ সাগরে ট্রলার ডুবির এই ঘটনা ঘটেছে। খবর পাওয়ার পর কোস্টগার্ড দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। কোস্টগার্ডের পাশাপাশি নৌ-বাহিনীর একটি জাহাজও উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়। বিকেল পর্যন্ত ৭২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ শিশু এবং ৪৬ জন নারী রয়েছে।
তিনি জানান, এই পর্যন্ত ১৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩ শিশু এবং ১২ জন নারী। ট্রলার ডুবির এই ঘটনায় আরো অনেকে নিখোঁজ রয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদের উদ্ধারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, রাতের কোন এক সময়ে ট্রলারটি রোহিঙ্গাদের নিয়ে টেকনাফ উপকূল থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য রওয়ানা হয়। সাগরে ডুবো চরে কোরাল পাথরের সাথে ধাক্কা লেগে ট্রলারটি সাগরে ডুবে যায়।
তিনি জানান, যারা উদ্ধার হয়েছেন তাদের সবাই রোহিঙ্গা। উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প দালাল চক্রের মাধ্যমে এই রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ট্রলারে উঠেছিল। দুর্ঘনা¯’ল থেকে জীবিত উদ্ধারকৃতদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং দালাল চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হবে বলেও তিনি জানান।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম (৩০) তার তিন সন্তানকে নিয়ে ট্রলারে উঠেছিল। ট্রলার ডুবিতে আনোয়ারা এবং তার ১০ বছরের শিশু সন্তান মো. শহীদ বেঁেচ গেলেও বাঁচানো যায়নি অন্য দুই সন্তান নছিমা বেগম (৮) ও শাহাদত হোসেনকে (৬)। সাগর থেকে উদ্ধার ১৫ লাশের মধ্যে এই ২ শিশুর মরদেহও রয়েছে।
আনোয়ারা জানান, ৩ সন্তানকে নিয়ে তিনি সোমবার রাত ৮টার দিকে ট্রলারে উঠেছিলেন। স্বামী দিল মোহাম্মদ মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। বিপদ সংঙ্কুল নৌপথে স্বামীর কাছেই যা”িছল এই রোহিঙ্গা নারী। টেকনাফের নোয়াখালী পাড়া উপকূল থেকে ট্রলারে তুলে দিয়েছে দালাল চক্রের সদস্য সাইফ। দালালের দাবিকৃত অর্থ স্বামী মালয়েশিয়া থেকেই পরিশোধ করেছে।
আনোয়ারার সাথে জীবিত উদ্ধার হয়েছে উখিয়ার থাইংখালী রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা ১৭ বছরের কিশোর আবদুল্লাহ। চাচার সাথে ট্রলারে উঠেছিল এই তরুন। রোহিঙ্গা কিশোর আবদুল্লাহ জানান, টেকনাফের নোয়াখালী পাড়া ঘাট দিয়ে তাদেরকে ট্রলারে তোলা হয়েছে। দালাল চক্রের লোকজন তাদেরকে উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে এনে নোয়াখালী পাড়া ঘাটের নিকটে পাহাড়ে ছোট একটি বাড়িতে রাখে। সেখান থেকে সোমবার রাতের বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে ট্রলারে তোলা হয়।
আবদুল্লাহ জানান, ট্রলারে ১৩৮ জন রোহিঙ্গা যাত্রী ছিল। এদের মধ্যে নারী শিশুর সংখ্যাই বেশি। গভীর রাতে ট্রলারটি যাত্রা শুরু করে। মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে গিয়ে সাগরের ডুবো চরে পাথরের সাথে ট্রলারটির ধাক্কা লাগে। এতে ট্রলারের তলা ফেটে যায়। এক পর্যায়ে পানিতে তলিয়ে যেতে থাকে ট্রলারটি।
আবদুল্লাহ জানায়, এক যাত্রী তার মোবাইলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করে। কিন্তু উদ্ধারকারি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই যাত্রীদের নিয়ে ট্রলারটি সাগরে ডুবে যায়। রোহিঙ্গা কিশোর আবদুল্লাহসহ ট্রলারের ৭২ জন যাত্রীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে কোস্টগার্ড ও নৌ বাহিনী।
কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশনের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সোহেল রানা জানিয়েছেন, ট্রলার দুর্ঘটনায় উদ্ধাকৃতদের সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ নিয়ে আসা হয়েছে। তাদেরকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এছাড়া নিহতদের মরদেহও পুলিশের মাধ্যমে তাদের স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিন্স দ্বীপের উপকূলে নৌকাডুবির ঘটনায় কবলিতদের সাহায্যে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
আইওএম, ইউএনএইচসিআর এবং জাতিসংঘের সকল সংস্থা ও অন্যান্য এনজিও এই ঘটনায় গভীর দৃঃখ প্রকাশ করেছে।
আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, কক্সবাজারে অনিয়মিত ও অনিরাপদ নৌযাত্রা নতুন কোন ঘটনা নয়; রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বাংলাদেশী জনগণ উভয়েই বিভিন্ন পরিস্থিতির শিকার হয়ে এই ঝুঁকি নিয়ে থাকে। সাগরপথের অনিরাপদ ভ্রমণের কথা বিবেচনা করে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার উভয় জনগোষ্ঠীর সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে আসছে।