বাজিস-৪ : লক্ষ্মীপুরে সুপারি গাছের খোলে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন

130

বাজিস-৪
লক্ষীপুর-সুপারি গাছ
লক্ষ্মীপুরে সুপারি গাছের খোলে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন
লক্ষ্মীপুর, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : জেলার রায়পুরে সুপারি গাছের খোল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে গৃহস্থালির বিভিন্ন সামগ্রী। এসব সামগ্রী পরিবেশ বান্ধব ও খুবই আকর্ষণীয়। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ প্লাস্টিকের ‘ওয়ান টাইম’ বিভিন্ন পণ্যের পরিবর্তে এর ব্যবহার প্রতিনিয়তই বাড়ছে। সুপারি গাছের খোলে নান্দনিক সামগ্রী তৈরি করায় আয়ের এক নতুন উৎস ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সুপারি গাছ থেকে ঝরে যাওয়া খোল দিয়ে তৈরি সামগ্রী গুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বাসনকোসন, থালা-বাটি ও নাস্তার ট্রে অন্যতম। এগুলো টেকসই না হলেও শুকনো খাবার পরিবেশনে একাধিকবার ব্যবহার করা যায়। এতে কোনো প্রকার ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার নেই। এছাড়াও সুপারির খোল দিয়ে ঘড়ি, ফটোফ্রেম, ওয়ালমেট ও জুতাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে সুপারির খোলে পণ্য তৈরির উদ্যোক্তা মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ। তিনি রায়পুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডস্থ কেরোয়া গ্রামের ব্যিবসায়ী আবদুল জলিল মিয়ার ছেলে ও একজন চাকুরিজীবি। ২০১৫ সালে ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখার মাধ্যমে সুপারি গাছের খোল দিয়ে বাসনকোসন তৈরির বিষয়টি মামুন জানতে পারেন। ২০১৯ সালের শুরুতে তিনি রায়পুর পৌর শহরের তুলাতলি এলাকায় দ্বোচালা একটি টিনসেড ঘরে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বসিয়ে সুপারি গাছের খোল দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য তৈরির কাজ শুরু করেন। এতে ব্যাপক সাড়া পড়ে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব পণ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী পণ্যগুলো বিদেশেও রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রচুর পরিমাণে সুপারির চাষ হয়। যেকারণে সুপারি গাছের পাতা ও খোল সহজলভ্য এবং খুবই সাধারণ কিছু। বাগানে গাছ থেকে ঝরে পড়া পাতা-খোল কুড়িয়ে নিয়ে জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু সুপারি গাছের খোল দিয়ে এতো সুন্দর সামগ্রী তৈরি করা যায়, এটা ছিল কল্পনাতীত। এমন বাস্তবতা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়দের অনেকে।
এদিকে আকর্ষণীয় পণ্য-সামগ্রী তৈরি হওয়ায় স্থানীয়ভাবে সুপারি গাছের খোলের কদর বেড়েছে। অতীতে এটি সংরক্ষণ করা না হলেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
উদ্যোক্তা মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ বলেন, সুপারি গাছের খোল দিয়ে তৈরি পণ্য-সামগ্রী স্বাস্থ্যসম্মত, পরিবেশ বান্ধব ও আকর্ষণীয়। দেশে-বিদেশে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে মানুষ এ পণ্য ব্যবহার শুরু করেছে। বর্তমানে অনলাইন মার্কেটিং ও চাহিদা অনুযায়ী পরিচিতদের কাছে মার্কেটিং করছি। আগামীতে এসব পণ্য নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরের মার্কেটে কাজ করতে চাই। এ পণ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আশাবাদী।
তিনি আরও বলেন, চাইলে যে কেউ নিজের বাড়িতেই সুপারি গাছের খোল দিয়ে পণ্য তৈরির কারখানা স্থাপন করতে পারেন। সামর্থ অনুযায়ী বিনিয়োগ করে পারিবারিকভাবেও এ কাজটি করা সম্ভব। চাইলে আগ্রহীদের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন এ উদ্যোক্তা।
মামুনের কারখানায় বর্তমানে বাসনকোসনসহ ৯ ধরনের সামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। এতে ১২জন শ্রমিক কাজ করছেন। এটাই লক্ষ্মীপুরের প্রথম কারখানা। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে কারখানা স্থাপন ও নতুন পণ্য তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) লক্ষ্মীপুর জেলা কার্যালয়ের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহরিয়ার খান বলেন, সাধারণ কিছু দিয়ে অসাধারণ কিছু করে দেখিয়েছেন মামুন। সুপারি গাছের খোল দিয়ে তৈরি পণ্য-সামগ্রীর ভবিষ্যৎ দারুণ সম্ভাবনাময়। এ শিল্প সম্প্রসারণে বিসিকের পরিকল্পনা রয়েছে।
বাসস/সংবাদদাতা/১৪৫৫/নূসী